ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি টিকিয়ে রাখতে দুই পরাশক্তির পরামর্শের আহ্বান জাতিসংঘ দূতের

বিপন্ন রুশ-মার্কিন সহযোগিতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

বিপন্ন রুশ-মার্কিন সহযোগিতা

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সিরিয়ায় এক আংশিক অস্ত্রবিরতি ঘটাতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হওয়ার মাত্র মাস দুয়েক পর তাদের মধ্যকার সহযোগিতা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। তারা ওই দেশটির গৃহযুদ্ধের এক দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করতেও সম্মত হয়েছিল। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। রাশিয়া সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন সমর্থিত বিরোধী বাহিনীর মধ্যে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি এড়িয়ে গিয়ে আঞ্চলিক মিত্রদের ‘তুষ্ট’ করার দায়ে প্রশাসনকে চলতি সপ্তাহে অভিযুক্ত করে। সিরিয়ায় কোন মার্কিন স্থল সৈন্য মোতায়েন করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধ পৃথক লড়াইয়ে বিশেষ অভিযান বাহিনীর আরও ২৫০ জন সদস্য পাঠানোর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র শ্লেষাত্মক সুরে তাদের খালি পায়ে মোতায়েন করা হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন করেন। অসৎ বিশ্বাসে কাজ করার দায়ে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়া হবে কি না, সেই বিষয়ে ওবামা প্রশাসনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভেদাভেদ দেখা যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা দফতর ও গোয়েন্দা বিভাগের কোন কোন কর্মকর্তা মনে করেন যে, রাশিয়া ও এর সমর্থনপুষ্ট সিরীয় সরকার স্পষ্টত অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং বিরোধীদেরও তাই করতে উস্কানি দিচ্ছে। তারা যুক্তি দেখান যে, গৃহযুদ্ধের মীমাংসা না করে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যাবে না বলে হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে উল্লেখ করলে ও আসাদ বিরোধীদের প্রতি প্রশাসনের সমর্থন তেমন অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। প্রশাসনের অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি অস্পষ্ট রয়ে গেছে এবং যুদ্ধ অবসানের কোন স্পষ্ট পথ দেখা যাচ্ছে না। তাদের যুক্তি হলো, এ পর্যায়ে মস্কোকে প্রকাশ্যে লজ্জা দেয়া থেকে তেমন কিছু লাভ হবে না। এদিকে, খোদ অস্ত্রবিরতিই ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। এপ্রিলে সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এতে গত সপ্তাহে বিরোধী পক্ষ জেনেভায় জাতিসংঘ পরিচালিত রাজনৈতিক আলোচনায় অংশগ্রহণ স্থগিত রাখে। গুরুত্বপূর্ণ আলেপ্পো শহরের বিদ্রোহী অধিকৃত এলাকাগুলোতে রুশ সমর্থিত সিরীয় সরকারের গোলা ও বোমা বর্ষণে গত চারদিনে নারী-শিশুসহ অন্তত ৯০ ব্যক্তি নিহত হয়। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ কথা জানায়। বুধবার রাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিফিংয়ের পর জাতিসংঘ দূত স্তাফান দে মিসতুরা সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্রবিরতি এখনও টিকে আছে, কিন্তু কোন্ক্রমে। এটি যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে এমন ধারণা করা হচ্ছে। তিনি মার্কিন ও রুশ সরকারের ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ ‘জরুরী’ সলাপরামর্শ এবং ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপের এক বৈঠক অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান। এ বৈঠকে ওয়াশিংটন ও মস্কো যৌথভাবে সভাপতিত্ব করে থাকে। তিনি বলেন, কেবল গত ৪৮ ঘণ্টাতেই প্রতি ২৫ মিনিটে এক জন সিরীয়ের মৃত্যু ঘটে। কয়েক ঘণ্টা আগে পূর্ব আলেপ্পোতে এক হাসপাতালে এক বিমান হামলায় শহরের শেষ শিশু রোগ চিকিৎসক নিহত হন। প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্প্রতি লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অগ্রগতিই সিরীয় সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। আমরা সেই উপায়কে কাজে লাগাতে যাচ্ছি। যদি অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়ে তবে আমরা তা আবার কার্যকর করার চেষ্টা করব, যদিও আমরা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। আর রাশিয়াও শেষ পর্যন্ত এটা মেনে নেবে বলে আমার বিশ্বাস। শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি স্বীকার করেন যে, রণক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনীকে পৃথক করা যেমন মনে হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন প্রমাণিত হয়েছে। প্রশাসন রুশদের এক অবাধ সুযোগ দিচ্ছে এ অভিমতের প্রতি কেরি বিরক্তির সঙ্গে জবাব দেন। তিনি বলেন, আমরা সেখানে বসে থাকতে এবং পুতিনকে সিরীয় শাসকগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন দেয়া এবং বিরোধীদের ওপর আঘাত আনার সুযোগ দিতে যাচ্ছিনে। স্পষ্টতই আমরা এ বিষয়ে নির্বোধ নই।
×