দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতারা ভারত ও চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশায় রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এক সংযুক্ত অর্থনৈতিক কমিউনিটি গঠন করেছেন। এর লক্ষ্য হবে ৬২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের ঐ অঞ্চলে আরও অবাধ বাণিজ্য ও পুঁজিপ্রবাহের সুযোগ সৃষ্টি করা। নানা বৈশিষ্ট্যের সরকার নিয়ে অঞ্চলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আমেরিকা থেকে অনেক বড়। খবর ইয়াহুনিউজের।
দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশসমূহের সমিতির (আসিয়ান) ১০ নেতা কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে এক ঘোষণাপত্র সই করে আসিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি (এইসি) গঠন করেন। এটি ছিল গ্রুপটির চলতি বছরের শীর্ষ সম্মেলন। এইসি ৩১ ডিসেম্বর আইনগত সত্তায় পরিণত হওয়ার পর পূর্ণ মাত্রায় কার্যকর হবে।
এইসি এরই মধ্যে এক বাস্তবতা লাভ করেছে। শুল্ক বাধা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা দূর করার মতো এর অনেক মূলনীতি ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে প্রয়োগ করা হয়েছে। আসিয়ান কমিউনিটির রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সাংস্কৃতিক দিকও রয়েছে। তবে অঞ্চলটিতে বিভিন্ন ধরনের শাসন ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যেমন-ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট, মিয়ানমারে আধা সামরিক, ব্রুনেইতে রাজতান্ত্রিক ও ফিলিপিন্সে গণতান্ত্রিক শাসন বলবৎ রয়েছে।
অর্থনৈতিক কমিউনিটিই অঞ্চলটি একীভূত হওয়ার সবচেয়ে বাস্তব সুযোগ প্রদান করে। এর মিলিত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) একে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করবে। স্বাগতিক দেশ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক বলেন, আমরা কার্যত আমাদের মধ্যকার শুল্কগত বাধাগুলো দূর করেছি। এখন আমাদের আরও অবাধ চলাচল এবং প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের পথে বিদ্যমান বাধা দূরকীরণ নিশ্চিত করতে হবে।
দেশগুলোর লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক কৌশলের সমন্বয় সাধন, একের অপরের পেশাগত যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেয়া এবং অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি সম্পর্কে আরও ঘনিষ্ঠভাবে শলাপরামর্শ করা। তারা তাদের পরিবহন কাঠামো ও চলাচল পথের সংযুক্তি বাড়াতে, ইলেক্ট্রোনিক লেনদেনের সুবিধা উন্নততর করতে, শিল্পিগুলো সংযুক্ত করতে এবং অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতেও একমত হয়। আট শ্রেণীর পেশাজীবীরা অঞ্চলজুড়ে আরও সহজে কাজ করতে সক্ষম হবেন। তারা প্রকৌশলী, স্থপতি, নার্স, চিকিৎসক, দ- চিকিৎসক, হিসাবরক্ষক, সার্ভেয়ার ও পর্যটন কর্মী। মার্কেট শেয়ার ও বিনিয়োগের জন্য চীন ও ভারতের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে ২০০২ সালে এইসির ধারণা করা হয়। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার আগামী পাঁচ বছর মন্থর হয়ে বার্ষিক গড়ে শতকরা ৬ ভাগে দাঁড়াবে বলে মনে করা হয়। একই সময়ে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৭ দশমিক ৩ ভাগে উন্নীত হবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। অর্গেনাইজেশন অব ইকোনমিক কো অপারেশন এ্যাড ডেভেলপমেন্ট এ কথা জানায়।
এইসি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর আসিয়ান নেতারা সম্মেলনে আগত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্য আটটি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব দেশ হলো- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আরও শক্তি প্রদর্শনের বিষয়ে শীর্ষ সম্মেলনে উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। শনিবার আসিয়ান নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ওবামা বলেন, বিভিন্ন দেশের উচিত বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ বন্ধ করা এবং তাদের দাবির সমর্থনে সামরিক শক্তি দেখানো বন্ধ করা উচিত। চীন স্প্র্যাটনি দ্বীপপুঞ্জে শৈলশ্রেণীকে কৃত্রিম দ্বীপে পরিণত করছে এবং এদের ওপর বিমানবন্দর ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এটি চীনের অভিপ্রায় এবং দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে পূর্ব এশিয়ার অনেকাংশে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। এ জলপথ দিয়ে বছরে জাহাজযোগে ৫ ট্রিলিয়ন মূল্যের পণ্যের বাণিজ্য চলে।