ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ জাহেদ পারভেজ

মিলনে পুরুষের অক্ষমতা ॥ কেন দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০০:১১, ১৭ মে ২০২২

মিলনে পুরুষের অক্ষমতা ॥ কেন দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন

দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পর প্রাত্যহিক স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরেছে মানুষ। খাবার-দাবার ও আন্তরিক সময়েও এসেছে ছন্দপতন। তবে পুরুষত্বহীনতা অর্থাৎ পুরুষের শারীরিক অক্ষমতা বা দুর্বলতা আজকাল প্রকট আকারই ধারণ করছে। একদম তরুণ থেকে শুরু করে যে কোন বয়সী পুরুষের মাঝে দেখা যাচ্ছে এমন যৌন সমস্যা। অনেক পুরুষ অকালেই হারিয়ে ফেলছেন নিজের সক্ষমতা, উঠতি বয়সের যুকরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকে বিয়ে করতেও ভয় পাচ্ছেন, অন্য দিকে বাড়ছে দাম্পত্যে অশান্তি, সন্তানহীনতার হার এবং সত্যি বলতে কি বাড়ছে ডিভোর্সও। অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে, যাচ্ছেও। পাশাপাশি পরকিয়ায় আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে। সমাধানের চেষ্টা: কিন্তু কারণ কি পুরুষদের এই ক্রমশ শারীরিকভাবে সক্ষম বা দুর্বল হয়ে যাওয়ার পেছনে? কারণ লুকিয়ে আছে আমাদের বর্তমানের আধুনিক জীবনযাত্রার মাঝেই। হ্যাঁ, আপনার প্রতিদিনের স্ট্রেসভরা অস্বাস্থ্যকর জীবন, আপনার নিজের কোন একটা ভুলই হয়ত আপনাকে ক্রমশ ঠেলে দিচ্ছে পুরুষত্বহীনতার দিকে। কেন এমন হচ্ছে সেটা জানার আগে জানতে হবে পুরুষের একান্ত দুর্বলতাগুলো কী কী বা কেমন হতে পারে। কারণ সমূহ: শারীরিক অক্ষমতা বা দুর্বলতার বিষয়টিকে মোটামুটি ৩ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে- ১) ইরেকশন ফেইলিউর : পুরুষ লিঙ্গের উত্থানে ব্যর্থতা। ২) পেনিট্রেশন ফেইলিউর : লিঙ্গের যোনিদ্বার ছেদনে ব্যর্থতা, বা যোনিতে প্রবেশের মতো পর্যাপ্ত উত্থিত না হওয়া ৩) প্রি-ম্যাচুর ইজাকুলেশন : সহবাসে দ্রুত বীর্যস্খলন, তথা স্থায়িত্বের অভাব। থাকতে পারে অনেক কারণ প্রাকৃতিক বা শারীরিক কারণগুলোর মাঝে মুখ্য হলো- ডায়াবেটিস, লিঙ্গে জন্মগত কোন ত্রুটি, সেক্স হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, গনোরিয়া বা সিফিলিসের মতো যৌনরোগ ইত্যাদি। প্রাকৃতিক শারীরিক সমস্যা ছাড়াও প্রচ- কাজের চাপ, মানসিক অশান্তি, দূষিত পরিবেশ, ভেজাল খাওয়া-দাওয়া, কম বিশ্রাম ও ব্যায়াম ছাড়া অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ইত্যাদি। অনেক কারণই আছে ক্রমশ যৌন সক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পেছনে। আবার অতিরিক্ত যৌন সম্পর্কে যাওয়া, অতিরিক্ত মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুন করা, যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হাবিজাবি ওষুধ সেবন ইত্যাদি কারণকে অবহেলা করলেও চলবে না। এছাড়া বয়সজনিত অসুস্থতা, সঙ্গিনীর সাথে বয়সের পার্থক্য বা সঙ্গিনীকে পছন্দ না করা, এইডসভীতি, পর্যাপ্ত যৌন জ্ঞানের অভাব, ত্রুটিপূর্ণ যৌনাসনও অক্ষমতা বা দুর্বলতার জন্য দায়ী হতে পারে। কী করবেন? -প্রথমেই যা করবেন, সেটা হলো একজন ভাল চর্ম, যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। লজ্জা না করে নিজের সমস্ত সমস্যা খুলে বলুন ও ডাক্তারের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় সকল চিকিৎসা নিন। আগের সব ইতিহাস খুলে বলুন। কি কি ওষুধ নিজে নিজে খেয়েছেন তাও বলুন। এতে লজ্জার কিছুই নেই। একটাই জীবন তাকে উপভোগ করতে শিখুন। লজ্জার চাইতে নিজেকে সুস্থ ও সক্ষম রাখা জরুরী। নতুবা এ অর্থবৈভব ও সৌন্দর্যে কী দাম আছে জীবনে? আজ থেকে সতর্কতা রাখতে: -আপনার ডায়াবেটিস থাকলে প্রয়োজনীয় সকল নিয়ম কানুন মেনে চলুন। -নিজের জীবনধারাকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনে বদলে ফেলুন। বদঅভ্যাসে পরিণত থাকলে তা আর না করার চেষ্টা করুন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খান, ব্যায়াম করুন, রাতে পর্যাপ্ত ঘুমান, চেষ্টা করেন কাজের চাপের মাঝেও বিশ্রাম নিতে। আপনার শরীর যখন সুস্থ ও সক্ষম থাকবে, যৌনজীবনও থাকবে সুন্দর। -সঙ্গীর সাথে রোমান্টিক জীবনের উন্নতি করুন। পর্নোগ্রাফি নিয়ে চিন্তা বাদ দিন, মনে রাখবেন এসব বাস্তবে নেই। স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ তৈরি করুন, তাকে মনের মতো করে সাজিয়ে নিন, একঘেয়ে যৌন জীবনে নানান রকমের চমক ও আনন্দ নিয়ে আসুন। তাকেও বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন যে নতুন চমক এলে আপনার মানসিকভাবে সাহায্য হবে। রোমান্টিক বেডরুম, পরিবর্তন করে শোয়া, আকর্ষণীয় অন্তর্বাস, সেক্স টয় ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। -যদি সঙ্গীকে অপছন্দ করার কারণে সমস্যা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন সঙ্গীকে ভালবাসতে। তার সাথে দূরে কোথাও নিরিবিলি বেড়াতে যান, সময় দিন, তাকে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করুন। আস্তে আস্তে তার প্রেমে পড়ার চেষ্টা করুন। মানসিকভাবে প্রেমে পরলে শরীরটাও সাড়া দেবে। একটা জিনিস মনে রাখবেন, বাস্তবের নারীর সাথে সিনেমার নায়িকা বা পর্নো স্টারদের মিল খুঁজতে যাবেন না। কারণ, এটি সম্ভব নয়, নিজের দিকে তাকান, নিজের সাধারণত্ব দেখুন। দেখবেন সঙ্গীকেও আর তখন খারাপ লাগছে না। কী করবেন না? -অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করার অভ্যাস অবিলম্বে ত্যাগ করুন। মাঝে মাঝে মাস্টারবেশন অবিবাহিত পুরুষদের জন্যও খারাপ! আর যাদের স্ত্রী আছে তারা স্ত্রীর সাথেই যৌনজীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। -যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হাতুড়ে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হবেন না বা কোন নিজে নিজে ওষুধ, টোটকা ব্যবহার করবেন না। কোন তেল বা ওষুধ কিছুই ব্যবহার করবেন না হাতুড়েদের কথায় প্রভাবিত হয়ে। -বাজারে সাময়িকভাবে যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু ওষুধ পাওয়া যায়, যেগুলো সেবনে ২৪ ঘণ্টার জন্য যৌন ক্ষমতা সাময়িক বাড়লেও এই ধরনের ওষুধ মোটেও ব্যবহার করবেন না। এতে সাময়িক ক্ষমতা বাড়লেও ক্রমশ আসলে ক্ষমতা কমতেই থাকবে। তাই অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিবার নিয়ে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখী থাকুন। লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ত্বক, চর্ম যৌন ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগ) শহীদ সরোওয়াার্দী হাসপাতাল। চেম্বার:ডাঃ জাহেদ’স এন্ড স্কিনিক, হাসপাতাল। ১৫২/১/এইচ, (৬ তলা) গ্রীনরোড,পান্থপথ মোড়, ঢাকা। ০১৫৬৭-৮৪-৫৪-১৯, ০১৭০৭-০১-১২-০০
×