ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

কোটি টাকার স্টেশনে থামে না ট্রেন, হয় শুধু টিকটক!

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

কোটি টাকার স্টেশনে থামে না ট্রেন, হয় শুধু টিকটক!

ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ময়নামতি, লালমাই উপজেলার লালমাই এবং আলীশহর এলাকার তিনটি রেলস্টেশন বর্তমানে অবস্থা সংকটাপন্ন। আধুনিক নকশায় নির্মিত এসব স্টেশনগুলোতে রয়েছে বিশাল প্ল্যাটফর্ম, যাত্রীদের বসার বেঞ্চ, অপেক্ষাগার, নারী-পুরুষের পৃথক শৌচাগার, স্টেশন ম্যানেজারের অফিস, টিকিট বিক্রির কক্ষ, সার্ভার কক্ষ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন এবং পানির ট্যাংকসহ সব প্রয়োজনীয় সুবিধা। এসব স্টেশনে যাত্রীদের সেবার জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা থাকলেও মূল সমস্যা হচ্ছে, ট্রেন থামে না এবং কার্যত যাত্রী সেবা প্রদান করা হয় না।

এছাড়া, স্টেশনগুলোতে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও, বৃহৎ প্ল্যাটফর্মে কৃষকরা ধান মাড়াই ও শুকানো এবং ছেলেমেয়েরা টিকটক ভিডিও তৈরি করছে। স্টেশনগুলোর দেখভালের অভাবে যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে এবং চুরি হয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছে, নতুন স্টেশন নির্মাণে মন্ত্রী ও এমপিদের অনাবশ্যক হস্তক্ষেপ, পরিকল্পনার ত্রুটি এবং জনবল সংকটই এর প্রধান কারণ।

২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির জন্য অনুমোদিত বাজেট ছিল ৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালে শুরু হলেও নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে, কিন্তু পরে সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ২০ জুলাই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়নামতি রেলস্টেশন পরিদর্শনকালে কোনো রেলওয়ে কর্মকর্তা বা কর্মচারী পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা ছিল লালমাই রেলস্টেশনেরও। স্টেশন মাস্টার কাজী আবদুল মান্নান জানান, তিনি ২০২১ সালের শেষে নতুন ভবনে এসেছেন এবং বর্তমানে এখানে তিনজন কর্মরত আছেন। তবে এখানে লোকাল ট্রেন নাসিরাবাদে যাত্রাবিরতি দেয়, কিন্তু জনবল সংকটের কারণে টিকিট বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, আলীশহর রেলস্টেশন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, স্টেশনের অফিসের দরজা-জানালা বন্ধ, এবং রেলওয়ের কোনো কর্মচারী নেই। প্ল্যাটফর্মে কৃষকরা তাদের ধান শুকাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজন জানান, বিশাল এই স্টেশনটির কোনো ব্যবহার নেই, তবে ট্রেন না থামলেও এটি এলাকার মানুষ, বিশেষত স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানকার ছেলেমেয়েরা এসে মোবাইলে টিকটক ভিডিও করে সময় কাটায়।

এ অবস্থায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই স্টেশনগুলোর কার্যক্রম চালু করা এবং স্থানীয় জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করা।

নুসরাত

×