
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বমানের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা ও পেশাগত সুযোগের খোঁজে আজকের শিক্ষার্থীরা দেশ ছাড়ছেন আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে। ২০২৫ সালে বেশ কিছু দেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের স্বাগত জানানো নীতিমালা, দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া এবং সহায়ক একাডেমিক পরিবেশের কারণে বিশেষভাবে নজর কেড়েছে।
১. কানাডা
২০২৩ সালে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৭৬০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানিয়ে কানাডা এখনও বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এর স্টুডেন্ট ডিরেক্ট স্ট্রিম (SDS) প্রোগ্রামের আওতায় যোগ্য আবেদনকারীরা মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই ভিসা অনুমোদন পেয়ে থাকেন। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক সহায়তা প্রদান করে।
-
টিউশন ফি: বছরে গড়ে ২০,০০০–৩০,০০০ কানাডিয়ান ডলার
-
পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট (PGWP): নির্দিষ্ট কোর্সের জন্য ৪ বছর পর্যন্ত
-
বিশেষ সুবিধা: “কালচারাল মেন্টরশিপ” প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার্থীদের স্থানীয় পরিবারের সাথে যুক্ত করা হয়, যাতে তারা সংস্কৃতিগতভাবে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ আরও অনেক দেশ
-
নতুন অগ্রগতি: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবাসন নিশ্চিত করতে বাধ্য করা হয়েছে, ভর্তির চিঠি দেওয়ার আগেই
২. জার্মানি
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ ও সহজ ভিসা প্রক্রিয়া জার্মানিকে ৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
-
টিউশন ফি: কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টারপ্রতি ১,৫০০–৩,০০০ ইউরো
-
ভাষা: ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিষয়ক অনেক কোর্স ইংরেজিতে
-
বিশেষ সুবিধা: “ইন্টিগ্রেশন অ্যাম্বাসেডর” কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সহপাঠীদের মাধ্যমে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, সিরিয়া, তুরস্কসহ এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ
-
নতুন অগ্রগতি: পড়াশোনার সময় সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ
৩. অস্ট্রেলিয়া
২০২৫ সালে ৬ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম শীর্ষ গন্তব্য। সাবক্লাস ৫০০ ভিসা সহজ ও স্বচ্ছ এবং পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক পারমিট ২–৬ বছর পর্যন্ত।
-
টিউশন ফি: বছরে ২০,০০০–৪৫,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার
-
বিশেষ সুবিধা: "রিজিওনাল স্টাডি ইনসেনটিভ" প্রোগ্রামের আওতায় তাসমানিয়ার মতো অঞ্চলে পড়লে ৫,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত অনুদান
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, নেপাল, বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ
-
নতুন অগ্রগতি: ভারত ও পাকিস্তানের ভিসা অনুমোদনের হার ২০২৪ সালে বেড়ে ৬৫% হয়েছে
৪. যুক্তরাজ্য
প্রায় ৬ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিয়ে যুক্তরাজ্যও একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। স্টুডেন্ট রুট ভিসা সাধারণত ৩–৫ সপ্তাহে প্রক্রিয়াকৃত হয়।
-
টিউশন ফি: বছরে ১৫,০০০–৩০,০০০ পাউন্ড
-
পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা: গ্র্যাজুয়েট রুট - ২ বছর পর্যন্ত
-
বিশেষ সুবিধা: “গ্লোবাল ট্যালেন্ট মেন্টরশিপ” প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদেরকে এআই ও ফাইনান্স খাতের নেতৃস্থানীয়দের সাথে যুক্ত করা হয়
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, চীন, বাংলাদেশ প্রভৃতি
-
নতুন অগ্রগতি: গ্র্যাজুয়েট রুট কমিয়ে ১৮ মাস করা হয়েছে, যার ফলে ভারত ও নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থীরা কিছুটা প্রভাবিত হতে পারেন
৫. নেদারল্যান্ডস
২০২৩ সালে ১ লাখ ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর আবাসভূমি হওয়া নেদারল্যান্ডস ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা এবং এক বছরের "অরিয়েন্টেশন ভিসা" দিয়ে চাকরি খোঁজার সুযোগ দেয়।
-
টিউশন ফি: বছরে ৬,০০০–২০,০০০ ইউরো
-
বিশেষ সুবিধা: "কালচারাল ইমার্শন ক্রেডিট" – স্থানীয় উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অতিরিক্ত নম্বর
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা
-
নতুন অগ্রগতি: ভাষা দক্ষতার নতুন নিয়ম চালু হলেও ইংরেজি মাধ্যম প্রোগ্রাম এতে প্রভাবিত নয়
৬. নিউজিল্যান্ড
প্রায় ২৯,৭৯০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং ৩ বছরের পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
-
টিউশন ফি: বছরে ১৫,০০০–২৫,০০০ নিউজিল্যান্ড ডলার
-
বিশেষ সুবিধা: "ইকো-স্কলারশিপ" – পরিবেশভিত্তিক গবেষণার জন্য ১০,০০০ নিউজিল্যান্ড ডলার পর্যন্ত অনুদান
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম
-
নতুন অগ্রগতি: ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩,৫০০ জনে
৭. আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডের "স্টে ব্যাক অপশন" কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের ২ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দেয়, যার ফলে এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রমবর্ধমান গন্তব্য।
-
টিউশন ফি: বছরে ১০,০০০–২৫,০০০ ইউরো
-
বিশেষ সুবিধা: "টেক ট্যালেন্ট পাইপলাইন" – STEM শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির নিশ্চয়তা
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ব্রাজিল, মধ্যপ্রাচ্য
-
নতুন অগ্রগতি: আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ানো হয়েছে
৮. ফ্রান্স
ফ্রান্সে বর্তমানে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৬ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজ।
-
টিউশন ফি: বছরে ২,৭৭০–৩,৭৭০ ইউরো
-
বিশেষ সুবিধা: "ক্যাম্পাস ফ্রান্স বাডি প্রোগ্রাম" – স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সহায়তা
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া
-
নতুন অগ্রগতি: ইংরেজি মাধ্যমে কোর্স ১৫% বৃদ্ধি করা হয়েছে
৯. জাপান
জাপানের ২ লাখ ১ হাজার ৮৭৭ শিক্ষার্থী দ্রুত ভিসা এবং MEXT স্কলারশিপ সুবিধা পান।
-
টিউশন ফি: বছরে ৫৩৫,৮০০ ইয়েন
-
বিশেষ সুবিধা: "ফিউচার ইনোভেটরস হাব" – প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য ফ্রি কো-ওয়ার্কিং স্পেস
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, চীন, ভিয়েতনাম
-
নতুন অগ্রগতি: ২০২৭ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা
১০. সুইডেন
সুইডেনে বর্তমানে ৩৩,২৯৮ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এখানে ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও সহজ ভিসা প্রক্রিয়া রয়েছে।
-
টিউশন ফি: বছরে ৮০,০০০–১৪০,০০০ সুইডিশ ক্রোনা
-
বিশেষ সুবিধা: "নর্ডিক ইন্টিগ্রেশন গ্রান্ট" – সুইডিশ ভাষা শিক্ষার জন্য ২,০০০ ইউরো অনুদান
-
যোগ্য দেশ: ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ঘানা
-
নতুন অগ্রগতি: পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের অনুমতি
কেন এই দেশগুলো বেছে নেবেন?
এই দেশগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী শিক্ষা এবং পড়াশোনার পর কর্মসংস্থানের সুযোগে এগিয়ে রয়েছে। কানাডার আবাসন গ্যারান্টি, অস্ট্রেলিয়ার আঞ্চলিক বোনাস বা জাপানের স্টার্টআপ হাব—এসবই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক। যারা ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কেনিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশ থেকে আসছেন, তাদের উচিত ২০২৫ সালের নির্দিষ্ট ভিসা ও স্কলারশিপ শর্তাবলী আগে থেকেই জেনে নেওয়া।
সূত্র: আন্তর্জাতিক শিক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্ট ও ২০২৫ সালের আপডেট তথ্য।
আবির