অধ্যায় পঞ্চম
১। তৃষা ও শশী দুই বন্ধু স্কুল ছুটির পর মাঠে প্রতিদিন সহপাঠিদের সাথে বিকেলে একঘণ্টা খেলাধুলা করে। তৃষা কিছুক্ষণ খেলার পর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাছাড়া তার শরীর প্রায়ই ফুলে যায়। অপরদিকে শশীর শিক্ষিত মা পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য বাড়িতে হাঁস-মুরগী পালন এবং শাক-সবজি চাষ করেন। তিনি রান্না-বান্না এবং খাবার পরিবেশনেও যথেষ্ট সচেতন।
ক) সুষম খাদ্য কাকে বলে ?
খ) বটিউলিজম বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর।
গ) উদ্দীপকে তৃষার সমস্যাটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ) শশীর মা’র সচেতনতাই পারে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে। বিশ্লেষণ কর।
ক) উত্তর ঃ যে খাদ্যে খাদ্যের ৬টি উপাদান আদর্শ অনুপাতে থাকে সেই খাদ্যকে সুষম খাদ্য বলে। অর্থাৎ ৬টি উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্যই হলো সুষম খাদ্য।
খ) উত্তর ঃ যে খাদ্য বা পানীয় খাদ্যনালী ও পরিপাকতন্ত্রের অন্ত্রে ব্যাকটোরিয়া বা জীবাণু দ্বারা বিষাক্ত হয় সেই খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করলে ফুড পয়জিনিং হয়। এ ধরনের ফুড পয়জিনিংকে বলা হয় বটিউলিজম। এরূপ বিষক্রিয়ার লক্ষণ খাদ্য গ্রহণের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পরে দেখা দেয়। যথা সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে রোগী কয়েক দিনের মধ্যে মারা যায়। যে ব্যক্তি নিজের চাহিদা ও পরিবেশের মধ্যে সাফল্যের সাথে সঙ্গতি বিধান করতে পারে সেই শারীরিকভাবে ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ।
গ) উত্তর ঃ উদ্দীপকে তৃষা কোয়াশিওরকর রোগে আক্রান্ত। বেঁচে থাকা,স্বাস্থ্য রক্ষা এবং শরীর বৃদ্ধির জন্য মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন। পরিশ্রম করার জন্য শক্তির দরকার। পুষ্টিকর খাদ্য মানুষের পরিশ্রম করার জন্য শক্তির জোগান দেয়। খাদ্যে আমিষের পরিমাণ কম হলে মাংসপেশি গড়ে ওঠার বদলে ক্ষয় পেতে থাকে। শরীরে পানি আসে, ফুলে যায় এবং শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ রোগের নাম কোয়াশিওরকর। তৃষার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো খাদ্য সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞতা ও অবহেলা। খাদ্য উপাদান এবং পুষ্টিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকলে এবং খাদ্যে আমিষের পরিমাণ যথাযথ পরিমাণে না থাকায় তৃষার কোয়াশিওরকর রোগটি দেখা দেয়। সর্বোপরি আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে তৃষার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।
ঘ) উত্তর ঃ একটি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং পরিবারের যতেœ প্রধান ভূমিকা পালন করেন একজন সচেতন মা। ফ্রান্সের বিখ্যাত স¤্রাট নেপোলিয়ান বোনপোর্ট বলেছিলেন, ”তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমিতোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি দেব।” উদ্দীপকে শশীর মা একজন শিক্ষিত মহিলা। তিনি জানেন পরিবারের সকলের স্বাস্থ্যরক্ষায় পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প নেই। একজন সচেতন মা খুব সহজেই একটি পরিবারের স্বাস্থ্যরক্ষা করতে পারেন। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। একজন সচেতন মা পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পুষ্টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা, খাদ্যের গুনাগুন, খাদ্য প্রস্তুত এবং খাদ্য পরিবেশন সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকে। শশীর মা শিক্ষিত ও সচেতন। তিনি জানেন খাদ্যের পুষ্টিগুন, খাদ্য প্রস্তুত, রান্না করা এবং পরিবেশন করার পদ্ধতি সম্পর্কে। তিনি পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষার এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য হাঁস-মুরগী পালন ও শাক-সবজি চাষ করেন। রান্না করা এবং পরিবেশনের সময় যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করেন। যা পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সচেতনতার পরিচয় বহন করে। উদ্দীপকের আলোকে আমরা বলতে পারি শশীর মা’র সচেতনতাই পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে প্রাধান নিয়ামক। সবশেষ বলা যায় খাবারের প্রতি সচেতনতা এবং পুষ্টিকর খাদ্যই পরিবারের স্বাস্থ্যরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পাল করবে।
নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র
প্রশ্ন: ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ - আলোচনা করো।
উত্তর: ব্যাকরণের মধ্যে ভাষার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটে। ভাষার গতি-প্রকৃতি, তার স্বরূপ ধরন-ধারণ ব্যাকরণে রূপ লাভ করে। ভাষার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ব্যাকরণ থেকে ধারণা লাভ করা যায়। ভাষার দীর্ঘদিন ব্যবহারে যেসব রীতিনীতি প্রচলিত হয়েছে, তার বিশেষণই ব্যাকরণের বিষয়বস্তু।
ভাষা সৃষ্টি হয়েছে আগে। ভাষার পথ ধরে, ভাষা ব্যবহারের ফলে যখন বিশেষ কিছু নিয়ম দাঁড়িয়ে গেছে, তখন তা হয়ে উঠেছে ব্যাকরণের নিয়ম। ব্যাকরণের নিয়মকানুন ভাষাকে বিশুদ্ধ রাখতে সহায্য করে। সে জন্য ব্যাকরণকে ভাষার সংবিধান বলা হয়। তবে ব্যাকরণ ভাষাকে অনুসরণ করে কিন্তু ভাষা ব্যাকরণকে অনুসরণ করে না।
ভাষার বিশুদ্ধতার জন্য ব্যাকরণের সহায্য প্রয়োজন। কিন্তু ভাষা নিজের গতিতে চলে বলে কখনো কখনো ব্যাকরণের বিধি-বিধান অতিক্রম করে যায়। আর তখন সে ব্যতিক্রমকে ব্যাকরণ স্বীকার করে নেয়। ভাষায় এমন কিছু প্রয়োগ আছে, যা ব্যাকরণগত দিক থেকে ভুল। কিন্তু ভাষায় ব্যবহারে গ্রহণযোগ্যতার জন্য সে ভুলও শুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়।
মূলত ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়মশৃঙ্খলার আলোচনাই ব্যাকরণ। ব্যাকরণের সাহায্যে ভাষার বিশুদ্ধ রূপ বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। তাই বলে ব্যাকরণ ভাষাকে শাসন করে না, বরং ভাষাই ব্যাকরণকে শাসন করে।
প্রশ্ন: ‘ভাষা ব্যাকরণ অনুসরণ করে না, ব্যাকরণই ভাষাকে অনুসরণ করে।’
অথবা, ‘ব্যাকরণ ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে না, নির্মাণও করে না, তবু ব্যাকরণ পাঠের
প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সৃষ্টির আদিকাল থেকে বিভিন্ন ভাষা চলে আসছে মানুষের মুখে মুখে। কালক্রমে মানুষের ভাষার মধ্যে নানা রকম বৈচিত্র লক্ষ করা যায়। এমনকি মানুষের ভাষার ভিন্নতাও লক্ষ করা যায়। ফলে মানুষ ভাষাকে আপন ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে শুরু করে। যার ফলে ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। আর ভাষাকে সুন্দর, সঠিক ও সাবলীলভাবে প্রকাশ করার জন্য তখন আবিষ্কৃত হয় ব্যাকরণ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা বিশেষণ এবং এদের প্রয়োগবিধিই ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়। যেহেতু ভাষাকে সমৃদ্ধ, সঠিক ও শ্রুতিমধুর করার জন্য ব্যাকরণের সূচনা হয়েছে, সেহেতু ব্যাকরণের জন্ম ভাষা সৃষ্টির অনেক পরে। সংগত কারণেই বলা যায়, ভাষা ব্যাকরণ অনুসরণ করে না, ব্যাকরণই ভাষাকে অনুসরণ করে। কিন্তু ভাষার সঠিক প্রয়োগের জন্য ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন: বাংলা ব্যাকরণের পরিধি বা আলোচ্য বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা করো। অথবা, ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কী কী?
উত্তর: ব্যাকরণ: ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ব্যাকরণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশেষণ করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সে শাস্ত্রকে বলে সে ভাষার ব্যাকরণ। ব্যাকরণের পরিধি বা আলোচ্য বিষয়: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাংলা ব্যাকরণ একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যাকরণবিদ্দের মতে, ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় তিনটি। -ধারাবাহিক