ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসইর সূচক তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে

সুযোগসন্ধানীদের ফাঁদে শেয়ারবাজার

অপূর্ব কুমার

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১৮ মার্চ ২০২৪

সুযোগসন্ধানীদের ফাঁদে শেয়ারবাজার

ভয়াবহ দরপতনে দেশের শেয়ারবাজারে

ভয়াবহ দরপতনে দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে পড়লেও কারসাজির সঙ্গে জড়িতরা থেমে নেই। উল্টো তাদের কর্মকা- বাড়িয়ে দিয়েছে। রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের বাজারকে জিম্মির মতো গুজব ছড়িয়ে শেয়ারবাজারে পরিকল্পিত দরপতন ঘটানো হচ্ছে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে গুজবকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। পতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে বর্তমানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে গেছে।

কমতে কমতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৫ মে’র পর সূচকটি সর্বনি¤েœ অবস্থান করছে। ২০২১ সালের ২৫ মে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ হাজার ৮৮৪ পয়েন্ট ছিল। এরপর সূচকটি আর এত নিচে নামেনি।
যদিও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গুজবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার পরও অব্যাহত দরপতন ঘটানো হচ্ছে। প্রতিদিনই লেনদেন শুরুর পর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। টানা পতনের কারণে ধারাবাহিকভাবে কমছে মূল্যসূচক। আর বিনিয়োগকারীরা হারাচ্ছেন তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমান বিএসইসির শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে ব্যক্তি পর্যায়ের বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে রেখেছে। মূলত তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই শেয়ারবাজারে টানা পতন ঘটছে। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী বেশি মুনাফায় শেয়ার বিক্রি করে টাকা নগদ করে রেখেছে,  তারা আরও পতনের  আশা করছেন অল্পদামে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। মূলত ওইসব সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীর ফাঁদে পড়ছে শেয়ারবাজার। আর লোকসান গুনছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসি চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছে না। ইতোমধ্যে গুজব প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা গুজব ছড়িয়ে শেয়ারবাজারে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তাদের আইনের  আওতায়  আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের নেতিবাচক প্রবণতার সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতিও। কমতে কমতে সোমবার ডিএসইর লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা সাত কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২০ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে একই সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন ৪৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়। আর টানা চার সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমে ৭০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজার লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে বাজারের পরিস্থিতি বদলাতে থাকে।

সকাল ১১টা সাড়ে ১২টার মধ্যে বড় ধরনের ধস নামে শেয়ারবাজারে। সব খাতের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৭৮ পয়েন্ট কমে যায়। শেষদিকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দরপতনের মাত্রা কমায় সূচকের পতন কিছুটা কমে। এরপরও সবকটি সূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইর সাধারণ সূচক ৬৯ পয়েন্ট কমার পাশাপাশি বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

×