ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কচিকোমল পাতায় অন্য রকম পরিবেশ চা বাগানে

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১৯ মে ২০১৯

 কচিকোমল পাতায় অন্য রকম পরিবেশ চা বাগানে

জোবাইর চৌধুরী, নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী ॥ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুকুরিয়া বৈলগাঁও চা বাগানে কচিকোমল পাতা গজানো শুরু করায় বাগানে বিরাজ করছে অন্য রকম পরিবেশ। দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়াতে নিজস্ব উদ্যোগে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করাতে নানাভাবে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান চা বাগান কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে চা বাগানের সড়কটির কাজ এখানও শেষ না করাতে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাগান পরিদর্শনে আসা দর্শকদের। জানা মতে, বাঁশখালী- বৈলগাঁও চা বাগান ক্লোন চা উৎপাদন করায় এটি বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। বাঁশখালীতে অবস্থিত ৩ হাজার ৪ শত ৭২.৫৩ একর জায়গাজুড়ে বাগানটি। ১৯১২ সালে ইংরেজরা বাগানটি শুরু করেন তখন বাগানের ম্যানেজার ছিলেন মি. হিগিন। মাত্র ৮ একর চা বাগানটি বাংলাদেশ চা বোর্ড ১৯৯২ইং স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানটি ব্যবস্থাপনার জন্য রাগীব আলীর স্বত্বাধিকারী বাঁশখালী টি কেম্পিানির নিকট হস্তান্তর করেন। অতঃপর ২০০৩ সালে বাঁশখালী টি কোম্পানির সমূদয় শেয়ার ব্র্যাক ক্রয় করে এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর বিধান অনুযায়ী কোম্পানিকে ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিঃ নামকরণ করেন। ব্র্যাক চা বাগানটির মালিকানাস্বত্ব গ্রহণ করার পর ২০০৪ সালে চা কারখানা চালু করে। অতঃপর চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের মালিকানা ব্র্যাক, বাঁশখালী টি কোম্পানি লিঃ’র নিকট থেকে ২০১৫ সালের ৫ নবেম্বর থেকে সিটি গ্রুপ পরিচালিত ফজলুর রহমান গং এর ভ্যান ওমেরান ট্যাংক টার্মিনাল (বাংলাদেশ) লিঃ এবং ইন্টারন্যাশনাল ওয়েল মিলস্ লিঃ ক্রয় করে। এ শ্রেণীভুক্ত চা বাগানটিতে ম্যানেজার-১ জন, সহকারী ম্যানেজার-৪ জন, স্টাফ-২৬ জন, শ্রমিক- ৬০০ জন রয়েছে। বাংলাদেশে ১৬২টি চা বাগানের মধ্যে বাঁশখালী বৈলগাঁও চা বাগানটি গুণগত মান অনুযায়ী ১২ তম এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে ৩য় স্থানে। বর্তমানে চা বাগান এলাকায় ৬৩৮ একর আবাদী এবং ৫০ একর জায়গায় আগর চাষ করা হয়েছে। চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানে শতকরা ৯০ ভাগ ক্লোন চা এবং চায়ের গুণগত মান ভাল হওয়ায় বাজারে এ বাগানের চায়ের কদর বেশি। ২০০২ সালে ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা বাগানটি চলতি বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫০ হাজার কেজি। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে বৃষ্টির কারণে বিঘ্ন হয়ে থাকে। চা বাগানের অভ্যন্তরে ৬ শতাধিক কর্মচারী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষাসহ অনান্য সুবিধা রয়েছে বলে জানান বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশার। চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিদিন বাগানের সর্বত্র আধুনিক উপায়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। শীত মৌসুম আসতে না আসতেই এই বাগানে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছে। বাগানের যাতায়াতের সড়কটি যথাযথভাবে সংস্কার না হওয়ায় এখানে ঘুরতে আসা সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সকলকেই নানাভাবে বেকায়দায় পড়তে হয়। তবে সড়ক সংস্কার শুরু হলেও তা অদৃশ্য কারণে বন্ধ রয়েছে। বাঁশখালীর বৈলগাঁও পুকুরিয়া সরকার চা বাগান পরিদর্শনকালে বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বাঁশখালীর এই বিশাল বাগানের চা পাতার সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। এই মানের জন্য বাগানের কর্মরতরা প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় সরকার রাজস্ব তত বেশি পায়। বর্তমানে চা পাতার বিক্রীত অর্থ থেকে সরকার ১৫% হারে ভ্যাট পান। তবে তিনি বাগানের কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাগানের চারপাশে ঘেরা বেড়া না থাকায় প্রতিদিন হাতিরপাল বাগানে ছুটে আসে। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রায় সময় শঙ্কিত অবস্থায় থাকে। তিনি সরকারী এই রাজস্ব আয়ের অন্যতম চা বাগানকে আরও বেশি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
×