অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে চিনি রফতানির ওপর ২৫ শতাংশ করারোপ করতে যাচ্ছে প্রতিবেশী ভারত সরকার। এর ফলে শর্করা পণ্যটির বৈশ্বিক দাম আরও বাড়ার পাশাপাশি থাইল্যান্ড থেকে রফতানি বেড়ে যেতে পারে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ব্রাজিলের পর বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ভারতের প্রধান এলাকাগুলোতে খরার কারণে এবার ফলন কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যখন পণ্যটির বৈশ্বিক দর বেড়ে গত আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে।
খাদ্যমন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ানকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, বিশ্বে চিনির সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোক্তার দেশটিতে দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেই লক্ষ্যে দেশের চিনি রফতানির লাগাম টেনে ধরতেই এই করারোপ করা হচ্ছে। এক টুইট বার্তায় পাসওয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাই মুনাফা করার জন্য ব্যবসায়ীরা চিনির রফতানি বাড়াতে পারে। ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন করারোপের ফলে বিশ্বে চিনির দাম বেড়ে যেতে পারে। পর পর দুবছর খরার কারণে এমনিতেই আগামী অক্টোবর থেকে ভারত আমদানিপ্রধান দেশে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোটাক কমোডিটিজের গবেষক অরবিন্দ প্রসাদ বলেন, এ করারোপের ফলে চিনির বৈশ্বিক দরে পাঁচ শতাংশ প্রভাব পড়তে পারে, এর বেশি হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ (এপ্রিল-মার্চ) অর্থবছরে ভারত ২৯ লাখ টন চিনি রফতানি করেছে, যা বিশ্ব রফতানির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ভারত ৫৫ হাজার ৭২ টন আমদানি চিনি বাংলাদেশে রফতানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের প্রায় অর্ধেক। ইউএসডিএর মে মাসের প্রতিবেদনে, এ বছর ভারত থেকে রফতানি কমে ১০ লাখ টন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যা ২০০৯/১০ মৌসুমের পর সর্বনিম্ন।
ব্রজিলের কিছু অংশে তাপমাত্রা নেমে যাওয়া ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণেও চিনির বৈশ্বিক দর বেড়েছে। দিল্লিভিত্তিক এক চিনি শিল্প বিশেষজ্ঞ বলেন, বাজারে ভারত থেকে রফতানির তেমন প্রত্যাশা না থাকলেও চিনির ওপর করারোপে ক্ষণস্থায়ী হলেও দাম বাড়বে। এ পদক্ষেপের ফলে থাইল্যান্ড ও ব্রাজিলের প্রতিদ্বন্দ্বী রফতানিকারকরা লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন মুম্বাইভিত্তিক এক ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, থাইল্যান্ড সবেচেয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ সাদা চিনির বাজারে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশটি। তবে এর ফলে বাংলাদেশের চিনির বাজারে কোন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। দেশের চাহিদার তুলনায় মজুদ পরিস্থিতি ভাল থাকায় গত বছর চিনি আমদানির ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসিয়েছে সরকার। উপরন্তু দেশ থেকে চিনি রফতানি করারও উদ্যোগ রয়েছে।