ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মায়ের বিকল্প নেই

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ৯ মে ২০২৪

মায়ের বিকল্প নেই

.

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ মা। আসলে যার কোনো তুলনাই নেই। আর মাতৃত্বের শৌর্যে যে কোনো মেয়ের যেন শৈশবকাল থেকেই প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায় সেই পুতুল খেলার মধ্য দিয়ে। কবি গুরুর তেমন ঐশ্বর্য ছড়িয়ে আছে তার শিশু কাব্যে। তেমনি এক মিষ্টি মধুর কাব্যিক অনুভব-

ছিলি আমার পুতুল খেলায়

প্রভাতের শিব পূজোর বেলায়।

তোকে আমি ভেঙেছি আর গড়েছি

স্নেহাতিশায্যে নারীর মাতৃরূপ শুধু কাব্যিক মহিমাই নয় বরং সাহিত্যজুড়ে। জননীর যে জগৎজোড়া অভিগমন সেটাও নারী হৃদয়ের চিরন্তন বৈভব।নারীকে ভাবলেন এইভাবে স্নেহে মায়া মমতায় নারী মাতা।এমন অভিব্যক্তি সাহিত্যের নানামাত্রিক আঙিনায় ছড়ানো এক দীপ্ত প্রখর উপলব্ধি। আবার এমন মা- জাতিকে উপহার দেন দেশমাতৃকার জন্য শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। ত্যাগী মহিমায় মায়ের এমন সমর্পণ দেশ জাতির অহঙ্কার। তাই মা শব্দের তুলনা শুধুই মা। শিশু কোলে মায়ের যে উদ্দীপ্ত চেতনা তার আগের গল্প তো অন্যরকম শক্তিময়তায় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্ভার। যাতনাও বটে। দশ মাস দশ দিন গর্ভে সন্তান ধারণ করার মহিমান্বিত শক্তি আর সুন্দরের আবাহন আসলে কোনো কিছুতেই নেই। কষ্ট আর উদ্বিগ্নের মধ্যে যে সময় পার করা তাও এক অনন্য দোলাচল। সেই দশ মাস দশ দিনের ঋণই নাকি জীবন ভর সন্তানদের জন্য অপরিশোধ্য। কিন্তু মা তো তার অহঙ্কার আর শক্তিময়তাকে ঋণ হিসেবে ভাবেনই না। বরং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পাশে থাকার যে অঙ্গীকার সেটা মাতৃ গৌরবের অনন্য মহাযোগ। সন্তান প্রসবের সঙ্গে তুলনা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় কষ্টকর অনুভবের যাতনায়। তেমন যন্ত্রণা মুহূর্তে আনন্দ আবেগে উচ্ছ্বসিত হতেও সময় লাগে না। শুধু কি তাই? দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উপহার দিতে জাতিকে গৌরবের উচ্চাসনে বসানো তাও এক চিরন্তন সাধনার অনবদ্য পর্ব।

প্রসঙ্গক্রমে এসেই গেল নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত জ্ঞানগর্ভ বাক্য চয়নÑ ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও আমি একটি শ্রেষ্ঠ জাতি উপহার দেব।শুধু কি অমৃত বাণী? না কি যুগ-যুগান্তরের এক শ্রেষ্ঠ সত্য কথন। আমরা যদি স্মরণে আনি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উজ্জ্বলতম নামটি। সেখানে অবিচ্ছেদ্য হয়ে থাকবে জাতির পিতার মায়ের নামটিও। শেখ সায়রা খাতুন গরিয়সী নারী বটে। যিনি দেশের মহান স্থপতির জন্মদাত্রী মা। তবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে যেমন শেখ বংশের গৌরবময় ইতিহাস আছে। তেমনি ভাঙা-গড়ার উত্তাল পর্বের লড়াই সংগ্রামও আছে। ১৯২০ সাল উপমহাদেশীয় এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রতিবেশ। যেখানে কারোর জন্ম আর বেড়ে ওঠা অত সহজসাধ্য ছিলই না। আবার আমরা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার কথা উল্লেখ করি তাও বুঝতে হবে কত লড়াকু জীবনযাত্রায় দিনযাপনের অনন্য পালাক্রম। বঙ্গবন্ধু নিজেই বিয়ের আসরে বসলেন ১২-১৩ বছরের এক বালক। আর স্ত্রী রেণুর বয়স মাত্র তিন বছর। এক শিশুকন্যা সংসার পাতার অবস্থায় নিজেদের কিভাবে তৈরি করলেন তাও এক বিস্ময়কর সামাজিক আবহ। সে সময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অবিভক্ত ভারত উত্তাল। আর ফজিলাতুন নেছা তাঁর প্রথম সন্তান শেখ হাসিনাকে পৃথিবীর আলো দেখান ১৯৪৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। অনাকাক্সিক্ষত দেশ বিভাগের সূচনালগ্নে।  ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সংগ্রামী ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর যে লড়াকু অভিগমন সেখানে বঙ্গমাতার জীবন স্বাভাবিক স্বস্তিতে ছিলই না।

পর পর পাঁচ সন্তানের জননী হওয়া কত যে বিপন্ন রাস্তা পার হতে হয়েছে তেমন ইতিবৃত্ত বঙ্গবন্ধু বহুবার স্মরণও করেছেন। সংসার আগলে রাখা, সন্তানদের তৈরি করে দেওয়াই শুধু নয় বরং বিক্ষুব্ধ, বিপরীত স্রোতের মধ্যে স্বামীকে ছায়া দেওয়া সবই যেন করতে পারলেন পরম দুঃসাহসিক মনোবলে। একদিকে স্ত্রীর ভূমিকায় অটল, অন্যদিকে মাতৃত্বের মহিমান্বিত রূপে সন্তানদের বড় করে তোলা সবই যেন এক লড়াকু বীরের অনবদ্য কাহিনী পরম্পরা। এমন মা- তো দেশমাতৃকার সম্পদ আর ঐশ্বর্য। আর আমাদের বাংলার ঘরে ঘরেও তেমন ভুবন মোহিনী মাতৃরূপ সদা বিরাজমান যা দেশ জাতিকে অনন্য শিখরে পৌঁছে দিতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এমন রত্নগর্ভা মায়েদের নজির বহু আছে। প্রতি বছর আজাদ প্রোডাক্টস এমন সফল মায়েদের পুরস্কৃত করে থাকেন। যারা সকল বাধাবিপত্তির মধ্যেও সন্তানের জীবন গড়ে দিতে নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করতে পেছন ফিরে তাকান না পর্যন্ত। পিতৃহীন সন্তানরা কেমন করে যেন বলিষ্ঠ আর লড়াকু মায়ের স্নেহাতিশয্যে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। এমন নজির বাংলার বিভিন্ন ঘরে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। কিন্তু মাতৃহীন সন্তান শেষ অবধি নিজেকে গড়ে তুলতে কত যে হিমশিম খায় তেমন দৃষ্টান্তও বাংলার আনাচে কানাচে ছড়ানো ছিটানো। তাই মায়ের বিকল্প কোনো কিছুর বিনিময়েই হয় না। তিনি শুধুই গর্ভধারিণী মা। তাই এমন মহিমান্বিত, শৌর্য, বীর্য মায়েরা বিশেষ কোনো দিবসে আটকে থাকেন না। তারা নিত্য দিনের, প্রতি মুহূর্তের, অনুক্ষণের। দেশের অসংখ্য মায়ের  প্রতি সম্মান জানিয়ে মাতৃদিবসকে অভিনন্দিত করলাম।

×