ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গোল সাম্রাজ্য

টুটুল মাহফুজ

প্রকাশিত: ২২:২৪, ৭ অক্টোবর ২০২২

মঙ্গোল সাম্রাজ্য

.

১২০০ শতকের শুরুতে মঙ্গোল সেনাপতি চেঙ্গিস খান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। ১২০০ শতকের শেষে এসে প্রায় সমস্ত পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য ইউরোপ পর্যন্ত এটি বিস্তৃত ছিল। এটি ইতিহাসের সর্ববৃহৎ অবিচ্ছিন্ন স্থলসাম্রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

মঙ্গোল জাতির ইতিহাস লিখিত আকারে না থাকায় তার উৎস সন্ধান সহজ নয়। তবে মঙ্গোল জাতি মৌখিকভাবে প্রজন্মান্তরে তাদের ইতিহাস সংরক্ষণ করেছে। চেঙ্গিস খানের আগে মঙ্গোলরা একক জাতি ছিল না। তারা ছিল যাযাবর এবং সম্পদ কম থাকায় তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছোটখাটো হামলা করে থাকত। আধুনিক মঙ্গোলিয়ার এলাকা ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন চীনা সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। তারা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঘোড়ার দৌড়ের শব্দ শুনতে পায় এবং ১০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত দেখতে পায়। চেঙ্গিস খান মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মঙ্গোলরা তাকে জাতির জনক হিসেবে মান্য করে।
চেঙ্গিস খানের আদিনাম তিমুজিন। ‘Secret historz of Mongols’ অনুসারে তিনি ছিলেন বর্তে চিনোর উত্তরপুরুষ। তার পিতার নাম ইয়েসুকাই ও মাতার নাম হয়লুন। তার পিতার গোত্র ছিল বরজিগিন ও মাতার গোত্র ছিল অলখুনুত। বরজিগিন গোত্রই পরবর্তীতে মঙ্গোলদের রাজকীয় গোত্রে পরিণত হয়। তার জীবন শুরু থেকেই ছিল ঘটনা বহুল। এর বিবরণ মঙ্গোল জাতির গোপন ইতিহাস বইতে বিস্তারিত রয়েছে।
১১৯০ সালের দিকে চেঙ্গিস খান মঙ্গোল জাতির একমাত্র নেতা (খান) হবার সংকল্পে যুদ্ধ শুরু করেন। তার সমর কুশলতা ও উপযুক্ত নীতির কারণে তিনি সব গোত্রকেই ধ্বংস অথবা বশীভূত করতে সক্ষম হন। অনেকবার তিনি তার কাছের সহযোগীদেরও ছাড়েননি। যেমন তিনি তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু জামুখাকেও পরাজিত করে হত্যা করেন। এভাবে তিনি মঙ্গোল জাতির প্রধান খান হন ও চেঙ্গিস খান উপাধি গ্রহণ করেন। তার অভিষেক হয় ১২০৬ সালে। তখন থেকেই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের শুরু ধরা হয়।
মঙ্গোল জাতির বিজয় অভিযান শুরু হয় চেঙ্গিস খানের আমলেই। তিনি চীনা সাম্রাজ্যসমূহ, খওয়ারিজমার শাহ, পশ্চিম এশিয়ার তুর্কি গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান করেন ও জয়লাভ করেন। তার বিজয়াভিযান ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ১২২৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২১ বছর তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে ধ্বংসযজ্ঞ চালান ও নিজের জাতিকে সমৃদ্ধ করেন।
চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পরও অভিযান থেমে থাকেনি। তার উত্তরাধিকারিরা কোরিয়া থেকে পোল্যান্ড পর্যন্ত ভূভাগ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন। তবে ১২৬০-এর দশক থেকেই তাদের ভাঙ্গন শুরু হয় এবং ১২৯০ সালের মধ্যে এই বিশাল সাম্রাজ্য ৪ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
১২৫৯ সালে মঙ্গু খানের মৃত্যু হয়। মঙ্গোলদের উত্তরাধিকারের কোন নীতিমালা ছিল না। চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারীদের যে কেউ সিংহাসন দাবি করতে পারত। ফলে পরবর্তী দুই দশকে তাদের মধ্যে অনেক গৃহযুদ্ধ হয়। ১২৯৪ সালের মধ্যে তাদের সাম্রাজ্য চারভাগে বিভক্ত হয়- ১. ইউয়ান সাম্রাজ্য ২। চাগতাই খানাত ৩. সোনালি সাম্রাজ্য, ৪। ইলখানদের এলাকা।

 

×