ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিস্তর তারতম্য!

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৮ জুন ২০১৭

বিস্তর তারতম্য!

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫-২০১৬ খ্রিস্টাব্দের বার্ষিক প্রতিবেদনে মাসিক ভিত্তিতে কৃষি মজুরির হার সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রতি উপজেলায় ১০ জন কৃষি দিনমজুরের, ১৫ বছর এবং তদুর্ধ পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকের আলাদাভাবে, সাক্ষাতকারের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়, তবে কৃষি দিনমজুর পাওয়া না গেলে কৃষি মজুরি নিয়োগকারী কৃষকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে এবং সকল অঞ্চলের মজুরি হার পাওয়ার পর কৃষি মজুরি হার নিরূপণ করা হয়। গত জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে এপ্রিল ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খোরাকি ছাড়া এবং খোরাকিসহ পুরুষ ও মহিলা ভেদে কৃষি মজুরির যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে তাতে পুরুষ ও মহিলা কৃষি শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের মধ্যে বিস্তর তারতম্য বিদ্যমান (এখানে শুধুমাত্র দু’মাসের পরিসংখ্যান দেখানো হলো) জুলাই ১৫ (খোরাকি ছাড়া) পুরুষ ৩০৪ টাকা ও মহিলা ২২৭ টাকা, (খোরাকিসহ) পুরুষ ২৮২ টাকা ও মহিলা ২১১ টাকা; এপ্রিল ১৬ (খোরাকি ছাড়া) পুরুষ ৩৩১ টাকা ও মহিলা ২৫৫ টাকা, (খোরাকিসহ) পুরুষ ৩০৯ টাকা ও মহিলা ২৩১ টাকা; অর্থাৎ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে খোরাকি ছাড়া ৭৭ টাকা, খোরাকিসহ ৭১ টাকা এবং এপ্রিল ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে খোরাকি ছাড়া ৭৬ টাকা ও খোরাকিসহ ৭৮ টাকার ফারাক রয়েছে। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ এবং নারী ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার, অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর সংখ্যা অনুপাতে প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করছে। তাদের সংখ্যা অনুপাতে ভারসাম্য বিরাজ করলেও নারীরা বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে যা উপরে উল্লেখিত কৃষি মজুরি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। কর্মক্ষেত্রে নারীরা অর্থনৈতিকভাবেই শুধু বৈষম্যের শিকার নয়, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবেও নির্যাতনের শিকার হয়। সংসারের চাকা সচল রাখতে একজন নারী যখন কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হয় তখন তাকে নানা ধরনের কটু কথা শুনতে হয় পরিবারের কাছ থেকে। কেননা যেখানে শতকরা ৮৭ দশমিক ২ ভাগ পরিবারের গৃহপ্রধান হচ্ছে পুরুষ সেখানে নারীদের শিক্ষায় ও কাজে-কর্মে সবদিক দিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়াকে সরু চোখে অবলোকন করাটাই স্বাভাবিক। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে পুরুষ কর্মসহযোগীদের দ্বারা কথা ও ব্যবহারে নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। পোশাকশিল্পে কর্মরত নারীদের উপর পাশবিক ও রিরংসামূলক আচরণ, খুন, চাকরির লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ ইত্যাদির কথা প্রায়ই শোনা যায়। মনে রাখতে হবে, নারী সমাজের উন্নয়ন ব্যতীত দেশ ও সমাজের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। তাই নারীদের সার্বিক উন্নয়নসহ সকল ধরনের বৈষম্য রোধপূর্বক নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে জোর দেয়া প্রয়োজন। নারীদের দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি তাদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। ধর্মীয় কূপম-ূকতা থেকে বের হয়ে নারীদের উৎসাহিত করতে হবে আলোর পথে হাঁটার, দেখাতে হবে জীবনের স্বপ্ন, যেন তারা সকলেই দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য কথায়, কাজে, চিন্তা ও চেতনায় একেকজন ‘আলোঘর’ হয়ে উঠতে পারে, তাদের সেই আলোক শিখাতেই দেশ ও জাতির জীবনতরী নির্ভাবনায় অগ্রসর হবে সম্মুখ পানে, পৌঁছে যাবে আভীষ্ট লক্ষ্যে। ভালুকাপাড়া, ময়মনসিংহ থেকে
×