বিশ্বে যতগুলো মেগাসিটি বা মহানগরী রয়েছে তারমধ্যে ঢাকা একটি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে দেশের প্রায় ১১ শতাংশ লোক বাস করে এই রাজধানী শহরে। এবং এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যার এমন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহন, শিল্প-কারখানা, সড়ক-ফ্লাইওভার ও আবাসিক স্থাপনা। তবে, সে অনুপাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে না নাগরিক সুবিধাসহ নগর ব্যবস্থাপনার গুণগত মান। এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরে গড়ে ওঠা ৬২ শতাংশ স্থাপনার মধ্যে কেবল ২৫ শতাংশ পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়া আর বাকি ৩৭ শতাংশ স্থাপনাই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। এর সামষ্টিক ফলাফল এই যে, ঢাকা শহর যেসব কারণে অতিদূষণের শিকার হচ্ছে তারমধ্যে এই অপরিকল্পিত নগরায়ণের কুপ্রভাবই সবচেয়ে বেশি। এক জরিপে বলা হয়েছে, একটি আধুনিক নগরীর মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রাস্তা বা সড়ক থাকা প্রয়োজন থাকলেও সেখানে ঢাকায় আছে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ। যেটি যানবাহন চলাচলে বিঘœতা সৃষ্টির মূল কারণ। যানজটের কারণে বছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির ২.৫ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা। আর মাথাপিছু আয়ের হিসেবে এ ক্ষতি প্রায় ৬ শতাংশ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এসব অর্থনৈতিক ক্ষতি বাদেও পরিবেশের উপর পড়ছে মারাত্মক প্রভাব। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খবর হলো, বায়ুদূষণের দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার অবস্থান বরাবরই বিশ্ব তালিকার সম্মুখ সারিতে। এ নগরীর বায়ুর দূষণ মাত্রা কখনও কখনও ছেড়ে যায় সহনীয় পর্যায়ের চেয়েও প্রায় ছয়গুণ। বায়ুদূষণ মানুষের শ্বাসকার্যে ব্যাঘাত ঘটায় এবং দেহে নানা রোগ সৃষ্টি করে। এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্মক রোগ নগরীর এখনকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। গত ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশের নগর এলাকায় পরিচ্ছন্নতা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা- দেশের পরিবেশগত বিশ্লেষণ ২০১৮’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেশের সামগ্রিক পরিবেশ দূষণের চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণের কারণে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। যা দেশের সামগ্রিক মৃত্যুর প্রায় ২৮ শতাংশ। এছাড়াও কেবল শহরগুলোর পরিবেশ দূষণের ফলে প্রতি বছর সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এমন পরিসংখ্যান সত্যিই হতাশার। এই পরিবেশ দূষণ যেহেতু আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করছে তাই আমাদের এ থেকে উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। আশার কথা হলো, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত বেশ কিছু নীতি, বিধিমালা ও আইন রয়েছে। প্রয়োজন কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু তদারকি আর আইনসমূহের যথাযথ প্রয়োগ। প্রয়োজনে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে হাতে নিতে হবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। এতে এসব আইনের ব্যাপারে জানতে ও সতর্ক হতে পারবে সর্বস্তরের জনগণ। এবং আশানুরূপ হারে কমবে পরিবেশ দূষণ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: