ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রোমানিয়া থেকে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ২৮ নাবিক

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৭ মার্চ ২০২২

রোমানিয়া থেকে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ২৮ নাবিক

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ ইউক্রেনে রকেট হামলায় বিধ্বস্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধির ২৮ নাবিককে দ্রুততম সময়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শনিবার সড়কপথে মলদোভা থেকে রওয়ানা হবার পর তারা রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট পৌঁছেন। তাদের সেখানে একটি হোটেলে রাখা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশে ফেরার জন্য তাদের যাত্রা আকাশ পথের কোন রুটে হবে তা রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ফেসবুক পোস্টে দেখা যায়, ২৮ নাবিক বুখারেস্টের একটি হোটেলে রয়েছেন। দেশে ফেরার জন্য তাদের মাঝে ক্ষণ গণনা চলছে। হোটেলে পৌঁছার পর জাহাজটির চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওমর ফারুকের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, বুখারেস্টের একটি হোটেলে তারা সকলেই সুস্থ আছেন। গত ২ মার্চ তাদের জাহাজে রকেট হামলায় নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের লাশ ইউক্রেনের একটি হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণ করা আছে। আরিফের লাশ আনার বিষয়ে আজ সোমবার তৎপরতা চালানো হবে। উল্লেখ্য, মলদোভার উত্তরে রোমানিয়া এবং পর্যায়ক্রমে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ডের অবস্থান। রোমানিয়া থেকে তাদের আকাশ পথে কোন রুটে আনা হচ্ছে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রোমানিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে। রবিবার দুপুরের আগে রোমানিয়ায় দূতাবাসের কয়েক স্টাফ ২৮ নাবিককে মলদোভা সীমান্তে গ্রহণ করেন। এরপর সোজা নেয়া হয়েছে বুখারেস্টের একটি হোটেলে। হোটেল থেকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক বিএমএমওএর সভাপতিকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের কারণে তারা এত দ্রুততম সময়ে লে অফ করা বিএসসির জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি থেকে উদ্ধার হয়েছেন। এ জন্য তারা সরকারপ্রধান এবং বিএমএমওএ ও পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। গত ২ মার্চ এমভি বাংলার সমৃদ্ধির ওপর রকেট হামলায় জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। হামলায় জাহাজের ব্রিজ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এটিতে আগুন লাগার পর ক্যাপ্টেন ও ক্রুরা মিলে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় জাহাজটি ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা হয়েছে। ঘটনার পর তারা উদ্ধার পাওয়ার জন্য আকুতি জানিয়ে আসছিল। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস দুটি তৎপর হয়। রোমানিয়া অপেক্ষাকৃত ইউক্রেনের নিকটবর্তী দেশ। ফলে রোমানিয়ার দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তৎপরতা বাড়ানো হয়। রবিবার দুপুরের আগে তারা মলদোভা সীমান্তে গিয়ে ২৮ নাবিককে গ্রহণ করে। এর আগে ইউক্রেন থেকে ২৮ নাবিককে আনা হয় মলদোভাতে। এরপর মলদোভা থেকে রোমানিয়ার বুখারেস্টে পৌঁছেছেন তারা। দীর্ঘ প্রায় তের ঘণ্টা সড়কপথে তাদের সময় কেটেছে। ক্লান্ত হলেও উদ্ধার হয়ে প্রাণ রক্ষার বিষয়টি অনেকাংশে নিশ্চিত হওয়ায় তারা খুশি। কিন্তু তাদের সতীর্থ থার্ড ইঞ্জিনিয়ার আরিফের নিহত হওয়া এবং তার লাশ সঙ্গে আনতে না পারায় তারা কাতর। আশা করা হচ্ছে, আজ সোমবার থেকে তৎপরতা চালিয়ে সফলতা আসলে হয়তো বা আরিফের লাশও তাদের সঙ্গে দেশে আসতে পারে। আর বিলম্বিত হলে ২৮ নাবিক আগেই দেশে পৌঁছে যাবে। উল্লেখ্য, হাদিসুর গত ১২ ডিসেম্বর কলম্বো বন্দরে বাংলার সমৃদ্ধিতে ওঠেন। ২ মার্চ ইউক্রেনে রকেট হামলায় মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে, বিএমএমওএর পক্ষ থেকে ওয়ারজোন ঘোষিত এলাকায় বাংলার সমৃদ্ধিকে প্রেরণের বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে তদন্তের জন্য রবিবার আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিএসসির অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে একজন নাবিকের প্রাণহানি হয়েছে এবং এর পাশাপাশি জাহাজটির ক্ষতি হওয়ায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে থাকবে নৌ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌবাণিজ্য দফতর, বিএসসি ও বিএমএমওএর প্রতিনিধি।
×