ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শহিদুল ইসলাম

সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে বিকল্প নেই শিক্ষার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে বিকল্প নেই শিক্ষার

মানবজাতি উন্নতর ও সুসম্পন্ন জীবনযাপনের জন্য আদিকাল থেকেই শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের পূর্বশর্ত হলো জীবনের আদর্শ ও লক্ষ্য স্থির করা। জীবনের আদর্শ ও লক্ষ্য স্থির না হলে শিক্ষার মান নির্ধারণ করা যায় না। জীবনের আদর্শ ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় হলো শিক্ষা। যে জাতি জ্ঞানের আলোয় আলোকিত নয়, তার স্থান সভ্য সমাজ থেকে অনেক পশ্চাতে। যার কারণে সমাজ চিন্তক জন ফর্স্টার বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া প্রতিভাবান ব্যক্তি অনেকটা খনিতে থাকা রুপার সমান। মহান দার্শনিক এরিস্টটল শিক্ষাবিহীন মানুষকে মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন- ‘Educated men are as much superior to uneducated men as the living as to the dead.’ শিল্পায়নের ঝুঁকি ও একুশ শতকের চ্যালেজ মোকাবেলায় আমাদের শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণ আলোকবর্তিকা হিসেবে শিক্ষার উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করে থাকেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন শিক্ষকের জ্ঞানের, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। প্রশিক্ষণ ব্যতীত চলমান পৃথিবীর নবতর জ্ঞান-গবেষণা ও চিন্তাধারার পরিচিতির সুযোগ সীমিত। তাইতো দার্শনিক ও চিন্তাবিদ বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষকের প্রতিসাত বছরে এক বছর ছুটি দেয়া উচিত, যাতে তিনি অন্যান্য দেশে গিয়ে প্রশিক্ষিত হতে পারেন।’ বার্ট্রান্ড রাসেল আদর্শ চরিত্র বিকাশেই শিক্ষার লক্ষ্য এবং এই আদর্শ চরিত্র বিকাশের জন্য তিনি কতিপয় সর্বজনীন জ্ঞান মানুষের মধ্যে বিকশিত হওয়া বাঞ্ছনীয় বলেছেন। এই জ্ঞানগুলো হলো : প্রাণশক্তি, সাহস, ধৈর্য, সংবেদনশীলতা ও বুদ্ধিজ্ঞান। শিক্ষা গ্রহণের পর যদি মানবের মানবীয় পথ প্রশস্ত না হয়। যদি মানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তির সেবাদাসে পরিণত হয়, তাহলে সেটা প্রকৃত শিক্ষা নয়। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম- এই পঞ্চ মহাভূতের সংমিশ্রণে মহাবিশ্ব গঠিত। এই জড় অচেতন অবস্থা থেকে চেতনা বা প্রাণের উদ্ভব এক মহাবিস্ময়কর বিষয় যা নিয়ে বর্তমান বিশ্বে চিন্তাবিদদের ভাবনার শেষ নেই। এই চেতনাসম্পন্ন বিচরণশীল প্রাণীর মধ্যে মানুষ এক বিশেষ স্থানে অবস্থিত যা তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। যদিও মানব শ্রেষ্ঠ তথাপিও নিজের পরিচয় ও দায়িত্ববোধ বুঝতে না পেরে সে অমানুষিক দুর্গতি ও কর্মক্রিয়াকে জীবনের গতি হিসেবে বেছে নেয় যা মানব জাতির জন্য অপমানজনক। আমরা প্রায়ই বাগ্যুদ্ধে অবতীর্ণ হই জ্ঞান বড় না বিদ্যা বড়। আমার সিদ্ধান্ত জ্ঞান বড়। তাইতো বলতে শুনি জ্ঞানই শক্তি। এই শক্তি যেন তেন কোন শক্তি না, এটা সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি। মানুষ দেখে রসনার বিলাস, পোশাক পরিচ্ছদ, চাকচিক্য, মডেলিং। যার কারণে জগৎ রঙিন হয়ে উঠেছে। এই ভোজন বিলাস আর স্ফূর্তি আর চাকচিক্য দিয়ে সভ্যতা চলে না। এক শ্রেণীর লোক এতে আনন্দ পায় কিন্তু সার্বিক কল্যাণে তার যাত্রাপথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা যদি আলোকিত জাতি তৈরি করতে পারি, তাহলে এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। জ্ঞানভিত্তিক জাতি উপহার দেয়ার মাধ্যমেই আলোকিত জাতি উপহার দেয়া সম্ভব। এই জ্ঞানের বিচ্ছুুরণ কিভাবে সম্ভব তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তৈরির মাধ্যমে আলোকিত জাতি গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন বলে তাকে আমি এই মুহূর্তে স্বাগত জানাই। আমার স্লোগান এবং যা সবার স্লোগান হওয়া উচিত পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার চাই। এই পাঠাগার যদি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে জাতি হবে আলোকিত ও গৌরবান্বিত। আজ গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বিদ্যুত এবং রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে। কিন্তু বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত আয়োজনের অভাবে আছে। অনেকেই আজ অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি এবং মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে নিজেকে জড়িত করছে। তারা বিভিন্ন দলে, মতে এবং নীতিতে বিশ্বাসী ঠিক। কিন্তু সত্যের নীতিতে তাদের সবসময় বিশ্বাসী পাওয়া যাচ্ছে না। জ্ঞান শক্তি, অস্ত্র শক্তির ওপরে। কিন্তু জ্ঞানটা হতে হবে সত্যের জ্ঞান। কিন্তু আমরা এই সত্যের জ্ঞান যদি না পাই, তাহলে আমাদের আত্মা আলোকিত হবে না। তাই গ্রীক মহাগুরু সক্রেটিস বলেছিলেন-‘Knowledge is virtue and virtue is knowledge’ পুণ্যই জ্ঞান এবং জ্ঞানই পুণ্য। মানুষ যদি জ্ঞানী হয়, তাহলে সে পুণ্য অর্জন করতে থাকে। যদি তার ভিতর সত্যের জ্ঞান ঢোকে, তাহলে তার জীবন স্বার্থক। একজন স্বার্থক ব্যক্তিই পারে তার স্বদেশ ও স্বজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। কারণ, স্বদেশ ও স্বজাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রথম দরকার হলো জ্ঞান। এই জ্ঞানের মশাল জ্বালাতে হবে গ্রামের গহীন পল্লীতে পল্লীতে। তবেই জাতি ধীরে ধীরে বৃহত্তম এবং বলিষ্ঠ জাতিতে পরিণত হবে। আমরা পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার চাই এটি সম্মিলিত চেষ্টার ফলে সম্ভব। তার জন্য সরকার, বিত্তশালী, গ্রামবাসী ও সাধারণ জনতার এক হওয়া দরকার। এই একতার শিক্ষা কে দেবে। আমরা যদি হানাহানি আর কাটাকাটিতে ও ঝগড়াঝাটিতে মনোনিবেশ করি, তাহলে এটা সম্ভব না। যে জাতি জ্ঞানের জোরে বলিয়ান সে জাতি আসলে শ্রদ্ধার পাত্র। আমরা জ্ঞানের শক্তিতে বলিয়ান হতে চাই। যার মাধ্যমে শ্রদ্ধার পাত্র হওয়া যাবে দুনিয়াব্যাপী। এখানে বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও উদারতার শিক্ষা স্বীকৃত। যে জাতি জ্ঞানে বড় সে জাতি মনেও বড়। এই মহাত্মার পরিচয় দেয়া অত সহজ নয়। কর্তৃত্ববাদী ও বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টিকারীরা কোনদিন মহাত্মার পরিচয় দিতে পারে না। আমরা চির সবুজ সোনার বাংলাকে আলোকিত করতে চাই। আশা করি জাতি উন্নত থেকে উন্নততর হবে। যার মাধ্যমে শান্তির মশাল ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী। লেখক : শিক্ষক, সরকারী ইস্পাহানী ডিগ্রী কলেজ, ঢাকা [email protected]
×