ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গভীর রাতে চেক আউট

গোপনে চট্টগ্রামের হোটেলে

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

গোপনে চট্টগ্রামের হোটেলে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ই-মেইলে। এখন তিনি কোথায় আছেন, কেউ জানে না। নিজ বাসায়ও ফেরেননি পদত্যাগী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান। তবে চট্টগ্রামের একটি পাঁচতারকা হোটেলের রেকর্ড বলছে, তিনি গোপনে এসে গোপনেই ফিরে গেছেন। তার আগমনের ক্ষেত্রে ছিল না কোন আগাম নোটিস, ছিল না কোন প্রটোকল। চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে সোমবার বিকেলে উঠেছিলেন ডাঃ মুরাদ হাসান। তখনও তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রী। তবে বেশ আলোচিত হয়ে যান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার বিষয়ে সরকার প্রধানের কাছ থেকে একটি নির্দেশনা আসছে, এমন আভাস চাউর ছিল। মুরাদ হাসানের চট্টগ্রামে আসার কোন তথ্য ছিল না সরকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। হোটেল রেডিসনে জনসংযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক রাফাত সালমান জনকণ্ঠকে জানান, সোমবার বিকেলে তিনি বোর্ডার হয়ে আসেন। মঙ্গলবার সকালে তাকে আর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের মধ্যে তিনি চেকআউট করেন। তিনি বলেন, সাধারণত হাই প্রোফাইল বোর্ডাররা নিজে রিসিপসনে না এসে চেকআউটের কাজটি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রেও তা-ই হয়ে থাকতে পারে। রাত দেড়টার দিকে তিনি হোটেল কক্ষ ছেড়ে থাকতে পারেন। এরপর থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে আর কোন তথ্য নেই আমাদের কাছে। টক অব দ্য কান্ট্রি ডাঃ মুরাদ হোসেন ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ার পর কী কারণে বা কার কাছে চট্টগ্রামে এসেছিলেন তা অজানা। তবে কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করেছেন, এমন তথ্যও নেই। হোটেল রেডিসনে থাকাকালে তার সঙ্গে স্থানীয় কোন নেতাকর্মীর সাক্ষাত হয়নি। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদেরও একবাক্যে জবাবÑ তারা কিছুই জানেন না। সাধারণত একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী রাজধানী ত্যাগ করে অন্যত্র যাওয়ার সময় জনসংযোগ বিভাগ থেকে একটি সিডিউল থাকে। কিন্তু তিনি চট্টগ্রামে আসেন কোন ধরনের দাফতরিক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কিছুই অবহিত হয়নি। এমনকি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও প্রতিমন্ত্রীর আগমন বা অবস্থানের বিষয়ে কোন ধরনের অবহিতকরণ বা তথ্য নেই। আঞ্চলিক তথ্য অফিস চট্টগ্রাম সূত্র জানায়, তারা প্রতিমন্ত্রীর আগমনের কোন সফরসূচী পাননি। তার সঙ্গে ছিলেন না কোন একান্ত সচিব, সহকারী কিংবা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। যেহেতু কিছুই অবহিত করা হয়নি সেহেতু তারাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন কোথাও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আগমনের রেকর্ড নেই। তবে তিনি এসেছিলেন এবং ফিরেও গেছেন। হোটেল রেডিসনের তথ্য বলছে, ডাঃ মুরাদ হাসান চেকইন করেন সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে। এর আগে একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন দুপুরে। তবে এ বিষয়ে বিমানবন্দর কর্মকর্তা কর্মচারীরা কোন তথ্যই দিতে পারেননি। এর কারণ, তিনি মন্ত্রী হিসেবে আসেননি। এসেছিলেন প্রটোকল ছাড়া সাধারণ যাত্রী হিসেবে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন ধরে তার কিছু বিতর্কিত এবং অশ্লীল বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছিল। এরমধ্যে রাষ্ট্রধর্ম থাকা উচিত কিনা এমন বক্তব্যে অনেকের সমর্থন থাকলেও তিনি প্রথম তোপের মুখে পড়েন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে খুবই আপত্তিকর মন্তব্য করায়। তার এ বক্তব্য দেশের নারী সমাজ এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীরাও ঠিকভাবে গ্রহণ করেননি। এরপর অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ ফোনালাপ ভাইরাল হয়ে গেলে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে। এ অবস্থায় তার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত যে হতে যাচ্ছে, তা ছিল সময়ের বিষয় মাত্র। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ডাঃ মুরাদ হাসান। তবে এর আগে থেকেই তিনি নিজেকে আড়াল করে রাখেন। সর্বশেষ তথ্য বলছে, তিনি ঢাকায় নিজ বাসভবনেও ফেরেননি। তবে চট্টগ্রামে তার প্রায় বারো ঘণ্টা অবস্থান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
×