ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তাফা জব্বার

মুক্তিযুদ্ধ মুজিব বাহিনী ও মুজিববাদ-৩

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৯ নভেম্বর ২০২১

মুক্তিযুদ্ধ মুজিব বাহিনী ও মুজিববাদ-৩

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সকল স্তরের কর্মকান্ডের ইতিহাসই আমাদের জানা উচিত। যদি কেবল ওপরে ভাসমান অংশটিতেই আমাদের নজর আটকে থাকে তবে তলানীতে বা গভীরতায় কি আছে সেটি আমাদের জানা হবে না। এখন আর সেই সময় নেই যে, স্বাধীনতার কোন অংশকে লুকিয়ে রাখতে হবে বা আলোচনা করা যাবে না। বরং একদিকে আমাদের বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে হবে, অন্যদিকে ৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে দিয়ে দুটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে দেবার পর থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল এবং জিয়া, এরশাদের সামরিক শাসনসহ বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনার বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে আলোচনা হওয়া উচিত। নিজে মুজিব বাহিনীর অতি সাধারণ একজন কর্মী ছিলাম বলে আমি স্মরণ করতে পারি যে, এই বাহিনী গঠনের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক যুদ্ধ করা, যার রণকৌশল হতো গেরিলা কায়দার। এই বাহিনীর সংগঠক ও সদস্যরা তখন সারাবিশ্বের, বিশেষত আফ্রো এশিয়ার মুক্তি সংগ্রামীদের লড়াইয়ের পাশাপাশি রাশিয়া, চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লব সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখতেন। বাড়ির পাশের ইন্দোচীনের প্রভাব আমাদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। জানা যায় যে, জেনারেল ওবান গেরিলা যুদ্ধের বিশেষজ্ঞ ছিলেন বলেই তাকে এই বাহিনী সংগঠন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। একাত্তরে আমার তো আর দিল্লীর খবর জানার ক্ষমতা ছিল না। একাত্তর পূর্ববর্তী সহযোদ্ধাদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল না। রেডিওতে খবর পাওয়াই তথ্যপ্রাপ্তির একমাত্র উপায় ছিল। মুজিব বাহিনী গঠন বিষয়ক খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বা অন্য রেডিওতে আসত না। টিভি তখন ছিলই না। আমাদের হাতে আমার দুলাই-এর কেনা একটা তিন ব্যান্ডের রেডিও ছিল। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের চাইতে দিল্লীর দূরত্ব যেমন বেশি ছিল, তেমনি ছিল অতি নিচু পর্যায়ের একজন ক্ষুদ্র দেশপ্রেমিক তরুণের দিল্লীর লাড্ডুর খবর পাবার ব্যাগ্রতা। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যে বন্ধুরা ছিল তাদের সঙ্গেও থাকতে পারতাম তবে হয়ত এখন ব্যাখ্যা করতে পারতাম ওবান কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা বলেছেন। এটিও জানতাম মুজিব বাহিনী গঠনের প্রেক্ষাপটটা কি ছিল। কিন্তু গারো পাহাড়ের ইয়ুথ ক্যাম্পে বসে মুজিব বাহিনীর থানার দায়িত্ব পাওয়া ছাড়া পেছনের কাহিনী আমি তখন জানতে পারিনি। যে ইতিহাস বলছি তা স্বাধীনতার পরে অন্য সূত্রে পাওয়া। আমি পাহাড়ে বসে এমন কথাই শুনেছিলাম যে, আমাদের যুদ্ধটি দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং আমাদের ভারতে থেকে নয়, নিজের দেশে থেকেই যুদ্ধ করতে হবে। এই ধারণাটি আমরা স্বাধীনতার আগেই পেয়েছিলাম। যুদ্ধকালে আমাকে এটিও বলা হয়েছিল যে, ভারতের অস্ত্র নিয়েও যুদ্ধ করা যাবে না, আমাদের দেশের ভেতরে থেকে পাকিস্তানীদের হাতিয়ার কেড়ে নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। এমনকি দেশের ভেতরেই প্রশিক্ষণ এবং দেশের ভেতর থেকেই যোদ্ধা সংগ্রহ করার লক্ষ্য দিয়ে আমাদের দেশের ভেতরে আসতে বলা হয়েছিল। মুজিব বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন, বিশেষত বঙ্গবন্ধুর সরাসরি অনুসারী হবে এই ধারণাও দেয়া হয়েছিল। আমার বন্ধুরা ১৬ ডিসেম্বরের অনেক আগেই ঢাকা পৌঁছে গিয়েছিল এবং ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে বিভিন্ন ধরনের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নানা ধরনের অপারেশন করেছিল। মুজিব বাহিনীতে দশ থেকে ষাট হাজার পর্যন্ত মানুষ যুক্ত ছিল বলে মনে করা হয়। এদের অনেকেই দেশের ভেতরে যুদ্ধ করলেও বস্তুত যুদ্ধটা ব্যাপকভাবে করার সময়টা যখন ডিসেম্বর মাসে এসে যায় তখন তো ভারতসহ মিত্রবাহিনী সরাসরি যুদ্ধেই জড়িয়ে পড়ে। যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা অনেকটা প্রলম্বিত হতো- যেমনটি হয়েছিল ইন্দোচীনে, তবে তার গতিপ্রকৃতি এবং প্রকৃত রাজনৈতিক মেরুকরণ ভিন্নরকম হতো। ভিয়েতনামের বিভক্তি থেকে তাদের জাতীয় যুদ্ধের চরিত্র পরিবর্তন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় স্বাধীনতা ছেলের হাতের মোয়া নয় যে, চাহিবামাত্র পাওয়া যায়। বরং চিত্রটা বিপরীত। বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে সেটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়, ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গঠিত মুক্তিবাহিনীতে একদিকে বাঙালী সশস্ত্র বাহিনী তাদের বাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে অংশ নিয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ ছাত্র-কৃষক-জনতা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশ নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সম্মোহনী শক্তিতে সুদীর্ঘ সময় লড়াই করে পুরো জাতিকে স্বাধীনতামুখী করতে পেরেছিলেন। পাকিস্তান বাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও অত্যাচার পুরো বাঙালী জাতিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঙালীকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এর মধ্য থেকে যদি মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তিকে চিহ্নিত করতে যাই তবে সেটির সবচেয়ে বড় উপাদান ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগের এমএনএ বা এমপিএ বা দলীয় নেতারা জাতির পিতার নির্দেশে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আগেই এর রূপরেখা তৈরি করেছে ছাত্রলীগ। জয় বাংলা স্লোগান, জয় বাংলা বাহিনী, স্বাধীন বাংলার পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, ইশতেহার, অসামরিক ছাত্র-ছাত্রীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ, স্বাধীনতা-উত্তর দেশের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা সবই জাতির পিতার নির্দেশে ছাত্রলীগ প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বব্যাপী আন্দোলন ছয় দফা এবং ছয় দফা সংবলিত ১১ দফা নিয়ে আন্দোলনটাও করেছে ছাত্রলীগ। বাস্তবতা হচ্ছে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তাকে বাংলাদেশ আন্দোলনে রূপান্তর করার পুরো কাজটাই ছিল ছাত্রদের। কিন্তু ছাত্রলীগ ছাড়া প্রধান ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও তার দুটি ধারা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়ে তোলার রাজনৈতিক দর্শনে যোগ দেয়নি। ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ, একটি উগ্রবাদী টুকরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। আবার ছাত্র ইউনিয়নের একটি বড় অংশ গেরিলা বাহিনী হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এটি স্পষ্ট যে, এই বাহিনীর সকল সদস্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সোনার বাংলার রাজনৈতিক রূপটা উপলব্ধি করতেন না। করার কথাও না। ইপিআর, পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে তো রাজনীতি চর্চা হতো না। তারা কেমন করে জানবেন বঙ্গবন্ধু ছয় দফাকে কিভাবে এক দফার প্রেক্ষিত হিসেবে তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ৭০ সালে নৌকায় ভোট দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছয় দফা বাস্তবায়নের জন্য। ১ মার্চে সংসদ অধিবেশন স্থগিত করা ও ২৫ মার্চের পর পাক হানাদাররা দেশজুড়ে নির্মম গণহত্যা শুরু করার প্রেক্ষিতে অনেককেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সশস্ত্র হতে হয়েছে। তাদের রাজনীতির পাঠটাও তো অপূর্ণ ছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধের একটি রাজনৈতিক বাহিনী গড়ে তুলতে হলে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কোন উৎস্য থেকে সেই বাহিনীটি গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না। মুজিব বাহিনী সেই বাহিনীই ছিল। নয় মাসে দেশ স্বাধীন না হলে মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অনন্য অংশগ্রহণ বহু গুণ বেশি দৃশ্যমান হতো। মুক্তিবাহিনী একটি নিখাদ রাজনৈতিক বাহিনী না হবার ফলে মুক্তিযুদ্ধের পর এই বাহিনী তার রাজনৈতিক লড়াইটা শেষ করতে পারেনি। মনে করা হয়ে থাকে যে, নয় মাসের জন্য খন্ডকালীন একটি কাজে আমরা যোগ দিয়েছিলাম এবং নয় মাস পর সেই কাজটি শেষ হয়ে গেল; যেন একটি সংক্ষিপ্ত প্রকল্প শেষ হলো। মনে করা হয়ে থাকে যে, নানা স্থান থেকে আসা মানুষ একটি কাজ সম্পন্ন করে আবার তাদের স্ব স্ব কাজে ফিরে গেল। আমি মনে করি, আমাদের ক্ষেত্রেও এই ঘটনাটা ঘটেছিল। স্বাধীনতার পর জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করে এই মানুষদের একটি সংগঠিত বাহিনীতে একত্রিত করার চেষ্টা ছিল বটে; কিন্তু একদিকে রক্ষীবাহিনীতে অতি সামান্য সংখ্যক যোদ্ধাকে ঠাঁই দেয়া সম্ভব হয়েছিল, অন্যদিকে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর সেই প্রচেষ্টা একবারেই বিলীন হয়ে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান রক্ষীবাহিনীকে ধ্বংস করেছিল এমন বিচারে যে, সেটি সেনাবাহিনীর বিকল্প ছিল। বাস্তবে একটি প্যারা মিলিশিয়া বাহিনী হিসেবে রক্ষীবাহিনীকে অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। অন্যদিকে ছাত্রলীগের যে অংশটি মুজিব বাহিনীতে ছিল সেটির বড় অংশ আলাদা একটি সংগঠন গড়ে তোলে। তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে পরবর্তীতে জাসদ গঠন করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫০ বছর পূর্ণ হলেও জাসদ গঠন-ছাত্রলীগ বিভাজন এবং সেই সময়কার রাজনৈতিক মেরুকরণের বিষয়গুলো এখনও তেমনভাবে আলোচিত হয়নি। আমার নিজের মনে হয়েছে যে, একাত্তরে মুজিব বাহিনী গঠন করে যে উদ্দেশ্য সাধনের প্রচেষ্টা ছিল তা ৭২ সালে এসে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। মুজিব বাহিনীর আদর্শ স্বাধীনতার পর সমন্বিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়ত ভিন্নভাবে প্রবাহিত হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব বাহিনী স্বাধীনতা-উত্তরকালে একটি বিভক্ত শক্তিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশে পঁচাত্তর পরবর্তী পশ্চাদপদতার প্রধানতম কারণ এই বিভক্তি। বঙ্গবন্ধু আজীবন বলে গেছেন তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। সংবিধানে সমাজতন্ত্র স্পষ্টভাবে এখনও উল্লেখ আছে। সেই সমাজতন্ত্র বৈজ্ঞানিক হবে সেই ¯েøাগান নিয়ে জাসদ তৈরি করার যৌক্তিকতা এখন তো আমি আর পাই না। মার্কস এঙ্গেলস, লেনিন, মাও সে তুং, চে গুয়েভারা, রেজিস দেবরেসহ সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদদের বইপত্র পড়ে আমি সমাজতন্ত্রের বৈজ্ঞানিক সংস্করণ খুঁজে পাইনি। কিন্তু সংবিধানে সমাজতন্ত্র সন্নিবেশিত করার পর সেই সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টার বিপরীতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ঘোষণা দিয়ে মুজিব বাহিনীকে বিভক্ত করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। এছাড়াও মুত্তিযুদ্ধের পরপরই এদের সংগঠিত করে রাখার তেমন জোরালো কোন প্রচেষ্টা ছিল না। কেবল মুজিব বাহিনীর একটি অংশ রাজনৈতিকভাবে জাসদ হিসেবে সংঘবদ্ধ হয়েছিল। জাসদ গঠন যে সঠিক ছিল না সেটি এখন প্রমাণিত। এক সময় মুজিববাদ অনেক আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল ঘোষণা ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ ছিল। এর মাঝেই লুক্কায়িত ছিল বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একে একদলীয় শাসন হিসেবে প্রচার করে অপপ্রচার করা হতে থাকে। কেবল ২০১৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশালের কথা বলতে শুরু করেছেন। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনীতির জন্য একটি বড় মুষ্ঠাঘাত ছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতিসচেতন এই মুজিব বাহিনীর প্রায় পুরোটাই জাসদ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং যে মুজিবের নামে এই বাহিনীর জন্ম হয়েছিল সেই মুজিবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা। অন্যথায় মুজিব বাহিনী স্বাধীনতা-উত্তর রাজনীতির একটি কেন্দ্রবিন্দুই থেকে যেতে পারত, যেমনটা তারা স্বাধীনতার আগে ছিল। জাসদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি তার বইতে মুজিব বাহিনী সম্পর্কে লিখেছেন ‘মনি-সিরাজ-রাজ্জাক-তোফায়েল- এই চার যুবনেতা বসে ছিলেন না। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথতলায় ব্যানার্জি নামের এক ভারতীয় সরকারী কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়। তাঁর মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সুজন সিং উবানের দেখা হয়। তিনি ছিলেন স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ইন্সপেক্টর জেনারেল। তাঁকে অপ্রচলিত (গেরিলা) যুদ্ধের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেখা হতো। তাঁকে বাংলাদেশের তরুণদের বিশেষ সামরিক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেনারেল উবান স্বাধীনভাবেই তাঁর দায়িত্ব পালন করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। তাঁকে জবাবদিহি করতে হতো ভারত সরকারের সচিব রামেশ্বর নাথ কাওয়ের কাছে। কাও ছিলেন একই সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এরও (রিসার্চ এ্যান্ড এ্যানালিসিস উইং) পরিচালক। সংস্থাটি ১৯৬৮ সালে সিআইএ (যুক্তরাষ্ট্র) এবং এমআই সিক্স (যুক্তরাজ্য)-এর আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এর প্রথম প্রকল্পটির নাম ‘বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে অসামান্য সাফল্য তার পেছনে ‘র’-এর অবদান ছিল অনেকখানি।’ ঢাকা, ২৬ মার্চ ১৯, আপডেট ২৭ নবেম্বর ২১ \ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক [email protected] www.bijoyekushe.net.bd
×