ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব ছাড়াও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসর মাতাবেন যেসব ক্রিকেটার

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ২৬ অক্টোবর ২০২১

সাকিব ছাড়াও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসর মাতাবেন যেসব ক্রিকেটার

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিশ্বের অধিকাংশ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশে এখন ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হচ্ছে, এবং এই ফরম্যাটের ক্রিকেট কারা বিশেষ পারদর্শী সে সম্পর্কে দর্শকরা কম-বেশি ওয়াকিবহাল। কিন্তু চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্ভাব্য তারকাদের প্রসঙ্গে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা সাম্প্রতিক পারফরমেন্সকে বিবেচনায় নিলেও এবারকার ভেন্যুর বিষয়টিকে একইসাথে মাথায় রাখছেন। এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটিং-বোলিংয়ের পারফরমেন্স অনেকটাই নির্ভর করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্লো উইকেটের ওপর। "যাদের ভালো স্পিনার আছে এবং যারা ভালো স্পিন খেলতে পারে সেই দলগুলো বিশেষ সুবিধা পাবে। সেই দিক দিয়ে কাগজে কলমে অন্তত উপমহাদেশের দলগুলো - ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা বাড়তি সুবিধা পেতে পারে", দুবাই থেকে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন কলকাতার ক্রিকেট সাংবাদিক এবং গবেষক বরিয়া মজুমদার।’ সাকিব আল হাসান : সেই বিচারে এবারের বিশ্বকাপে সম্ভাব্য তারকাদের প্রথম দিকে তিনি রাখছেন বাংলাদেশের অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসনকে। "সাকিব দলকে সেমি-ফাইনাল বা ফাইনালে নিতে পারবেন কিনা তা জানি না, কিন্তু আমি মনে করি বাংলাদেশে টুর্নামেন্ট কতদূর এগুতে পারবে তা নির্ভর করবে সাকিবের ওপর," বলেন মি. মজুমদার। সাকিব আল হাসান সে প্রমাণ এরই মধ্যে দিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে পরের ধাপে অগ্রসর হওয়ার পেছনে তার ভূমিকাই ছিল মুখ্য। শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচে হারলেও এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন। আইসিসির বর্তমান টি-টোয়েন্টি অল-রাউন্ডারের র্যাংকিংয়ে সাকিব এখন দুই নম্বরে। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ। আইপিএল ছাড়াও পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া এবং সেইসাথে নিজের দেশ বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলছেন। চলতি বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত দেশের হয়ে ৯২টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তার রান ১৮৮১। স্ট্রাইক রেট ১২১। উইকেট পেয়েছেন ১১৭টি। ইকনমি রেট মাত্র ৬.৬৪। নিজে একজন চৌকস স্পিনার। ব্যাট হাতে ভাল স্পিন বল খেলেন তিনি। ফলে, ইউএই'র স্লো উইকেট তাকে সাহায্য করবে। সেই ইঙ্গিত তিনি এরই মধ্যে দেখিয়েছেন। চারটি ম্যাচে ইতিমধ্যেই ১১টি উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বাবর আজম : যে ব্যাটসম্যান এখন ক্রিকেট পণ্ডিতদের সম্ভবত সবচেয়ে বিমোহিত করছেন তিনি পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। "টপ অর্ডারে বাবর আজম বেশ কিছুদিন ধরে যেভাবে ব্যাট করছেন তা এক কথায় অসামান্য। দুবাইয়ে রোববারের ম্যাচে তিনিই ভারতকে শেষ করে দিয়েছেন," বলেন বরিয়া মজুমদার। ক্রিকেট বিষয়ক সাময়িকী উইজডেনের ভারতীয় সংস্করণের সম্পাদক আদিয়া শর্মাও মনে করেন, বাবর আজম এখন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেনসেশন এবং চলতি টি-২০ বিশ্বকাপেও তিনি অসামান্য পারফরমেন্স দেখাতে পারেন। বাবর আজম বর্তমানে আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে দুই নম্বরে। ২০১৮ সালের শুরু থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি বিশ্বের অন্য সব ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি রান করেছেন। ৬১ ম্যাচে তার রানের গড় ৪৬.৮৯। স্ট্রাইক রেট ১৩১। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাত হাজার রানের কোটা পেরিয়েছেন সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। এ ক্ষেত্রে তিনি ভারতের ভিরাট কোহলি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলকেও ছাড়িয়ে গেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশ্বকাপ শেষে বাবর আজমের পরিসংখ্যানে যে আরো অনেক পালক যোগ হবে তা নিয়ে কারো তেমন কোনো সন্দেহ নেই। জসপ্রিত বুমরা : যে তিন-চারটি দলকে এবারের বিশ্বকাপের সম্ভাব্য শিরোপা বিজয়ী হিসাবে দেখা হচ্ছে তার অন্যতম ভারত। আইপিএলের সুবাদে দলে এক ঝাঁক অত্যন্ত চৌকস টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে কার কথা বলা যায়? উইসডেন ডট কমের এর লেখক ক্যামেরন পনসনবির কাছে এবারের বিশ্বকাপের এক নম্বর বোলার ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরা। উইসডেন ডট কমের সম্পাদক তাহা হামিমও মনে করেন বুমরাই হবেন এই বিশ্বকাপের অন্যতম প্রধান বোলিং তারকা। তিনি লিখেছেন- বুমরাহ শুধু গতির ওপর ভরসা করেন না, তিনি বুদ্ধিমান বোলার, ব্যাটসম্যানদের হতচকিত করার অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে তার। ভারতের হয়ে ৫১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন বুমরা। উইকেট পেয়েছেন ৫৯টি। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বোলিং র্যাংকিংয়ে এই সময় তেমন উঁচুতে না থাকলেও, বুমরা তার চার ওভারে ব্যাটসম্যানদের কাছে সাক্ষাৎ আতঙ্ক হয়ে দেখা দেবেন সন্দেহ নেই। শাহিন শাহ আফ্রিদি : তবে পাকিস্তানের পেস বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদিও এখন পেস বোলিংয়ের নতুন তারকা হয়ে হাজির হয়েছেন। অনেকেই তাকে ওয়াসিম আকরাম এবং মোহাম্মদ আমেরের সাথে তুলনা করছেন। বরিয়া মজুমদার বলছেন, রোববার দুবাইতে ভারতকে নাস্তানাবুদ করে হারানোর পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন আফ্রিদি। "ম্যাচের সময় ধারাভাষ্যকারদের ঘরে কপিল দেব ছিলেন, ক্লাইভ লয়েড ছিলেন, জহির আব্বাস ছিলেন। সবাই একবাক্যে আফ্রিদির প্রশংসা করছিলেন।" তার প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ওভারেই তিনি ভারতের সম্ভবত সবচেয়ে চৌকস টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মাকে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন। পরের ওভারেই কে এল রাহুলের উইকেট তুলে নেওয়ার পর ভারত আর রানের গতি বাড়াতে পারেনি। পাকিস্তানের হয়ে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই নিয়মিত ওপেনিং ওভারগুলোতে উইকেট নিচ্ছেন সাড় ছয় ফুট উচ্চতার বাঁহাতি এই পাকিস্তানী ফাস্ট বোলার। পরের ম্যাচগুলোতেও যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন পাকিস্তানকে শিরোপার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবেন শাহিন আফ্রিদি। কে এল রাহুল : বিশ্বকাপের সম্ভাব্য তারকাদের তালিকায় ভারতের একাধিক ব্যাটসম্যানের নাম লেখা হচ্ছে। রোহিত শর্মা বহুদিন ধরেই ভারতীয় ব্যাটিং স্তম্ভ। তিনি বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চারটি শতরান করছেন। কিন্তু উইসডেনের ক্যামেরন পনসনবি মনে করছেন, ব্যাট হাতে এবার বিশেষ নজর কাড়বেন ভারতের আইপিএল বিশেষজ্ঞ কে এল রাহুল। পরপর চারটি আইপিএল মৌসুমে তিনি ৫০০র বেশি রান করেছেন - ৬৫৯, ৫৯৩,৬৭০ এবং সদ্য শেষ হওয়া আইপিএল-এ করেছেন ৬২৬ রান। এবং শেষবার এই রান তিনি করেছেন ইউএই'র ঐ সব মাঠে যেগুলোতে বিশ্বকাপ হচ্ছে। ভারতের হয়ে কে এল রাহুল ৫০টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। গড় রান ৩৯। স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৪২। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল : চলতি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে খুব বেশি আশা কেউ করছেন না, তবে দলের দু-তিনজন ক্রিকেটারকে অবজ্ঞা করা কঠিন হবে। অনেক বিশ্লেষকই বিশেষ করে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কথা বলছেন। ৩৩ বছরের অভিজ্ঞ এই অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার সম্প্রতি শেষ হওয়া আইপিএল খুব ভালো খেলেছেন। টাইট অফ স্পিন বল করেছেন। পরে মিডল অর্ডারে নেমে ম্যাচের পর ম্যাচ ভালো রান করেছেন। ম্যাক্সওয়েল এমন একজন ব্যাটসম্যান যিনি এক হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তার রিভার্স সুইপ যে কোনো স্পিনারের জন্য সবসময় বড় মাত্রাব্যাথার কারণ। কেন উইলিয়ামসন : দল হিসাবে সবসময় আন্ডাররেটেড হলেও আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড অন্য যে কোনো দলের চেয়ে ভালো। নিউজিল্যান্ডের সেই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষমতা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে তিনি সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড দলের স্তম্ভ হয়ে রয়েছেন। বর্তমানে খুব কম ব্যাটসম্যানই রয়েছেন যারা একইসাথে ফাস্ট বল এবং স্পিন দুটোই সমান ভালো খেলেন। কেন উইলিয়ামসন তাদের একজন। এমনকি মার্টিন ক্রোর মত লেজেন্ডও মন্তব্য করেছেন, তার কেরিয়ার শেষে কেন উইলিয়ামসনই হবেন নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। রশিদ খান : আফগান স্পিনার রশিদ খানের বয়স মাত্র ২৩, কিন্তু এরই মধ্যে এত ম্যাচ তিনি খেলেছেন যে এই বয়সেই তিনি অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার। আইপিএল বা বিগ ব্যাশ-সহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত বড় বড় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে এই গুগলি যাদুকর এখন অনেক বড় তারকা। রশিদ খান আফগানিস্তানকে হয়তো এই বিশ্বকাপে শিরোপা এনে দিতে পারবেন না, কিন্তু যে চার ওভারের সময় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের হৃৎকম্প চলতে থাকবে। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট ২৮১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন রশিদ খান। ঝুলিতে উইকেট ৩৮৮। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে রশিদ খান এখন তিন নম্বর বোলার। ইউএই'র স্লো উইকেটে তিনি যে কত দুর্ধর্ষ হয়ে উঠতে পারেন তা দেখিয়েছেন সোমবার স্কটল্যান্ডের সাথে ম্যাচে। বল করেছেন মাত্র ১৪টি। রান দিয়েছেন ৯। তার মধ্যেই চারটি উইকেট। অন্দ্রে রাসেল : অবিশ্বাস্য শক্তিতে ব্যাট হাঁকাতে পারেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অল রাউন্ডার অন্দ্রে রাসেল। ব্যাটের মাঝে বল লাগাতে পারলেই চোখের নিমিষে তা সীমানার বাইরে চলে যায়। এ কারণে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার স্ট্রাইক রেট ১৭০। সেই সাথে খুব ভালো ডেথ ওভারস বোলার। এক হাতে দলকে ম্যাচ জেতাতে পারেন অন্দ্রে রাসেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আশা করছে রাসেল যেন ফিট থাকেন, ফর্মে থাকেন। তাহলেই তৃতীয়বারের মত টি-২০ শিরোপা জেতার প্রত্যাশা তারা করতে পারবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা (শাকিল আনোয়ার)
×