ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা টিকার মেধাস্বত্ব

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১১ মে ২০২১

করোনা টিকার মেধাস্বত্ব

প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি ঘটার প্রেক্ষাপটে সে দেশের সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশের সঙ্গে লিখিত চুক্তি এবং অর্থ পরিশোধ সত্ত্বেও রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দেশে গত ৮ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকা প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হলেও দ্বিতীয় ডোজ সবাইকে দেয়া নিয়ে মহাসঙ্কটে পড়েছে সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমাণ অন্তত ১৩ লাখ ডোজ টিকা সংগ্রহের জন্য কমপক্ষে ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকার দূতাবাসকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর পাশাপাশি সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে রাশিয়া, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে টিকা আমদানির। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দেশে টিকা তৈরির। এর জন্য দেশীয় তিনটি কোম্পানির সক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি আশার খবরও আছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং টিকা সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে করোনা টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করে দেয়ার বৈশ্বিক আবেদনে ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির আপত্তি সত্ত্বেও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইতালি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অতঃপর আশা করা যায় যে, কিছু সময় লাগলেও খুব শীঘ্রই করোনা টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত হবে এবং সে অবস্থায় টিকা তৈরি করতে পারবে বাংলাদেশও। কিছু বিলম্ব হলেও সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে সরকার। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট লিখিত চুক্তিসহ অর্থ পরিশোধ সত্ত্বেও এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যথাসময়ে না দেয়ায় বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষা শর্তে দেশেই টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনও মিলেছে। জরুরী ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যে রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক টিকা আমদানির অনুমোদনও দেয়া হয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে। সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে মে মাসের মধ্যে রাশিয়া থেকে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে এই টিকার কার্যকারিতা ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও চলেছে আলোচনা। দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যতম পরাশক্তি চীন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতকেও চীন আমন্ত্রণ জানিয়েছে এই জোটে যোগ দিতে। এর উদ্দেশ্য হলো করোনা মোকাবেলায় জরুরী মেডিক্যাল সেবা দান এবং পরপবর্তীতে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ই-কমার্সের উন্নয়ন। এতে চীনের টিকা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা পরবর্তীতে উৎপাদিত হবে দেশেই। এর পাশাপাশি চেষ্টা চলছে মেডিক্যাল অক্সিজেনসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যেটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। তবে দুঃখজনক হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির আওতায় টিকা মেধা সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ফলে সারা বিশ্বে টিকার সুষম বণ্টন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না। টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলো। ফলে বিকল্প দেশ থেকে টিকা আমদানির পাশাপাশি দেশে যৌথ উদ্যোগে টিকা তৈরির সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। গ্লোব বায়োটেকের টিকাটি নিয়েও অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।
×