ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্কায় পোশাক খাত

প্রকাশিত: ২১:২১, ১৯ এপ্রিল ২০২১

শঙ্কায় পোশাক খাত

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তথা ভয়াবহ তীব্র সংক্রমণ প্রতিরোধে চলতি মাসের প্রথমার্ধে সাধারণ লকডাউন এবং দ্বিতীয়ার্ধে কঠোর লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তদনুযায়ী নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং অইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেসব বাস্তবায়নে যথাসাধ্য কাজ করে চলেছে। তবে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা সচল রাখার স্বার্থে শিল্প-কলকারখানা ব্যাংক বীমা ইত্যাদি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে রফতানিমুখী পোশাক শিল্প-কারখানার ওপর। সে ক্ষেত্রে শ্রমজীবীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ যাতায়াত ও নিরাপত্তা বিধানের ওপর নিশ্চয়তা প্রদান করতে বলা হয়েছে মালিকপক্ষকে। নিজ নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠানে মালিকপক্ষ তা যথাসাধ্য করছেন বলেই প্রত্যাশা। কেননা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে ব্যাহত হবে কারখানার উৎপাদন। তবে শঙ্কা দেখা দিয়েছে অন্যত্র, অন্যখানে। সত্যি বলতে কি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লেগেছে এবং তা আরও ভয়ঙ্করভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও, যারা বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রধান ক্রেতা। ফলে ইতোমধ্যে তারা ক্রয়াদেশ কমানোর পাশাপাশি তৈরি পোশাকের দাম কমিয়ে দিয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও বাস্তবতা। ফলে স্বভাবতই দেশীয় পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে নেমে এসেছে শঙ্কা ও হতাশা। করোনা সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে তারা কিভাবে তা মোকাবেলা করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে আসা। ইউরোপ-আমেরিকার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত ইতোমধ্যে হানতে শুরু করেছে দেশের সর্ববৃহৎ রফতানিমুখী খাত পোশাক শিল্পে। বাংলাদেশ থেকে বৈশ্বিক পোশাক আমদানি কমে গেছে ২৩ শতাংশ। ফলে স্বভাবতই পোশাক কারখানার মালিকরা রয়েছেন শঙ্কায়। ইতোপূর্বে ৬৬ দিনের লকডাউনেও কারখানাগুলো ছিল বন্ধ। পরে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফিরে আসতে থাকে ক্রয়াদেশ। ঘুরে দাঁড়াতে থাকে পোশাক খাত। গত কয়েক মাস অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর মিলেছে পোশাক খাতে। করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি পরিলক্ষিত না হলেও জীবন-জীবিকার স্বার্থে বাংলাদেশসহ অনেক দেশই লকডাউন প্রত্যাহারে বাধ্য হয় অথবা সীমিত করে। সে অবস্থায় দেশে দেশে শুরু হয় কর্মচাঞ্চল্য। চলতে শুরু করে অর্থনীতির চাকা। সচল হয় শিল্প-কারখানা, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তরাঁও খুলতে শুরু করে। পুরোদমে না হলেও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি ফিরে আসে। এহেন পরিস্থিতি ব্যাপক আশার সঞ্চারসহ কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে। করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব বিশ্বখ্যাত নামী-দামী ব্র্যান্ড তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত অথবা কমিয়ে দিয়েছিল, তারা আবার ফিরে এসেছে। পুরনো ক্রয়াদেশ দিচ্ছে নতুন করে। এমনকি নতুন কার্যাদেশও দিচ্ছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্থগিত রফতানি আদেশের অন্তত ৮০ শতাংশই ফিরে এসেছে। নতুন ক্রয়াদেশও আসছে নতুন নতুন দেশ থেকে। যেমন- চীন ও তুরস্ক থেকে যেসব ক্রয়াদেশ সরে গেছে করোনার কারণে, তারও একটি বড় অংশ আসছে বাংলাদেশে। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় ঢেউ সব কিছু পুনরায় অনিশ্চিত করে তুলেছে। সেক্ষেত্রে সরকার রফতানিকারকদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণসহ প্রণোদনা তহবিল দিয়ে সহায়তা করতে পারে। এ মুহূর্তে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে পোশাক শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই নয়। বেতন-ভাতা পরিশোধে গড়িমসিও নয় প্রত্যাশিত।
×