ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণশত্রুদের বিরুদ্ধে অবিচল প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

গণশত্রুদের বিরুদ্ধে অবিচল প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ধারাবাহিকভাবে গত ১২ বছরে উন্নয়ন-অগ্রগতির সকল সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ^ সভায় উন্নয়নের রোলমডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ^নন্দিত। ধনী-গরিব, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন অক্লান্ত পরিশ্রমী নেত্রী শেখ হাসিনা। ন্যায়ের পথে অবিচল তিনি। এটাই বিএনপিসহ শক্তিধর গোষ্ঠীর গাত্রদহের কারণ। ভয়ঙ্কর করোনায় আক্রান্ত সারাবিশ^ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের মতো দেশে যে ভ্যাকসিন আসবে, তাও ছিল কল্পনাতীত। অথচ এই ভ্যাকসিন নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছিল জনগণের শত্রুরা। তারা ব্যাঙ্গাত্মকভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। অবশেষে প্রমাণ হয়েছে সেই মিথ্যাচারের, অপপ্রচারের। প্রথমে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এখন সাধারণ মানুষ এটা নিচ্ছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে মানুষের মধ্যে। প্রায়ই নির্বাচনের কথা তোলা হয়। অভিযোগের আঙুল তোলার চেষ্টা হচ্ছে সরকারের দিকে। অথচ কে না জানে, বিএনপির মুখে নির্বাচনের অভিযোগ মানায় না। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সবচেয়ে আজ্ঞাবহ ও বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন ছিল আজিজ কমিশনÑ এটা কী বিএনপি ভুলে গেছে! দলটি ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। মূলত এটাই ছিল একমাত্র পরিকল্পনা। যদি ইতিহাসের পেছনে মুখ ঘুরিয়ে তাকাই তাহলে দেখব, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বাংলার মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে। সাম্প্রদায়িকতাকে কবর দেয়া হয়েছিল ১৯৭১-এ। অথচ এই স্বাধীন দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষাক্ত ছোবল দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর। এরপর দল তৈরি করেন জিয়াউর রহমান। সেনা ছাউনি থেকে গড়ে তোলা দল বিএনপি এদেশে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রক্ষায় কী রকম চেষ্টা চলেছিল তখন এদেশে। আর কী দুর্ভাগ্য আমাদের যে, এখন হুমকি দেয়া হয়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা যাবে না, ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়া হবে। অথচ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি, এই দেশে ওদের দুঃসাহস কতো! দেশের অগ্রগতির ট্রেন মহাসড়কে। কিন্তু গোষ্ঠী, কিছু ব্যক্তি, কিছু কীট, কিছু দুর্নীতিবাজ দেশের পা টেনে নিচে নামাতে চাইছে। সারাবিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। কিন্তু দেশের ভেতর কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী রয়েছে, কীট রয়েছে, কিছু দুর্নীতিবাজ, মানব পাচারকারী রয়েছে, ষড়যন্ত্রকারী কিছু ধর্মব্যবসায়ী দলও রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার অপচেষ্টায় আলজাজিরার সাম্প্রতিক তথাকথিত সংবাদ প্রচার ছিল অসৎ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা যে সবৈব মিথ্যা অপপ্রচার তা প্রমাণ হয়েছে। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক ৪০১ ধারার বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। মূলত তাদের পরিকল্পিত অপপ্রচারের ইস্যুটি এখন মানুষের কাছেও পরিষ্কার। এর পেছনে কারা কলকাঠি নাড়াচ্ছে তাও অনুমান করা গেছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে অসাধারণ জনপ্রিয়তায় সরকার গঠন করেন। একইভাবে বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় গণরায় দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চলমান অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখে। আজ সারাবিশে^ বিস্ময়কর বিষয় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনা সরকারের অর্জনকে নানাভাবে দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদেশী গণমাধ্যম ছাড়াও সরকারের সমালোচনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়িয়ে জড়িয়ে রয়েছে ঘরের কিছু লোক। তারা দলের বিভিন্ন তৃণমূলে বিভিন্ন পদ দখল করে আছে। এসব বিতর্কিত লোকের বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কে তারা, কী তাদের পরিচয়, তাদের চরিত্রটা কী? তাদের মুখোশ প্রকাশ করার সময় এখনই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতু, চারলেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সঙ্কট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুত প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, পদ্মা সেতু নির্মাণ, সমুদ্র সীমানা বিজয়, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ফ্লাইওভার নির্মাণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, বয়স্ক ভাতা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যকর, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও কালভার্ট নির্মাণ, মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষিতে সফলতা, জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, এশিয়া হাইওয়ে রোড প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, হাতিরঝিল প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, দারিদ্র্যের হার নিম্ন পর্যায়ে রাখা, যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার, বিনামূল্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, গরিব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্য সেবাকেন্দ্র স্থাপন, বিভিন্ন জেলায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, শিল্প পার্ক নির্মাণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির চেষ্টা, বৈদেশিক মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণ রিজার্ভ বৃদ্ধি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী প্রদান ব্যবস্থা, বিধবা ভাতা প্রদানসহ অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বড় অবদান। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখি খুনীরা নানারকম চক্রান্ত করেছিল। তারা চক্রান্ত করেছে দেশে-বিদেশে বসে। বংশপরম্পরায় তারা এই চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে এবং রায় কার্যকর হতে শুরু হলে এদের রক্ষা করতে বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাবানরা শেখ হাসিনার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। বিভিন্ন দেশের নেতা, মন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছিলেন। আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফঁসি দিচ্ছিলাম, তখন পাকিস্তানের সরকার ও আলজাজিরা নির্লজ্জের মতো এর বিরোধিতা করেছে। মাঠে, ঘাটে এমনকি সংসদে শোক প্রস্তাব এনেছে। সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ সরকারের। এটা আমাদের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপ ছিল। সেসব এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা এবং বিএনপি প্রতিষ্ঠার একটা বিশেষ ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানো। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাঙালী জাতি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠত, বিশ্বে মর্যাদা পেত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গঠন করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন, তখনই ঘটানো হয় এক নৃশংস মর্মান্তিক ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলার আকাশ-বাতাস ও মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা, যা কোনদিন হয়নি, হবেও না। বাংলার মানুষকে বোকা বানানোর সবরকম অপচেষ্টা নস্যাত করে দেবে মানুষ। দিয়েছেও। কারণ, জাতি পেয়েছে সত্যিকারের একজন জননেত্রী। লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
×