ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

যত দোষ নন্দ ঘোষ

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

যত দোষ নন্দ ঘোষ

চীনের সিংজিয়ান প্রদেশে উইঘুর মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন নতুন কোন বিষয় নয়। নানা কারণে অবশ্য বিশ্ব সম্প্রদায় এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখাটাই শ্রেয় বলে মনে করছে। লাখে লাখে উইঘুরবাসীকে বন্দীশালায় আটকে রাখা, উইঘুর নারীদের বাধ্যতামূলক বন্ধ্যাত্মকরণ, তাদের ধর্মচর্চার অধিকার হরণ ইত্যাদি কোনকিছুই তেমন কারও নজর কাড়েনি। মাঝে-সাঝে দেশী-বিদেশী দু-একটি প্রচার মাধ্যমে টুকটাক খবর আর এখানে-সেখানে দু-একটা নামকাওয়াস্তে বিবৃতি-প্রতিবাদেই সীমিত ছিল বিশ্ব সম্প্রদায়ের উইঘুর সংক্রান্ত মানবাধিকার চর্চা। সম্প্রতি বিবিসি উইঘুর নির্যাতনের কুৎসিত একটি দিক উদঘাটন করেছে। তাদের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে উইঘুর নারীরা চীনাদের হাতে গণধর্ষণেরও শিকার হচ্ছেন। ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার সে দেশের পার্লামেন্টে এ কারণে চীনের বিরুদ্ধে একটি আইন পাসেরও উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি হংকং-এর অধিবাসীদের ব্রিটিশ ন্যাশনালস ওভারসিজ স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। এই স্ট্যাটাসের সুযোগ নিয়ে তারা এখন ব্রিটেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরই মধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি হংকংবাসী তা করেছেনও। হংকং-এ কিন্ডারগার্টেনের শিশুদেরও বাধ্যতামূলকভাবে শেখানো হচ্ছে চীনের প্রতি আনুগত্য। সেই উদ্বেগের জায়গা থেকেই ব্রিটেনের সরকারী উদ্যোগ আর বিবিসির প্রতিবেদন। ফলাফল- ‘চীনে নিষিদ্ধ বিবিসি’। ॥ দুই ॥ চীনা সেনা মুখপাত্র সম্প্রতি দাবি করেছে, লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির সব দায়-দায়িত্ব নাকি ভারতের। ক’দিন আগেও করোনাকালেও চীন এবং ভারতীয় সেনাদের সরগরম সশস্ত্র উপস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল লাদাখ অঞ্চলের তুষারাবৃত শীতল পর্বতশৃঙ্গগুলো। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ ছিলাম কখন গলবে দু’দেশের সম্পর্কের বরফ। ঘরের কাছে আরেক রাউন্ড যুদ্ধের মহড়ায় আগ্রহ ছিল না আমাদের কারও, কোনকালেই, আর এই করোনাকালে তো আরও নয়। গলতে শুরুও করেছিল বরফ। টিভির পর্দায় আমরা দেখছিলাম ভারতীয় আর চীনা সেনাদের শান্তিকালীন অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সাম্প্রতিক ছবিগুলো। এর মধ্যেই হঠাৎ এই বিবৃতি। ঘটনার সূত্রপাত এই করোনাকালেই। পঞ্চাশের দশকে চীন-ভারত সীমান্তযুদ্ধের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে একটি বোঝাপরা আছে যে, তাদের সেনারা এই সীমান্তে কোনরকম অস্ত্রশস্ত্র বহন করবে না। গোলাবারুদের প্রয়োজনও পড়েনি। লাঠির মাথায় পেরেক বসিয়ে তা নিয়ে চীনাদের সহসা এ্যামবুশ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী টহল দলের ওপর। হতাহত হন বেশ ক’জন ভারতীয় সেনা। সেই থেকে শুরু সাম্প্রতিক চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনাটির। এখন যখন দু’দেশের সেনারা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন তখন চীনাদের সরকারী ভাষ্যে দায় সব ভারতীয়দেরই ঘাড়ে। ॥ তিন ॥ ক’দিন আগে চীনাদের একটি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনায় নড়েচড়ে বসেছিলাম, বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং ভারতের বৈজ্ঞানিক কমিউনিটি। চীনের একটি নামজাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণার দাবি, ২০২০-এর জুন-জুলাই মাসে প্রচণ্ড দাবদাহে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যবর্তী কিছু অঞ্চলে পানি নিয়ে মারামারি বাধে মানুষ এবং বানরের। আর তখনই বানর থেকে মানুষে ছড়ায় সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি এবং তারপর নাকি বাংলাদেশ আর ভারত হয়ে ভাইরাসটি যাত্রা করে চীন দেশে! গাঁজাখুরি এই গল্পে বাংলাদেশ কোত্থেকে আসল এবং পাকিস্তান কেন বাদ পড়ল সে রহস্য আর ভেদ করা হয়ে ওঠেনি। সে সময়ই এ নিয়ে লিখেছিলাম এবং সিনিয়র সহ-গবেষক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবরসহ লিখেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের আরও বিজ্ঞানীরাও। ফলশ্রুতিতে চীনারা তাদের সেই প্রকাশনাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ॥ চার ॥ কোভিড নিয়ে চীনের সাম্প্রতিকতম ঘোষণাটি আরও চমকপ্রদ। এবার আমরা বাদ। এবারের অঙ্গুলি নির্দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি উহানে এসেছিল আমদানি করা খাবারের মাধ্যমে। এটি ছড়িয়েছিল উহান থেকেই, তবে এর উৎপত্তি মোটেও উহানে নয়। ভাইরাসটির উৎপত্তি নাকি খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন ল্যাবে। বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ারের জন্য তৈরি করা ভাইরাস। দুর্ঘটনাক্রমে মার্কিন ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়ে উহান হয়ে এখন গোটা মানবজাতির মাথার ব্যথা। ॥ পাঁচ ॥ ছোটবেলায় প্রায়ই শুনতাম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যাই করুক না কেন দোষ শেষমেষ নন্দ ঘোষেরই হবে। করোনাকালের সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়তে বাঙালীর গভীর জীবনবোধপ্রসূত এই আপত্য বচনটি বারবার মনে পড়ছে। লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ
×