ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজ আলুর দাম কমেছে, বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে

প্রকাশিত: ১৮:০২, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

পেঁয়াজ আলুর দাম কমেছে, বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার নিত্যপণ্যের বাজারে ভোজ্যতেল ও চালের দাম আরেকদফা বেড়েছে। সেই সাথে বাজারে কমেছে পেঁয়াজ ও নতুন আলুর দাম। শীতকালিন সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় সবজির দামও নিম্নমুখি। জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম। প্রতিকেজিতে ৩ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৩-৫৮ টাকায়। দাম বেড়ে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১২০-১২৫ এবং খোলা সয়াবিন লিটারে ৪ টাকা বেড়ে ১০৫-১০৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ডাল, চিনি, ডিম ও আটার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে দেশী মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না। পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। গরু, খাসি মাংস ও ব্রয়লার মুরগি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ও মিরপুর-১ সিটি কর্পোরেশন মার্কেট ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চাল ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা অস্বস্তিতে রয়েছেন। গত এক মাস ধওে উর্ধমুখী চাল ও ভোজ্যতেলের দাম। সহসা দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অথচ বাজারে চাল ও তেলের কোন সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ চালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে ইতোমধ্যে দেড় লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। এসব চালের প্রথম চাল দেশে আনা হয়েছে। এছাড়া আমনের ফলন ভাল হওয়ায় চাল নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন কোন কারণ নেই। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে বাজারে চাল ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিকেজি সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৫ এবং মোটা স্বর্না ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫০ টাকায়। মোটা চাল সব সময় ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রির একটি চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই মোটা চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ফার্মগেট বাজারের চাল বিক্রেতা বজলুর রহমান বলেন, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল এবং মোটা চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। মোকাম ও পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আর এ কারণে ক্রেতাদের বেশি দাম দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। গত একমাসে প্রতিলিটারে প্রায় ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে তেলের দাম। সয়াবিন, পামওয়েল ও পামওয়েল সুপার সব ধরনের তেলের দাম বাড়তি। প্রতিলিটার খোলা পামওয়েল ৯৩-৯৫ এবং পামওয়েল সুপার ৯৬-৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। মোহাম্মদপুর টাউনর হল মার্কেট থেকে ভোজ্যতেল কিনছিলেন বাঁশবাড়ির বাসিন্দা আকতার হোসেন। তিনি জানান, তেলের দাম সপ্তায় সপ্তায় বাড়ছে, দেখার কেউ নেই। এভাবে বাড়তে থাকলে দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা এখন ভাবনার বিষয়। তিনি বলেন, দ্রুত তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এদিকে, নতুন উঠা মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে ঊর্ধমুখী দাম কমতে শুরু করেছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের পাল্লা এখন ২০০ টাকা, কেজি ৪০ টাকা। ঢাকার কাওরান বাজারে পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৬০ টাকা আর পুরনো পেঁয়াজ ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। ব্যবসায়ীরা জানান, গত তিন দিন ধরে ফরিদপুর অঞ্চলের নতুন মওসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। মূলত সে কারণেই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে কেজিতে ২০ টাকার মত। নতুন আলুর দাম কমে এলেও পুরনো আলু এখনও আগের মতই ৪০ থেকে ৪৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া নতুন আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আরেক দফা বেড়ে গেছে আমদানি করা আদা ও রসুনের দাম। গত এক সপ্তাহে চীনা রসুনের দাম কেজিতে ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে ১০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। চীনা আদার দাম এক সপ্তাহে ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। তবে দেশি নতুন আদা প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে মিলছে। বাজারে দেশি টমেটোর সরবরাহ বাড়তে থাকায় আমদানি করা ভারতীয় টমেটোর দাম কমে এসেছে। আধাপাকা দেশি টমেটো প্রতিকেজি ৯০ টাকায় আর ভারতীয় টমেটো ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। প্রতি কেজি শসা ও গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকায়; সিম, বেগুন মানভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়, মুলা ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। ডিমের দাম অপরিবর্তিত। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, হাঁসের ডিম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৬০ টাকা, ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সোনালি বা কক ১৮০ ও ব্রয়লার মুরগি কেজি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, বকরির মাংস ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকায়। দেশী মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাগুর মাছ ১২০ থেকে ৬০০ টাকা, মৃগেল ১৭০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাস ১২০ থেকে ২০০ টাকা, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ও কাতল মাছ ১৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×