ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বৃথা গেল রাজশাহীর শান্তর শতক

ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয় বরিশালের

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয় বরিশালের

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে এতদিন কোন শতকের দেখা মিলছিল না। যেদিন শতক হলো এক ম্যাচেই দুই শতকের দেখা মিলে গেল। প্রথম শতক করেন রাজশাহীর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫৫ বলে ৪ চার ও ১১ ছক্কায় ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় শতক করেন বরিশালের পারভেজ হোসেন ইমন। ৪২ বলে ৯ চার ও ৭ ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস উপহার দেন। টি২০তে দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম শতক করেন ইমন। ইমনের শতকের কাছে হারও মানল শান্তর শতক। শেষ পর্যন্ত ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে যে রাজশাহীর বিরুদ্ধে ৮ উইকেটে জিতে গেল বরিশাল। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বরিশালকে জয় এনে দেয়ায় ম্যাচের নায়কও হন ইমন। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার খেলতে নামার আগে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ও ফরচুন বরিশাল পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকে। দুই দলের পয়েন্ট সমান থাকে। যে দল জিতবে তাদের অবস্থান ভাল হবে। হারা দলের প্লে-অফে খেলা কঠিন হয়ে পড়বে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসে বড় স্কোরের ম্যাচে বরিশালই বাজিমাত করে। টস জিতে বরিশাল আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে শান্তর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ২২০ রান করে রাজশাহী। টুর্নামেন্টে প্রথম কোন দল ২০০ রান বা তার বেশি করতে পারে। বরিশালের কামরুল ইসলাম রাব্বি হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট শিকার করে নেন। এত বড় স্কোর! বরিশালের হারই শুরুতে দেখা হয়। কিন্তু পারভেজ হোসেন ইমনের টর্নেডো ব্যাটিংয়ে রাজশাহীকে হারিয়ে দেন। তাও আবার ১১ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় বরিশাল। ২ উইকেট হারিয়ে ২২১ রান করে জিতে। এই দুই দলের লড়াই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে জমজমাট হয়। যেখানে দলগুলো রানই করতে পারছিল না সেখানে এক ম্যাচে দুই শতকসহ ৪৪১ রানের দেখা মিলে যায়। ম্যাচটি জিতে বরিশাল পয়েন্ট তালিকায় পঞ্চম স্থানেই আছে। সমান ৪ পয়েন্ট আছে রাজশাহীরও। তবে রানরেটে রাজশাহীর চেয়ে পিছিয়ে আছে বরিশাল। রাজশাহীর ইনিংসের পর ধরেই নেয়া হয়েছিল বরিশাল হেরে যেতে পারে। কিন্তু ইমন যে ব্যাট হাতে নজর কাড়তে বসে আছেন। ক্যারিয়ারের প্রথম টি২০ শতক করলেন। সেটিও আবার দ্রুততম। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল ও ইমন মিলে দলকে জেতানোর পথে এগিয়ে যান। দুইজন মিলে ১১৭ রানের জুটি গড়েন। দলের ১৬১ রান হতেই তামিম ৩৭ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩ রান করে রান আউট হয়ে গেলে আবার হতাশা দেখা দেয়। কিন্তু এরপর আর বরিশালের কোন উইকেট তো যায়নি, এমনকি ইমন দ্রুততম শতকই করে ফেলেন। এরআগে ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে তামিম যে ৫০ বলে দ্রুততম শতক করেছিলেন সেই রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন ইমন। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে ৪ রান লাগতো বরিশালের। ইমনের শতক পেতেও দরকার ছিল ৪ রান। অফস্টাম্পের বাইরের বল কভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন ইমন। আফিফ হোসেন ধ্রুবকে (২৬*) নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ইমন। রাজশাহীর ইনিংসে আসলে শান্তর ব্যাটিংটাই সব মুগ্ধ হয়ে দেখেন। আনিসুল ইসলাম ইমন (৬৯) ভাল সঙ্গ দেন শান্তকে। দুইজন মিলে ওপেনিংয়ে ১৩১ রানের জুটি গড়েন। যা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানের জুটি। আনিসুল ইমন আউটের পর আর কোন ব্যাটসম্যানই নজর কাড়তে পারেননি। তবে শান্ত ঠিকই দ্যুতি ছড়াতে থাকেন। শুরুতে একটু ধীরে ব্যাটিং করেন শান্ত। তবে যখন ঝড় শুরু করেন তা চলতেই থাকে। ছক্কার বৃষ্টি ঝরান শান্ত। ৩১ বলে অর্ধশতক করার পর ৫২ বলেই শতক করে ফেলেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি২০ শতক করেন। বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালের তিন শতকের পর দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি২০তে একাধিক শতক করেন শান্ত। পেসার তাসকিন আহমেদের লেন্থ বল লং অফ দিয়ে সীমানায় পাঠিয়ে ৯৬ থেকে ১০২ রানে পৌঁছান শান্ত। শতকে পোঁছাতে শান্ত হাঁকান ১০ ছক্কা। চার মারেন ৪টি। দল যখন ২১০ রানে যায়, শেষ ওভারের দ্বিতীয় বল হয় তখন কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে আউট হয়ে যান শান্ত। ততক্ষণে ১০৯ রান করে ফেলেন। রেকর্ড ১১ ছক্কা হাঁকান শান্ত। টি২০তে বাংলাদেশের হয়ে তামিম ইকবালের সর্বোচ্চ ১১ ছক্কার রেকর্ড আছে। শান্ত তাতে ভাগ বসান। শতকের পর শান্ত এক হাতে উঁচিয়ে ধরেন ব্যাট। আরেক হাতে হেলমেট। এরপর হাত মুঠো করে ছোড়েন আকাশের দিকে। শেষে সাজঘরের দিকে তাকিয়ে দু’হাতের পেশি ফুলিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন নিজের শক্তিমত্তা। তবে শেষে রাব্বি শুধু শান্তকেই নয়, শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকও করেন। ওভারে আরেকটি উইকেটও নেন। নুরুল হাসান সোহান, শান্ত, ফরহাদ রেজার পর ওভারের পঞ্চম বলে সাইফউদ্দিনের উইকেটও তুলে নেন তিনি। আলো ছড়ান। তাতে রান যে আরও বাড়তে পারত তা বাড়েনি। এরপরও ২২০ রান কী কম! ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কাছে কমই হলো। ইমন ঝড়ে যে জিতল বরিশালই। স্কোর ॥ রাজশাহী- ২২০/৭; ২০ ওভার (শান্ত ১০৯, ইমন ৬৯, রনি ১৮, মেহেদী ০, সোহান ১২, সাইফউদ্দিন ৪, ফরহাদ ০, রাব্বি ৬*, মুকিদুল ০*; কামরুল রাব্বি ৪/৪৯)। বরিশাল- ২২১/২; ১৮.১ ওভার (সাইফ ২৭, তামিম ৫৩, ইমন ১০০*, আফিফ ২৬*; সাইফউদ্দিন ১/৪০)। ফল ॥ বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ পারভেজ হোসেন ইমন (বরিশাল)।
×