ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় ধস

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১ ডিসেম্বর ২০২০

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় ধস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে বর্তমানে বিদেশে যাওয়া ও আসা দুটোই চলছে সীমিত আকারে। আর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়াও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশীরাও খুব একটা আসছেন না। এর ফলে দেশের মানি চেঞ্জারগুলো পড়েছে মহাসঙ্কটে। ফলে বন্ধের শঙ্কায় বহু প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেকে তাই বিমান টিকেট, পুরনো নোট ও পয়সা, পুরনো ডাকটিকেট বিক্রিসহ অন্যান্য ব্যবসায় নেমেছেন। রাজধানীর গুলশান শপিং সেন্টারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় (মানি চেঞ্জার) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নিয়ম রক্ষার্থে দোকানের তালা খুলেই কর্মীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন অন্যত্র। গত ৮ বছরেই এতটা খারাপ সময় আর আসেনি গুলশানে মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসায়ী শামিম হোসেনের। বলছিলেন, করোনার আগের দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার ডলারের বেচাকেনা এখন নেমেছে প্রায় শূন্যে। রাজধানীর গুলশান শপিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় হাবিব মানি চেঞ্জারের কর্মী মাহমুদ হাসান ও হাসিবুর রহমান জানান, এমন দিন গেছে, সারা দিনেও কেউ আসেনি। আবার এলেও খবর নিয়ে চলে যায়। গুলশানের এসএইচ মানি এক্সচেঞ্জের কর্ণধার শহিদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘২২ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এবারের মতো সঙ্কটে আগে কখনও পড়তে হয়নি।’ শুধু গুলশান নয়, দিলকুশার যেই রাস্তার নামই মানুষের মুখে মুখে ডলারের গলি সেখানেও ক্রেতার দেখা নেই। বিক্রেতাদের সময় কাটে গল্পে-আড্ডায়। লোকসান বাড়তে থাকায় বেশিরভাগেরই এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায়। অবশ্য চাহিদা কমলেও বাজারে কমছে না বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য। প্রতি ডলারের জন্য গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ৮৬ টাকার বেশি। মানি চেঞ্জার এ্যাসোসিয়েশনের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে দুই পক্ষের মতবিরোধে। সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন মোস্তফা খান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু অবৈধ মানি চেঞ্জারের কারণে করোনার আগে থেকেই আমরা খারাপ অবস্থায় ছিলাম। করোনা এসে ব্যবসার পুরোটা শেষ করে দিয়েছে। কেউ সব কর্মীকে বাদ দিয়ে কোনমতে প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চেষ্টা করছেন। আবার কেউবা অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছেন। আমিও এখন মুদ্রা সংগ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করছি। সরকার এত প্রণোদনা দিল, কিন্তু আমাদের জন্য কিছু দেয়নি। অথচ পর্যটন, চিকিৎসা, বিদেশে যাতায়াতে আমাদের বড় ভূমিকা আছে।’ জানা যায়, ১৯৯৭ সাল থেকে দেশে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশী মুদ্রা লেনদেনের পাশাপাশি পাসপোর্ট এনডোর্সও করতে পারে। একসময় দেশে ৬৩৬টি মানি চেঞ্জার নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করত। তবে নিবন্ধনের শর্ত না মানায় অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে দেশে ২৩৪টি মানি চেঞ্জার নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করছে। নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে বছরে ৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ মুদ্রা কেনাবেচা করতে হয় মানি চেঞ্জারদের। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন ডিপার্টমেন্ট এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন বা দৈনন্দিন ক্রয়-বিক্রয় অনলাইনে প্রতিবেদন দাখিল করলেই হবে। আগের মতো আর হার্ডকপি দাখিল করতে হবে না বাংলাদেশ ব্যাংকে। এর আগে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেয়া হতো না মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এবছর করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা কম হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের জন্য এ সুবিধা বহাল থাকবে বলেও জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
×