ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহব্বতনগর গ্রাম ও মজিদ

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৭ নভেম্বর ২০২০

মহব্বতনগর গ্রাম ও মজিদ

মহব্বতনগর বাংলা সাহিত্যে একটি পরিচিত গ্রাম। গ্রামটি পরিচিতি লাভ করেছে মজিদের মাধ্যমে। মজিদের সম্মান, অস্তিত্ব-প্রতিষ্ঠা, প্রতিপত্তি সবকিছুই অর্জিত হয়েছে এই গ্রামকে ঘিরে। মহব্বতনগর গ্রাম ও মজিদ শব্দদ্বয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র (১৯২২-১৯৭১) অমর সৃষ্টি ‘লালসালু’ (১৯৪৮) উপন্যাসের। মজিদ যে এলাকার অধিবাসী সেখানে ‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের অগাছা বেশি।’ শস্যহীন জনবহুল অঞ্চল থেকে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মজিদ গারো পাহাড়ে অবস্থান করে। কিন্তু সেখানেও সে সুবিধা করতে পারেনি। নিরস্তিত্ব ও উদ্বাস্তু মজিদকে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে নেতিবাচক সত্তা অবলম্বন করতে হয়। গ্রামের মানুষের কুসংস্কার-বিশ^াস ও ধর্মভীতিকে পুঁজি করে শস্যবহুল মহব্বতনগর গ্রামে সে নিজের ঠিকানা খুঁজে পায়। মহব্বতনগর গ্রাম ও মজিদ যেন একে অন্যের পরিপূরক। নাটকীয়ভাবেই মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের প্রবেশ। অবশ্য গ্রামের লোকেরা নাটকেরই পক্ষপাতী। সাদামাটা বিষয়ের চেয়ে যে কোন চমকপ্রদ ঘটনাকেই তারা সহজে গ্রহণ করে। মজিদের কোটরাগত ক্ষুদ্র চোখে আগুন এবং ধীরস্থিরভাব। সে জানে সামান্য একটু ভুল হলেই তার সকল ছল-চাতুরি ধরা পড়বে এবং সেও কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে। তাই কৌশলী ও তীক্ষ্নধী মজিদ মহব্বতনগরের উপকণ্ঠে, বাঁশঝাড়ের ওধারে পরিত্যক্ত পুকুরের পাশে টালখাওয়া ভাঙ্গা এক প্রাচীন কবরকে নির্দেশ করে প্রথমেই খালেক ব্যাপারি, মাতব্বর রেহান আলী, জোয়ান মদ্দ কালু, মতি, অশীতিপর বৃদ্ধ সলেমনের বাপও অন্যদের চিৎকার করে গালাগাল দিয়ে বলে- ‘আপনারা জাহেল, বেএলেম, আনপাড়হ্। মোদাচ্ছের পিরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলি রাখছেন?’ মজিদ জানে, দুনিয়ায় সচ্ছলভাবে দু-বেলা খেয়ে বাঁচবার জন্য যে-খেলা সে খেলতে যাচ্ছে সে-খেলা সাংঘাতিক। তার মনে সন্দেহ ও ভয় উভয়ই ছিল। কিন্তু জমায়াতের সকলের অধোবদন ও লজ্জিত চেহারা দেখে তার ভয় ও সন্দেহ নিমিষেই দূর হয়। এরপর মজিদকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মুহূর্তের মধ্যেই জঙ্গল সাফ হয়ে মাছের পিঠের মতো প্রাচীন কবর ঝালরওয়ালা সালু দ্বারা আবৃত হলো, আগরবাতি গন্ধ ছড়ালো এবং মোমবাতি জ¦লতে লাগল রাতদিন। এভাবেই মহব্বতনগর গ্রামে মজিদ আস্তানা গাড়ে। নিজের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মজিদ এতটাই সতর্ক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলো যে, কেউ তার পথে বিন্দুমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়ালে সে ঠাণ্ডা মাথায় সূক্ষ্মভাবে তা প্রতিহত করতো। তাহের-কাদেরের বাপ, আক্কাস মিঞা, খালেক ব্যাপারির প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবির পরিণতি তার জ¦লন্ত দৃষ্টান্ত। মজিদের প্রতিহিংসার প্রথম শিকার তাহের-কাদেরের বাপ। তাহের-কাদেরের বাবা ও মা-এর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ প্রতিনিয়ত লেগেই থাকে। ইদানীং বুড়ি (তাহের-কাদেরের মা) ঝগড়ায় পেরে উঠতে না পেরে ছেলের জন্ম নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে; যা বুড়োর আত্মায় গিয়ে খচ করে ধরে। খবরটি মজিদের কান পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায় এবং এ ব্যাপারে সে বুড়োকে জিজ্ঞেস করে। একটা বিষয়ে বুড়ো (তাহের-কাদেরের বাপ) নিশ্চিত যে,অন্তরের শক্তি দিয়ে মজিদ একথা জানতে পারেনি। পরে সে বুঝতে পারে, হাসুনির মা-র (তাহের-কাদেরের বোন) মাধ্যমে মজিদ একথা জানতে পেরেছে। তাই প্রাণের আশ মিটিয়ে মেয়েকে সে মারে। এ খবর খুব দ্রুত মজিদের কানে পৌঁছে। হাসুনির মাকে প্রহার করা মানে পরোক্ষভাবে মজিদকেই অপমান করা। তাই অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঐদিন অপরাহ্ণেই খালেক ব্যাপারিকে সাথে নিয়ে সে বুড়োর বিচারের আয়োজন করে এবং কৌশলে বিচারের রায় দেয় এই বলে- ‘তুমি কিংবা তোমার বিবি গুনাহ্ কইরা থাকলে খোদা বিচার করবেন। কিন্তু তুমি তোমার মাইয়ার কাছে মাফ চাইবা, তারে ঘরে নিয়া যত্নে রাখবা। আর মাজারে সিন্নি দিবা পাঁচ পয়সার।’ একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, মজিদ কিন্তু তার নিজের কাছে মাফ দাবি করেনি, কারণ মেয়ের কাছে মাফ চাইলেই পরোক্ষভাবে তার কাছে মাফ চাওয়া হয়। বুড়ো এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সম্পূর্ণ নির্বিকার হয়ে যায় এবং দু-দিন পরে এক ঝড়ো সন্ধ্যায় নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এভাবেই মজিদ তার অপমানের প্রতিশোধ নেয়। শীতকাল আমাদের দেশে ওয়াজ-মাহফিলের উপযুক্ত সময়। কারণ এ সময়ে ফসল কাটা শেষে গৃহস্থদের গোলা পরিপূর্ণ থাকে ধানে এবং জমিও ফাকা থাকে। এ সময়ে গ্রামে পিরদের সফর শুরু হয় এবং খাতির-যত্নও ভালো হয়। এমনি পরিস্থিতিতে আউয়ালপুর গ্রামে ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট মতলুব খাঁর বাড়িতে এক জাদরেল পিরের আগমন ঘটে। কথিত আছে, ঐ পিরসাহেব মরা মানুষকে জীবিত করতে পারেন; এমনকি প্রয়োজনে সূর্যকে পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন। মজিদ এতে বিচলিত ও শঙ্কিত হয়ে উঠে, কারণ ইদানীং সে দেখতে পায়, মতিগঞ্জের সড়ক দিয়ে দলে দলে লোক উত্তর দিকে আউয়ালপুরে যায় পিরসাহেবের সান্নিধ্য পেতে। উপায়ন্তর না দেখে এক পড়ন্ত বিকেলে মজিদও আউয়ালপুরে গিয়ে হাজির। পিরসাহেবকে দেখে তার মনে হয়েছে বিশাল সূর্যোদয়ের নিকট সে যেন মিটমিট করে জ¦লা এক প্রদীপ। কিন্তু সে আশাহত হয়নি, সুযোগের সন্ধানে থাকে। অবশেষে সেই সুযোগও মেলে। ওয়াজের এক ফাঁকে পির সাহেবের নির্দেশে শুরু হওয়া জোহরের নামাজের সময়টাকে সে উপযুক্ত ভাবে। শত শত নামাজরত মানুষের নীরবতার মধ্যে খ্যাপা কুকুরের তীক্ষèতায় আর্তনাদ করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে এবং বলে উঠে- ‘যতসব শয়তানি, বে’দাতি কাজকারবার। খোদার সঙ্গে মশকরা।’ মজিদ ভক্তদের বোঝাতে থাকেন আছরের সময় জোহরের নামাজ পড়িয়ে পির সাহেব গুনাহের কাজ করেছেন, পরে তার অনুসারীদের নিয়ে মহব্বতনগর গ্রামে ফিরে আসে। এভাবে মজিদ আউয়ালপুরের পিরকে জব্দ করতে চেয়েছিল। মহব্বতনগরে যাকে সাথে নিয়ে মজিদ পথ চলেছে এবং যার সহযোগিতা সে সবচেয়ে বেশি পেয়েছে তিনি হলেন খালেক ব্যাপারি। নিজ স্বার্থ রক্ষায় মজিদ সেই খালেক ব্যাপারিকেও বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়নি। খালেক ব্যাপারির নিঃসন্তান স্ত্রী আমেনা বিবি সন্তান কামনায় অধীর হয়ে মজিদের নির্দেশ অমান্য করে ব্যাপারিকে রাজি করিয়ে তার সতীনের ভাই বোকা কিছিমের ধলা মিঞাকে দিয়ে আউয়ালপুরের পির সাহেবের কাছ থেকে পানিপড়া আনতে বলে, যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়। কিন্তু ধলা মিঞা পথিমধ্যে মস্ত তেঁতুল গাছের ভয় এবং পির সাহেবের দজ্জাল সাঙ্গপাঙ্গদের ভয়ে ভীত হয়ে আওয়ালপুরের পিরের কাছে না গিয়ে মজিদের নিকট হাজির হয় পানিপড়ার জন্য। মজিদ ঠাণ্ডা মাথায় শীতল চোখে খালেক ব্যাপারিকে বলে, তার আফসোস ব্যাপারি তার চেয়ে ঠগ-পিরকে বেশি বিশ্বাস করে। সে আরও বলে- ‘পেটে বেড়ি পড়ে বইলাই তো স্ত্রীলোকের সন্তানাদি হয় না। কারো পড়ে সাত প্যাঁচ, কারো চৌদ্দ। একুশ বেড়িও দেখছি একটা। তয় সাতের উপরে হইলে ছাড়ানো যায় না। আমার বিবির তো চৌদ্দ প্যাঁচ।’ এর সমাধানও জানিয়ে সে বলে, আমেনা বিবিকে একদিন সেহেরি না খেয়ে কারো সঙ্গে কথা না বলে সারাদিন শুদ্ধচিত্তে কোরান শরিফ পড়তে হবে এবং সন্ধ্যায় ইফতার না করে মজিদের দেওয়া পড়াপানি পান করে মাজার শরিফের চারপাশে সাতবার পাক দিতে হবে। এক শুক্রবারে আমেনা বিবি মজিদের কথামতো সকল কাজ সমাধা করে মাজারে সাত পাক দিতে গিয়ে তিন পাকের অর্ধেকেই মূর্ছা যায়। এটাকেই অবলম্বন করে সে ব্যাপারিকে দিয়ে আমেনার তালাকের ব্যবস্থা করে এবং তাহের-কাদেরের বাপের প্রসঙ্গ টেনে বলে -‘পাক-দিল আর গুনাগার-দিল যদি এক সুতায় বাঁধা থাকে আর কেউ যদি গুনাগার-দিলের শাস্তি দিবার চায় তখন পাক-দিলই শাস্তি পায়। তহুর বাপের দিল সাফ আছিল, তাই শাস্তি পাইল হেই।’ মাত্র তিনদিন পর সন্তান-কামনায় অধীর আমেনা বিবিকে সকল কামনা-বাসনা বিবর্জিত হয়ে স্তব্ধ, বজ্রাহত মন নিয়ে দীর্ঘ সংসার-ধর্ম একেবারের জন্য ত্যাগ করে পালকিতে চড়ে বাপের বাড়ি চলে যেতে হয়। সহজ-সরল আমেনা বিবির এই পরিণতি মজিদের নিষ্ঠুর মানসিকতারই পরিচায়ক। মোদাব্বের মিঞার সন্তান আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে মজিদ ভালোভাবে নেয়নি। শহরে কিছুটা লেখাপড়া শেখা আক্কাস ইদানীং গ্রামের মানুষ থেকে চাঁদা তুলে জোরালো গোছের একটি আবেদনপত্র লিখিয়ে সরকারের কাছে স্কুল তৈরির সাহায্যও চেয়েছে। আক্কাসের এই আয়োজন দ্রুত নস্যাৎ করার জন্য মজিদ খালেক ব্যাপারিসহ গ্রামের সকলকে নিয়ে বৈঠক ডাকে এবং কৌশলে ঠাণ্ডা মাথায় সকলের সামনে হঠাৎ বলে উঠে, ‘তোমার দাড়ি কই মিঞা?’ ... ‘তুমি না মুসলমানের ছেলে-দাড়ি কই তোমার?’ সহজ জিজ্ঞাসা কিন্তু এরমধ্যেই লুকিয়ে আছে প্রবল প্রতিশোধস্পৃহা। গ্রামবাসীকে ইংরেজিশিক্ষাদানেরআশায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী আক্কাস সকলের দিকে তাকিয়ে দেখল সে ছাড়া আর কেউই দাড়িহীন নয়। কাজেই কথা বলতে গিয়ে সে চুপ হয়ে যায়। আক্কাস যে দিনকালের কথা বলেছিল, মজিদকে তা লুফে নিয়ে বলতে শোনা যায়, দিনকাল বড়ই খারাপ, মানুষের মতিগতির ঠিক নেই, খোদার প্রতি মন নেই। তাই সে বলে-‘বড় অফসোসের কথা,এমন গেরামে একটা পাকা মসজিদ নাই। খোদার মর্জি এইবার আমাগো ভালো ধান-চাইল হইছে, সকলের হাতেই দুইচারটা পয়সা হইছে। এমন শুভ কাম আর ফেলাইয়া রাখা ঠিক না।’ সকলের সম্মতিতে শহর থেকে মিস্ত্রি আনিয়ে অতি দ্রুত গম্বুজওয়ালা একটি পাকা মসজিদ তৈরি হয়ে গেলো আর আক্কাসের কথা মনে করার প্রয়োজনই করল না কেউ। এতকিছুর পরেও মজিদের মনে শান্তি আসেনি। আজ তার যশ-মান, অর্থ, সমৃদ্ধি সব থাকলেও সে নিজেকে বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করে। তার এ নিঃসঙ্গতা কালের মতো আদিঅন্তহীন। নিরুত্তাপ এ জীবন তার ভালো লাগে না। জীবনকে উপভোগ করতে না পারলে কীসের মান-যশ-সম্পত্তি-প্রতিপত্তি। তাই একদিন সে বিড়ালছানার মতো একরত্তি একটি মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে আনে। নাম তার জমিলা। এই মেয়েটিই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মজিদ সকলকে বশ করতে পারলেও জমিলাকে বশে আনতে পারেনি। মহব্বতনগরে তার দীর্ঘ রাজত্বকালে কেউই তার হুকুম অমান্য করেনি। কিন্তু জমিলার অবাধ্যতায় সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। সে ভাবে, জমিলার মনে পর্বতপ্রমাণ খোদাভীতি জাগাতে হবে এবং সেই ব্যবস্থাও করে। এমনই পরিস্থিতিতে মজিদ এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে জমিলাকে মাজারের পাশে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। কিন্তু রাতে বজ্রপাত এবং শিলাবৃষ্টি হলেও জমিলা আর্তনাদ করেনি এবং মজিদের কাছে সাহায্য প্রার্থনাও করেনি। বরং সকাল বেলায় অচেতন অবস্থায় জমিলাকে যখন দেখা গেল, তখন তার একটি পা কবরের গায়ের সঙ্গে লেগে ছিলো। কবরের গায়ে জমিলার পায়ের স্পর্শ দ্বারা মাজারের অসারত্ব এবং জমিলার প্রতিবাদী চেতনার মধ্য দিয়ে মজিদের প্রতি অবাধ্যতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতেই ঘটেছে মজিদের সর্বাত্মক পরাজয় এবং সচ্ছলতায় শিকড়-গাড়া বৃক্ষ হয়েও সে হয়ে ওঠে একা, উন্মূলিত ও অনিকেত। তারপরেও মজিদ ভেঙ্গে পড়েনি। রহিমাকে সে বিচলিত ও আন্ধা হতে না করে, কারণ দুনিয়াটা একটি কঠিন পরীক্ষাক্ষেত্র; এখানে বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট থাকবেই। উপন্যাসের শেষে দেখা যায়, শিলাবৃষ্টিতে খেতের ফসল নষ্ট হলে গ্রামের লোকজন হাহাকার করলে মজিদ কঠিনভাবে বলেÑ ‘নাফরমানি করিও না। খোদার উপর তোয়াক্কল রাখ।’ এরপর আর কারো মুখে কথা যোগায় না; কারণ মজিদের প্রতি তাদের বিশ^াস পাথরের মতো অটল। শিকড়হীন, উন্মূলিত মজিদ শেকড়ের সন্ধানে সংগ্রাম করেছে প্রতিনিয়ত। শক্তি ও বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও দু’বেলা ভালোভাবে খেয়ে বাঁচবার চেষ্টায় যখন ব্যর্থ হয়েছে; তখনই আত্মনির্মিত পন্থা প্রতারণার আশ্রয় নেয় সে। এতে সফলতার মুখ দেখেছে, আবার পতন এবং তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা। ধর্মকে পুঁজি করে মজিদ যে জাল বিস্তার করেছে তা কেবল মহব্বতনগর গ্রামেরই নয়, সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র। বর্তমান সময়ে মজিদের চেয়েও ভয়ংকর ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আমাদের সমাজে বিরাজমান- যারা মিথ্যা বুলি আওড়িয়ে সহজ-সরল মানুষদের নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণার জাল সৃষ্টি করছে।
×