ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পণ্যমান নিশ্চিতে বারকোড

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২৪ নভেম্বর ২০২০

পণ্যমান নিশ্চিতে বারকোড

দেশে ভেজালের বিষয়টি সুবিদিত ও বহুল আলোচিত। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য- চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা-ময়দা-মাছ-মাংস-ডিম-দুধ-ছানা-মিষ্টি এমনকি জীবন রক্ষাকারী পানিসহ ওষুধপথ্য- সর্বত্রই সব পণ্যেই ভেজাল। সত্যি বলতে কি, দেশে ভেজালবিহীন কোন পণ্য প্রাপ্তি নিতান্তই দুর্লভ। এমনকি দাম বেশি হলেও কোন্ পণ্যটি ভেজালমুক্ত সে সম্পর্কে সর্বাংশে নিশ্চিত হওয়া দুঃসাধ্য। এতে সমূহ ঝুঁকির মুখে নিপতিত হয় জনস্বাস্থ্য। মানুষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর খাদ্যেও ভেজাল। দেশে ভেজাল পণ্য চিহ্নিতকরণসহ পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সরকারী সংস্থা বিএসটিআই। সংস্থাটি দীর্ঘদিন আধুনিক ও উন্নত ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত জনবলসহ সর্বাধুনিক ল্যাবের সুযোগ-সুবিধাও। তদুপরি এর কার্যক্রম সীমিত ছিল রাজধানী কেন্দ্রিক। পরে সময় ও চাহিদার প্রেক্ষিতে একে অপেক্ষাকৃত উন্নত ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হয়েছে। এর পরও কিছু ক্ষেত্রে সংস্থাটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এ রকম যে ১৮১টি ভোগ্যপণ্যের নাম রয়েছে তাতে দুগ্ধজাত পণ্য অর্থাৎ দই-মিষ্টি নেই। ফলে দই-মিষ্টিতে যথেচ্ছ ভেজাল চলছেই, যা জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে তুলছে প্রতিনিয়ত। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিএসটিআইয়ের লোগো নকল করে ছাপিয়ে ভেজাল ও নকল পণ্য বাজারজাত করে থাকে। লোকজনের অভাবে বিএসটিআই দেশের সর্বত্র অভিযান পরিচালনা দূরে থাক, নিয়মিত নজরদারিও করতে পারে না। খোদ রাজধানীতেই মাঝেমধ্যে বিএসটিআই সীমিত অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণে সংস্থাটির নকল লোগো সংবলিত পণ্য আটক ও বাজেয়াপ্ত করেছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্যপণ্যসহ নকল প্রসাধনী সামগ্রী, ওষুধপথ্য। জেল-জরিমানাও হয়েছে। তাতেও কাজ হচ্ছে না তেমন। অতঃপর বিএসটিআই যে কোন পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে শীঘ্রই চালু করতে যাচ্ছে পণ্যের কিউআর কোড বা বারকোড পদ্ধতি। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এর মাধ্যমে একজন ক্রেতা পণ্যের গায়ের কিউআর বা বারকোড মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারবে এর উৎপাদন ও বিপণন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এর ফলে কমবে প্রতারণা ও নকল পণ্য উৎপাদন এবং বিপণন। বিএসটিআইয়ের সেবা বিশ্বমানের ও জনবান্ধব করতে সারাদেশে ১৩টি আঞ্চলিক অফিসের পাশাপাশি ৪৬টি নতুন ল্যাব স্থাপনসহ অফিস হচ্ছে ৬৪ জেলায়। পাশাপাশি সঠিক ওজন, সতেজ ও ফরমালিনমুক্ত সর্বোপরি ভেজালমুক্ত পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। দৈনন্দিন খাদ্যকে যাবতীয় ভেজাল থেকে সর্বোতভাবে মুক্ত করা ও রাখার বিষয়ে ইতোপূর্বে সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক। খাদ্যে ভেজালকে একটি মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য করে তা প্রতিরোধে প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করেছেন তিনি। আশা করা যায় যে, এতে ব্যবসায়ী ও ভেজালকারীদের বোধোদয় ঘটবে।
×