ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘৬৪ জেলার ৬৪টি বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার হবে’

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১২ নভেম্বর ২০২০

‘৬৪ জেলার ৬৪টি বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার হবে’

আনন্দকণ্ঠ : করোনাভাইরাস সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপরীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কতটা সক্রিয়। লিয়াকত আলী লাকী : সক্রিয় কিংবা নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্ন না, প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে থেকেই আমরা আমাদের কাজের ধারাবাহিকতা কিভাবে ধরে রাখছি এবং সচল রাখছি। রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের পাশাপাশি আমার সাংস্কৃতিক পরিম-লে রয়েছে বিশ্বব্যাপী সংযোগ। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রোডম্যাপ সম্পর্কে আমি প্রথম থেকেই সক্রিয়। সংক্রমণের ঢেউ যখন আমাদের দেশে আছড়ে পড়া শুরু করল তখন আমার প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি আমি একটা কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ দাঁড় করালাম। দেশ এবং বিদেশের সকল শিল্পীদের পাশে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে দাঁড়ানো, সঙ্কটে দেশবাসীর মনোবলকে প্রজ্বলিত, সাংস্কৃতিক আলোয় সতেজ রাখা, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন ও দায়িত্বশীল করা, আর্ট আগেইনেস্ট করানো স্লোগান নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শিল্পী ও শিল্পানুরাগীর মাঝে অধিক কর্মসংস্থান ও শিল্প উপভোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আশার কথা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাদের কর্মপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে করোনা সঙ্কটেও মানুষের আস্থা ধরে রেখেছে। আনন্দকণ্ঠ : শিল্পের এত যে মাধ্যম সেখানে কোন মাধ্যমের শিল্পীদের কিভাবে সম্পৃক্ত করেছেন এই সঙ্কটের সময়ে? লিয়াকত আলী লাকী : আপনার শব্দ সংখ্যায় কতটা আটকাবে জানি না আবার আমি সব মনে করে বলতে পারব তাও ভাবি না। তবে চারুকলা, সঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র, কবিতা, আবৃত্তি, নৃত্য প্রভৃতি মাধ্যমের ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১৫ হাজারের অধিক শিল্পীদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে ভার্চুয়াল প্রোগ্রামে যেটি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচারিত হয়েছে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত যার গড় ভিউয়ার তথা দর্শক ১২ হাজার। ঢাকার পাশাপাশি ৬৪টি জেলার শিল্পকলা একাডেমির অনলাইনে একইরূপ অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়েছে। ৩০০ চারুশিল্পীদের অঙ্কিত চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে অক্টোবর থেকে নবেম্বর মাসব্যপী। অঙ্কনের উপকরণ সরবরাহ, সম্মানী প্রদান থেকে প্রদর্শনের সকল ক্ষেত্রে সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীতে ভার্চুয়ালি প্রদর্শিত হয়েছে ‘মুক্তির মহানায়ক’ নামক চিত্র প্রদর্শনী। একাডেমির আয়োজনে নৃত্য ও নাট্য সংগঠনের নির্মিত খ- নৃত্য ও ছোট নাটক প্রচারিত হয়েছে অনলাইন অনুষ্ঠানে। সকল প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষ নামে নিয়মিতভাবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদয়ের শিল্পীদের দিয়ে যেমন অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে, প্রয়াত মনীষীদের জীবনভিত্তিক নির্মিত তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়েছে। কাহিনী চালচিত্র প্রচারিত হয়েছে, পুতুল নাট্য উৎসব-নজরুলজয়ন্তী-বিশ্বসঙ্গীত দিবস-বর্ষাবরণ-ঈদে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের কর্মহীন হয়ে পড়া শিল্পীর তালিকা প্রণয়ন ও সহযোগিতার অর্থ বিতরণে একাডেমি নিরলসভাবে কাজ যেমন করে চলেছে তেমনি একাডেমির সকল সদস্যদের দুর্দিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ঢাকার অভ্যন্তরে ৫০০ অসচ্ছল পরিবারকে খাদ্য সহযোগিতা করেছে। মোট কথা অচল করোনায় সচল থেকেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আনন্দকণ্ঠ : মুজিববর্ষ ২০২০ উদযাপনে একাডেমি কতটা ভূমিকা রাখল? লিয়াকত আলী লাকী : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বঙ্গবন্ধু। ফলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একাডেমি বিস্তৃত ও গভীরভাবে উদযাপন করবে এটাই স্বাভাবিক। ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৪০তম অধিবেশনে বৈশ্বিকভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এর প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ও ইউনেস্কো যৌথভাবে কাজ করে চলেছে। করোনা সঙ্কট সত্ত্বেও একাডেমি বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা মালা, বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত গ্রন্থের পাঠ-পর্যালোচনা, শত কবিতায় বঙ্গবন্ধু গ্রন্থ প্রকাশ, শত গানে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থ প্রকাশ, জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধু গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ, ৫ লক্ষাধিক শিশু-কিশোর-যুবসহ বৃদ্ধ মানুষের কাছ থেকে আমার প্রস্তাব, আমার প্রত্যয় প্রস্তাবনা গ্রহণ এবং সেই অনুযায়ী কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়েছে। ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গকৃত পুষ্পকানন নির্মাণ, ভার্চুয়ালি শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু অনুষ্ঠান আয়োজন, মুজিববর্ষের মধ্যেই ৬৪ জেলাতে মঞ্চ নাটক নির্মাণ, একাডেমির লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার নির্মাণ, কবিতায় বঙ্গবন্ধু গ্রন্থ প্রকাশ, দীর্ঘতম ক্যানভাসে প্রতিকৃতি অঙ্কন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী এ্যালবাম প্রকাশসহ আরও অনেক কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে অনুধাবন এক অর্থে সোনার বাংলাকে নিবিড়ভাবে গড়ে তোলার অনুরণন। আনন্দকণ্ঠ : বঙ্গবন্ধু অপেরা হাউস নির্মাণ কোন পথে? লিয়াকত আলী লাকী : বিশ্ব সাংস্কৃতির জাগরণে বঙ্গবন্ধু অপেরা হাউস উদয়ের পথে। অস্ট্রেলিয়া যেভাবে উচ্চারিত তাদের অপেরা হাউসের কারণে আমাদের দেশও সেভাবে উচ্চারিত হবে বঙ্গবন্ধু অপেরা হাউস নামে। একই সময়ে একই স্থানে দেশের অধিক লাইভ অনুষ্ঠান আয়োজনের গর্বিত অংশীদার হবে এই বঙ্গবন্ধু অপেরা হাউস। এই অপেরা হাউস প্রধানমন্ত্রীর ভাবনার ফসল। আনন্দকণ্ঠ : স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে পরিকল্পনা কেমন? লিয়াকত আলী লাকী : ৬৪ জেলার ৬৪টি বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার হবে, ৬৪ জেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকসহ আরও অনেক কিছু হবে। আনন্দকণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ। লিয়াকত আলী লাকী : আনন্দকণ্ঠকে ধন্যবাদ।
×