ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসে বিদেশী ঋণে প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশ

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৪ নভেম্বর ২০২০

তিন মাসে বিদেশী ঋণে প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও বিদেশী ঋণ সহায়তায় প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২০-২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ সহায়তা এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদেশী ঋণ সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৯০ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিদেশী ঋণ এসেছিল। আর পুরো অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ ৭২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ পেয়েছিল, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ওই অংক ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা। গত অর্থবছরের উল্লম্ফনের পর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশী ঋণে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে ফের সেই আগেই ধারায় ফিরে এসেছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৫১ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছিল বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা। পরের সেপ্টেম্বরে, এক মাসেই দিয়েছে ৮৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তবে অর্থবছরের বাকি নয় মাসে (অক্টোবর-জুন) এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা- তা নিয়ে সংশ্রয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা ও দেশ গত অর্থবছরের শেষ দিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জুগিয়েছিল। সে কারণেই অর্থবছর শেষে সব মিলিয়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই অবস্থা যে সব সময় থাকবে, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। দাতাদেরও একটা বাজেট থাকে; সেখান থেকে সব দেশকে তাদের সহায়তা করতে হয়, ঋণ দিতে হয়। তিনি বলেন, এখন সঙ্কট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে; বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই গতবারের মতো ঋণ-সহায়তা এবার পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে যে বিদেশী ঋণ এসেছিল তার অর্ধেকের বেশি, ৩৭৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এসেছে, মহামারীকালের চার মাস- মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে ১৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে কখনোই এক মাসে এত বিদেশী ঋণ আসেনি। তার আগে সর্বোচ্চ ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের ঋণ এসেছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাওয়া ৬২১ কোটি ডলার ছিল এক অর্থবছরে পাওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা। গত অর্থবছরের মার্চ মাসে ১০১ কোটি ডলারের বিদেশী ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এপ্রিল ও মে মাসে প্রায় যথাক্রমে ৩০ কোটি ৬২ লাখ ও ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তা এক ধাক্কায় ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে আসে। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাতাদের কাছ থেকে যে ৭২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ, তার মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক দিয়েছে ১৩০ কোটি ডলার। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল এই সংস্থাটি ৪০ কোটি ডলারের মতো ছাড় করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থবছর হিসাব করে জানুয়ারি-ডিসেম্বর ক্যালেন্ডার ধরে। ২০১৯ সালে এডিবির কাছ থেকে ১৩০ কোটি ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর চলতি ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়েই দিয়েছে ১৩২ কোটি ডলার। করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত ৬০ কোটি ৩০ লাখ ডলার দিয়েছে এডিবি। বাকিটা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন-জাইকা, এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক- এআইআইবি, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক-আইএসডিবি এবং অন্যান্য দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল -আইএমএফ গত অর্থবছরে সরকারকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়েছে। এই অর্থবছরে সংস্থাটির কাছ থেকে কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। এছাড়া কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এডিবি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার সময় এই অর্থ ছাড় করা হবে বলে এডিবি ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন। বিশ্ব ব্যাংকও টিকা বাবদ বাংলাদেশের জন্য ৭ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে। খুব শীঘ্রই সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হবে বলে সংস্থাটির ঢাকা অফিস জানিয়েছে।
×