ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সেপ্টেম্বর শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ

বেসরকারী খাতে গতি বেড়েছে

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২ নভেম্বর ২০২০

বেসরকারী খাতে গতি বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারী খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারী খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ১৬ হাজার ৬৯৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ বছর আগস্টে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। মহামারীর অভিঘাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছিল। এরপর টানা তিন মাস অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে প্রবৃদ্ধির ঊর্ধমুখী ধারা অব্যাহত থাকল। অপরদিকে সরকারী খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেশ কমেছে। সেপ্টেম্বর শেষে সরকারী খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৯৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সরকারী খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টানা প্রায় ১০ বছর বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্ক বা ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পর গত বছরের নবেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো তা ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে এই প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে গত এপ্রিলে ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসে। ওই মাসে বেসরকারী ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমে যায়। গত জুনে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও এই একই লক্ষ্য ধরা ছিল, বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির বড় কারণ হচ্ছে প্রণোদনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপ থাকায় ঋণ বিতরণ বাড়ছে। আবার ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত টাকা থাকায় ব্যাংকাররাও চাচ্ছে ঋণ বাড়ুক। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও ঘুরে দাঁড়াতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। অর্থনীতির জন্য এটা ভাল খবর। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আর এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে যেন ব্যবহার না হয়- সে বিষয়টির দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। এর আগে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ; যার মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে যথাক্রমে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ও ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। কিছু ব্যাংকের আগ্রাসী বিনিয়োগের কারণে দুই বছর আগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে ঋণ প্রবৃদ্ধি। ওই পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের শুরুতে বেসরকারী ঋণপ্রবাহের লাগাম টানতে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর থেকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। এর মধ্যে কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও ঋণ প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত ছিল। করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নির্দেশনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন পর্যন্ত শতাধিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। কমানো হয়েছে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর), নীতি সুদহার রেপো ও ব্যাংক রেট। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণসুবিধা নিয়ে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য যথাসময়ে শুরু করা যায়, সেজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহামারী মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত সোয়া লাখ কোটি টাকার যে ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং কটেজ মাইক্রো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (সিএমএসএমই) ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল অন্যতম। এই দুই তহবিলের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা (১৫ হাজার ও ১০ হাজার কোটি টাকা) যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
×