ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা চুক্তি আসন্ন!

প্রকাশিত: ২০:৪২, ২৩ অক্টোবর ২০২০

তিস্তা চুক্তি আসন্ন!

বাংলাদেশ সম্প্রতি ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগানের ঝটিতি বাংলাদেশ সফর এবং এশিয়া প্যাসিফিক নিরাপত্তা বলয়ে যোগদানের প্রস্তাব। ভারতের দোকলাম উপত্যকায় চীন-ভারত সামরিক উত্তেজনা, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তার, সর্বোপরি ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড-এ চীনের ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কোন্নয়নসহ প্রস্তাবের পেছনে আগ্রহ জুগিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এর বাইরে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চির বৈরিতা তো আছেই। সাম্প্রতিককালে নেপালের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে, যে কারণে দেশটি ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে চীনের দিকে। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের অবস্থানও অনুরূপ। অতঃপর ভারত বিশেষ করে আগ্রাহান্বিত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রতি। এর সঙ্গে বাড়তি নতুন মাত্রা যোগ করেছে মহামারী করোনাভাইরাস। উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উৎপাদনে গেলে ভারত তা বাংলাদেশে বাজারজাত করতে সবিশেষ আগ্রহী। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধনের শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সফরে উঠে এসেছে বিষয়টি। এর বাইরেও দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের যৌথ পরামর্শক কমিটির (জেসিসি) বৈঠকটি করোনার কারণে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হলেও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে দীর্ঘদিন থেকে অমীমাংসিত তিস্তাসহ পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, ঋণচুক্তির অর্থ ছাড়, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধি এমনকি পেঁয়াজ, ইলিশ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত বাংলাদেশে নতুন হাইকমিশনার নিয়োগ দিয়েছে। ঢাকায় এসেই তিনি দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান সমস্যাসমূহের দ্রুত আন্তরিক সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগামী বছরের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তিস্তাসহ দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধানের পথ খুঁজে পওয়া যেতে পারে। একদার প্রমত্তা ও খর¯্রােতা তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বাংলাদেশ অংশে কমছে দিন দিন। নদীর উজানে পানির প্রবাহ কমতে থাকায় এবং ভাটি এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ধু ধু বালুচর পড়ায় বর্তমানে একটি সরু নালার আকার ধারণ করেছে কল্লোলিনী তিস্তা। ভারত কোন অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আইনকানুন ভঙ্গ করে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ করতে পারে না। অথচ ভারত তাই করেছে প্রথমে গঙ্গা এবং পরে তিস্তা ও অন্যান্য নদ-নদীতে বাঁধ এবং ব্যারাজ নির্মাণ করে। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেই ন্যায়ানুগ ও যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো, গঙ্গার পানি নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও গঙ্গা ব্যারাজসহ অন্যান্য নদ-নদীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথমদিকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সফর বাতিল করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। মমতা শুধু তিস্তা চুক্তিতে বাগড়া দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বর্তমানে বেঁকে বসেছেন গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণেও। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ। এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। গঙ্গা চুক্তির সময় বাংলাদেশ ভারতকে গঙ্গা ব্যারাজ করার বিষয়টি অবহিত করলে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। এটি নির্মিত হলে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ- উভয় অংশেই পানির প্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত হবে। তিস্তা চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারাজের ব্যাপারে মমতাকে রাজি করানোর দায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের, বাংলাদেশের নয়। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
×