ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দলের প্রয়োজনে মাহমুদুল্লাহর আত্মত্যাগ

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

দলের প্রয়োজনে মাহমুদুল্লাহর আত্মত্যাগ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে কিংবা টেস্টে- তার নামের পাশে এখন থাকতে পারত ৭-৮ হাজার রান। পরিসংখ্যান হতে পারত আরও সমৃদ্ধ। কিন্তু নিজের অর্জনের হাতছানিকে মাহমুদুল্লহ উপেক্ষা করেছেন দলের কথা ভেবে আত্মত্যাগ করেছেন। করোনা বিরতিতে যখন ক্রিকেটাররা গৃহবন্দী সেই সময় এক লাইভে মাশরাফি বিন মর্তুজা এমন কথা বলেন। দলের স্বার্থে তিন ফরমেটেই বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অনেক রান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। সম্প্রতি তিনি টেস্ট দলের বাইরে। দলের জন্য এ যেন আরেক আত্মত্যাগ। কারণ টেস্টেও আছে তার বিরল এক রেকর্ড যা ইতিহাসে শুধু নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার জন রিডের আছে। টেস্টেও বিভিন্ন সময় যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্টের প্রাথমিক দলে আছেন তিনি। দলের যখন যেভাবে প্রয়োজন হয়েছে তাকে সেভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে। আর দলের প্রয়োজনও মিটিয়েছেন তিনি পারফর্মেন্স দিয়ে। সর্বশেষ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট খেলা হয়নি, এবার ফিরতে পারেন দলের প্রয়োজনেই। তিনি যদি অযোগ্যই হন তবে প্রয়োজনে তাকে দলে নিতে হয় কেন? দলের প্রয়োজনে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করেছেন মাহমুদুল্লাহ। তার মতো আর কোন ক্রিকেটারেরই বাংলাদেশ দলে ব্যাটিং পজিশনে পরিবর্তন আসেনি। এমনকি দারুণ অফস্পিন করার সক্ষমতা থাকলেও রিয়াদ অনেক ম্যাচেই বোলিং পর্যন্ত করেননি। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার ব্যাটিং পজিশন ৩ থেকে শুরু করে এমনকি ১০ নম্বর পর্যন্ত দেখা গেছে। দলের প্রয়োজন মাফিক সময় ঠিকই নিজেকে প্রমাণ করেছেন সবগুলো পজিশনেই। টপঅর্ডারে যোগ্যতা প্রমাণ করলেও দলের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করেছেন। নিশ্চিতভাবেই এতে করে তার রান অনেক কমে গেছে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে। তবে ব্যাটিং পজিশন ঠিক না থাকলেও ওয়ানডে কিংবা টি২০ ক্রিকেটে তিনি প্রমাণিত ব্যাটসম্যান। কিন্তু টেস্ট দলে তার থাকা নিয়ে বেশ কয়েকবারই প্রশ্ন উঠেছে। আর সেসব বলেছেন কোচেরাই। প্রথম চান্দিকা হাতুরাসিংহে তাকে টেস্টে অনুপযুক্ত বলেছিলেন এবং বাদও দিয়েছিলেন। কিন্তু হাতুরাসিংহের বিদায়ের পর প্রত্যাবর্তনেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন রিয়াদ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে। তবে এরপর বেশ কিছুদিন ভাল যায়নি তার টেস্টে। ২০১৮ সালের শেষদিকে আবার জ্বলে ওঠেন, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে হাঁকান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। এক টেস্ট বিরতি দিয়েই আরেকটি সেঞ্চুরি হাঁকান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। যখন থেকে মাহমুদুল্লাহর টেস্ট ক্রিকেটে থাকা নিয়ে কথা উঠেছে তারপর থেকে তিনি ৩টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটি খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের কঠিন উইকেটে। হ্যামিল্টনে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ১৪৬ রানের ইনিংস খেলেন রিয়াদ। সেবার নেমেছিলেন ৬ নম্বরে। প্রথম টেস্ট শতক হাঁকিয়েছিলেন ৮ নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে। সেটিও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হ্যামিল্টনে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একটি শতক আছে ৭ নম্বর পজিশনেও। অর্থাৎ তিন পজিশনে ব্যাটিং করে ৪টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন রিয়াদ। টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ৩১.৭৭। এখন পর্যন্ত টেস্ট ইতিহাসে যা বাংলাদেশের পক্ষে ষষ্ঠ সেরা ব্যাটিং গড়। ৪টি সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ১৬টি অর্ধশতক। আর এই রানগুলো তিনি করেছেন বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করে- ৩ থেকে শুরু করে ৯ নম্বর পজিশন পর্যন্ত টেস্টে ব্যাট চালিয়েছেন রিয়াদ। ব্যাটিং পজিশন ঠিক না থাকায় ক্যারিয়ারে অনেক রান হারিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এমন ত্যাগ আর কেউ করেনি। তাই মাশরাফি তাকে নিয়ে বলেছেন, ‘রিয়াদ এমন একজন ব্যাটসম্যান ও যদি চার-পাঁচ নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেত, ওর পরিসংখ্যানও কিন্তু ভাল হতো। দলের জন্য খেলতে গিয়ে ওর ক্যারিয়ারে অনেক রান হারিয়েছে।’ কিন্তু টেস্টে মাহমুদুল্লাহর গুরুত্ব কমে গেল কেন? তিনি কী অযোগ্য? অন্তত পরিসংখ্যান তা বলে না। উল্টো টেস্টে এক বিরল রেকর্ড আছে তার। টেস্টে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি, ইনিংসে ৫ উইকেট এবং স্টাম্পিংয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের জন রিড। তারপরে এই বিরল কীর্তি আছে শুধু মাহমুদুল্লাহর। ২০০৯ সালে কিংস্টনে অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে নিয়মিত উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম চোট পেয়েছিলেন। তার জায়গায় কিপিং গ্লাভস পরে উইকেটের পেছনে দাঁড়াতে হয়েছিল মাহমুদুল্লাহকে। সেদিন অবশ্য ওপেনার ইমরুল কায়েসও এক শ’ ওভারের মতো কিপিং করে ফেলেছিলেন। ক্লান্ত এই ওপেনারকে বিশ্রাম দিতেই ম্যাচের চতুর্থদিন কিপিং গ্লাভস হাতে তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর তাইজুল ইসলামের বলে পাকিস্তানের দশম ব্যাটসম্যান জুলফিকার বাবরকে স্টাম্পিং করেন তিনি। এসব কিছুই প্রমাণ করে ৪৯ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আর ব্যাটিং গড় ও দলের প্রয়োজন মাফিক ব্যাটিং করার সক্ষমতার কারণে তিনি আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরেও দলের জন্য জরুরী।
×