ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষায় গতি

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১২ আগস্ট ২০২০

শিক্ষায় গতি

করোনার আঘাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পড়েছে দেশ, সমাজ ও মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে। এর কোন ক্ষতিই সামান্য নয়। অসামান্য ক্ষতি হয়ে গেছে শিক্ষাঙ্গনে, স্পষ্ট করে বললে শিক্ষার্থীদের। বাধ্যতামূলক ঘরবন্দী থাকায় এবং করোনার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে শিক্ষার্থীদের মনোজগতে চাপ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নিয়মিত পাঠ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং এ ব্যাপারে জবাবদিহির অনুপস্থিতি তাদের মধ্যে এক ধরনের শিথিলতাও এনে দিয়েছে। বেশিদিন শিক্ষালয়ে না যেতে পারা মানেই সামাজিকভাবে শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটা। সেটিই হয়েছে, যা শুধু শিক্ষার্জন নয়, মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সম্পর্কের জন্যও সমস্যা। একই সঙ্গে বার্ষিক পাঠ্যসূচী সম্পন্ন না থাকার বিষয়টিও বিদ্যমান। বিগত পাঁচ মাস ধরে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্বদ্যিালয় বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর। এ এক বিরাট ক্ষতি। শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ পড়েছে অনেক। ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে পাঠদান শুরু করেছে বেশ পরে। সার্বিকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রের এই চরম সঙ্কটের ভেতর ধীরে ধীরে স্বস্তিকর সংবাদ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ। সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে যেসব শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির জন্য উদগ্রীব ছিল তাদের জন্য সুসংবাদ মিলেছে অবশেষে। শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া। প্রথমদিন ১০ ঘণ্টায় তিন লাখের ওপরে আবেদন জমা পড়ার ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নতুন ক্লাসের পড়া শুরুর জন্য তরুণ শিক্ষার্থীরা কিরকম উদগ্রীব হয়ে আছে। আমরা মনে করি দেশের বিপুল তরুণ শিক্ষার্থীর জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি পরম স্বস্তিকর। প্রসঙ্গত, এবার সাত হাজার ৪৭৪টি সরকারী-বেসরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ২৫ লাখ আসন রয়েছে। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলেও আট লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। এটি অপ্রত্যাশিত ও অনাকাক্সিক্ষত হলেও বাস্তব। এর পরের ধাপেই রয়েছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সামনে আরও কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে পরের ধাপে পৌঁছাবে। যোগ্যরাই অগ্রসর হবে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে শিক্ষালয়ে আসন অপূর্ণ থাকার বিষয়টি এক অর্থে অস্বাভাবিকও নয়। বরং উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আসন সঙ্কটের কারণে পরবর্তী ধাপে ভর্তি না হতে পারার বিষয়টিই হতো মহাক্ষতিকর। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার বাস্তবোচিত একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি হলো শিশুরা বিদ্যালয়ের ছাড়পত্র (টিসি) ছাড়াই বছরের যে কোন সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। আরেকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলো মহামারীর মধ্যে পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে সংসদ টিভির পাশাপাশি বেতারের মাধ্যমে প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত। দর্শন ও শ্রবণ শিক্ষার জন্য অনিবার্য। বেতারের মাধ্যমে শিশু পাঠদানের সাফল্যও রয়েছে। শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রে সাময়িক স্থবিরতা ক্ষতির কারণ হয়েছে এটা সত্য। এ ক্ষতি পুষিয়ে সামনের দিকে যাত্রা করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সচেতন বলেই পরিস্তিতি পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে একের পর এক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসছে। শিক্ষার্থীরা আবার প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠবে, সানন্দে শিক্ষার ভুবনে আগ্রহী হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
×