ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ চাঙা শেয়ারবাজার

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ৯ আগস্ট ২০২০

সর্বোচ্চ চাঙা শেয়ারবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রানঘাতী করোনার আঘাত এবং আস্থার সংকটে ভুগতে থাকা শেয়ারবাজার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। করোনার কারণে সাধারণ ছুটিতে ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে উভয় শেয়ারবাজার খুলে দেয়া হয়। এরপর প্রায় দেড় মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। ধারাবাহিকভাবে মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়লেও রবিবার সা¤প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ চাঙা ছিল শেয়ারবাজার। সেখানে একদিনে সার্বিক সূচক বেড়েছে ৪ শতাংশ এবং বিনিয়োগকারীদের মূলধন বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগের দিনের ধারাবাহিকতায় সকালে লেনদেন শুরুর পরই বড় লাফ দেয় মূল্যসূচক। লেনদেনেও দেখা দেয় চাঙাভাব। মাত্র ১০ মিনিটে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শত কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এর আগে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সকাল সাড়ে দশটার পরিবর্তে আধাঘন্টা আগে লেনদেন শুরু হয়। সবমিলে লেনদেনের সময় চার ঘন্টার পরিবর্তে সাড়ে চার ঘন্টা নির্ধারন করা হয়েছে। যা প্রথম দিনেই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। সারাদিনে সূচকের এই চাঙাভাব বজায় থাকায় লেনদেন ছাড়িয়ে যায় হাজার কোটি টাকা। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে চার শতাংশের ওপর। লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। এতে একদিনেই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে প্রধান শেয়ারবাজার। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিএসইসি স¤প্রতি কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল করেছে, আবার কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের কারণে জরিমানা করেছে। আমি মনে করি, বিএসইসির এই পদক্ষেপ সঠিক আছে। এর একটা ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েছে। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এতদিন বাজারে ছোট ছোট যে উত্থান হচ্ছিল তা স্বাভাবিকই ছিল। তবে একদিনে প্রায় ৪ শতাংশ সূচক বেড়ে যাওয়া আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। হঠাৎ এমন বড় উত্থান হলে বড় পতন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই উত্থানের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজার অনেক দিন ধরেই নিম্নমুখী ছিল। এখনও বাজারের যে চিত্র তা আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তারপরও একদিনে মূল্যসূচক অস্বাভাবিক বাড়া ঠিক নয়। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা রবিবারের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের বড় অংকের মূলধন ফেরত পাওয়ার দিনে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দিনশেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির পর সূচকটির সব থেকে বড় উত্থান হলো। ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ২৩২ পয়েন্ট। এদিকে প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৪০ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও অনেক কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেননি কিছু বিনিয়োগকারী। এই দিনে ৯ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে ২৭টি কোম্পানির। এছাড়া দিনটিতে ৫ শতাংশের বেশি কোম্পানির দর বেড়েছে। গত কিছুদিন ধরে ক্রেতাশূণ্য অবস্থায় থাকা ব্যাংকেরও দিনটিতে ক্রেতা মিলেছে। এদিকে সূচকের বড় উত্থানের দিনে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে ডিএসইর লেনদেন। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৯২ কোটি ১১ লাখ টাকা।
×