ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনয় মুখার্জী

এখন সময় নিজেকে তুলে ধরার নিজের সম্পর্কে জানান দেয়ার

প্রকাশিত: ২১:১৮, ৪ জুলাই ২০২০

এখন সময় নিজেকে তুলে ধরার নিজের সম্পর্কে জানান দেয়ার

পৃথিবী আজ এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় পার করছে। পৃথিবীর দীর্ঘ ইতিহাসে এমন সময় এসেছে বলে জানা যায় না, যেখানে প্রায় সমগ্র পৃথিবী একসঙ্গে অবরুদ্ধ। তবে প্রত্যেকটি খারাপ সময় বেশকিছু দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন এনে দেয়। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসও ঠিক তেমনি পরিবর্তন আনতে চলেছে তা এখন নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে। আচার-আচরণ, বিধিনিষেধ, সামাজিকতা আর বিশেষ করে বিশ্ব রাজনীতি ও বিশ্ব ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক বিশাল পরিবর্তনের আভাস ইতোমধ্যেই এসে গেছে বলা যায়। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন দেশের উহান নামক প্রদেশের এক জীবজন্তুর বাজার থেকে। আজ যা সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে খুব দ্রুতগতির সঙ্গে। পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানীগণ এখন ব্যস্ত এর প্রতিষেধক তৈরির জন্য। প্রশ্ন উঠেছে এ ভাইরাস উৎপত্তি নিয়ে। প্রাকৃতিকভাবে এই ভাইরাসের উৎপত্তি নাকি মানুষ দ্বারা তৈরি এই ভাইরাস? যদিও এই প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন এটি প্রাকৃতিক ভাইরাস নয়। যদিও কোন কিছুই এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই আজ ক্ষিপ্ত চীন দেশের ওপর। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, করোনা উৎপত্তি চীনের এক প্রদেশে এবং চীনের অসাবধনতা ও তথ্য লুকানোর জন্য পৃথিবীময় এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি জিনিসের একটি ভাল ও মন্দ দিক থাকে। ঠিক তেমনি করোনার এক দিকে জীবন-জীবিকার ঝুঁকি, ঠিক উল্টো পিঠেই উঁকি দিচ্ছে অনেক নতুন সম্ভাবনা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, করোনার কারণে চীনের প্রতি ইউরোপসহ জি-৭ দেশগুলোর নেতিবাচক মনোভাব আর চীন থেকে জাপানসহ উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়ার আভাস নতুন করে সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু দেশের প্রতি। বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে। করোনা-পরবর্তী বদলে যাওয়া বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আসতে পারে নতুন রফতানি আদেশ আর প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ। পৃথীবিতে শীর্ষ পণ্য রফতানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। করোনার কারণে জি-৭ দেশগুলোসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে চীনের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নের মুখে। যার কারণেই উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের পণ্যেও সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার কৌশল হিসেবে এবং সিঙ্গেল কান্ট্রি সোর্সিং বন্ধের উপায় হিসেবে তাদের বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ চীন থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে জাপান সরকার চীন থেকে তাদের কোম্পানি সরিয়ে নিতে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আর চীনে থাকা কোম্পানি স্থানান্তরের জন্য উপযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ হলো অন্যতম দেশ। এমন প্রেক্ষাপটে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে বাংলাদেশের নেয়া দরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ। বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাসগুলোকে এক্ষেত্রে নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। জানান দিতে হবে এই সরকারের আমলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সক্ষমতা সম্পর্কে বহির্বিশ্বকে। প্রচুর পরিমাণ মার্কেটিং করতে হবে দূতাবাসগুলোকে। বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ টানতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। বাংলাদেশে রয়েছে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ হাজার একরের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি সরকারী ও বেসরকারী প্রায় ২৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর জন্য। সঙ্গে রাখতে হবে বিশেষ বিশেষ সুবিধা, যা আকর্ষণ করবে বিনিয়োগকারী দেশগুলোকে। বাংলাদেশ কম ব্যয় জনশক্তিদেশ হিসেবে পরিচিত। সুযোগাযোগ ব্যবস্থা, যথেষ্ট বিদ্যুতায়ন, এলএনজি গ্যাস সুবিধাও রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের রয়েছে বৃহৎ বাজারের আকার যা উৎপাদনকারী দেশগুলোকে আকর্ষণ করে নিজ দেশীয় বাজারের জন্য। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ চাহিদা, যা অনেক দেশে না থাকায় শুধুমাত্র রফতানি করে। এখনই সময় নিজেকে তুলে ধরার, ,নিজের সম্পর্কে জানান দেয়ার। আশা রাখি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থ কাজই করবেন। কোন ভাল কাজেই প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার অভাব কখনই ছিল না, যার কারণেই বাংলাদেশে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিনিয়ত দাঁড়াচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রে। তবে শুধু কারও একার ইচ্ছা বা চেষ্টায় নয়, এগিয়ে আসতে হবে সরকারের প্রত্যেকটি দফতরকে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীবৃন্দকে। সবাইকে এক হয়ে যৌথভাবে কাজে করতে হবে এই সঙ্কটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং এই সঙ্কটময় সময়কে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য। আশা রাখি অতীতের মতোই আগামীর সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফলতা অর্জন করবে প্রিয় বাংলাদেশ। লেখক : সদস্য , সম্প্রীতি বাংলাদেশ [email protected]
×