ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারতাজ আলীম

দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন ॥ বেঁচে থাকার আশা

প্রকাশিত: ০০:১৮, ৪ জুন ২০২০

দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন ॥ বেঁচে থাকার আশা

ঠিক এই মুহূর্তে সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলালে কি চোখে পড়বে? বিশ্বজুড়ে ৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ আক্রান্ত এক ভাইরাসে, জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে স্থবির, যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে দাঙ্গা, পরাশক্তি কয়েক দেশের মধ্যে চলছে যুদ্ধের ভাব। প্রতিটা ঘটনার সঙ্গেই অজস্র মানুষ জড়িয়ে আছে। ভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং কখনও দেখা না হওয়া মানুষগুলোর মধ্যে একটা মিল ঠিকই আছে। প্রত্যেকেই আগামীকাল বাঁচতে চায়। আত্মহত্যার দড়ির দ্বারপ্রান্তে থাকা বা হসপিটালে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করা মানুষগুলো আগামীকালের পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়! আর মাসব্যাপী লকডাউনে দম বন্ধ হয়ে আসা পরিবেশেও কিছু করে বা ভেবে নিজের মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখতে চায়। মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম ভিত্তি হলো আশা। কিছু করার তীব্র আকাক্সক্ষা, দুর্দান্ত প্রচেষ্টা অথবা সব হারিয়ে ফেলেও শেষ একবার চেষ্টা করে যাওয়াÑ মানুষের আশা আসলেই সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিস। উচ্চাশা অনেক সময় বিপদের কারণ হলেও আশা মানুষকে সবসময় ভাল কিছুই দেয়। হত্যার অভিযোগে যাবতজীবন জেল হয় ব্যাংকার এ্যান্ডি ডুফ্রেইনের। হঠাৎ এক সকালে বদলে যায় তার জীবন। তার জায়গা হয় শশাঙ্ক জেলে। বাইরের দুনিয়া তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তাতে কি ডুফ্রেইন জেলকেই বানিয়ে ফেলেন নিজের পৃথিবী। ছোট্ট একটা জগতই হয়ে উঠতে শুরু করে মহাবিশ্ব। শুরুতেই আরেক কয়েদি রেডের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছিল। এরই মধ্যে ২০ বছর যাবত সে জেলে। ডুফ্রেইনে রেশ ছড়িয়ে পড়ে পুরো জেলে। নতুন লাইব্রেরি আর নানা কাজে কয়েদিরা জেলের ভেতরেই পেতে শুরু করে মুক্ত পাখির স্বাদ। এদিকে ব্যাংকার ডুফ্রেইন পরিণত হয় জেলের ওয়ার্ডেন আর পুলিশদের কালো টাকা করার পরামর্শকে। সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে ডুফ্রেইনের সহায়তায় দুর্নীতির টাকা নিরাপদে রাখতে শুরু করে জেলের কর্তারা। বদ্ধ এক স্থানেও চ্যালেঞ্জিং এক কাজ আবিষ্কার করে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করে সে। কিন্তু একসময় জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়ায় ডুফ্রেইন। তার বন্ধু রেড জানত ডুফ্রেইনের মতো মানুষ খাঁচায় থাকার জন্য জন্মায় না, তাদের জীবনটাই মুক্ত হাওয়ায় ভেসে বেড়ানোর জন্য। আর একদিন সে ঠিকই এখান থেকে চলে যাবে। ২০ বছর পর আসল সেই দিনটা। জীবনে যদি এক মুহূর্তে হারিয়ে ফেলা সব সুদে-আসলে ফেরত পাবার সুযোগ আসে তাহলে কি সেই সুযোগটা নেয়া উচিত না? সুযোগটা নিয়েছিল ডুফ্রেইন। কিন্তু কিভাবে? আর এই একটা মুহূর্তের জন্য গত ২০ বছরের প্রতিটা দিন কি কি প্রচেষ্টা আর সংগ্রামের ভেতর দিয়ে গিয়েছিল ডুফ্রেইন? জেলের ভেতরে থেকে হারিয়ে ২০টি বছর কি ফিরে পাবে? আপাতদৃষ্টিতে সাদামাটা গল্পটাই এই সিনেমার কাহিনী। সিনেমাটিকে মনে ধরিয়ে দিতে মূল চালিকা হিসেবে কাজ করছে ন্যারেটর বা কথকের ভাষ্য। বেশিরভাগ অংশই রেড (মর্গান ফ্রীমানের) ভাষ্যে। মর্গান ফ্রীমানের মতো কণ্ঠ বিশ্বে একটাই আছে বলা হয়। তার কণ্ঠ সিনেমাকে কাব্যিক রূপ দিয়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সিনেমার কাহিনী, চরিত্র, কথোপকথন, ধারাভাষ্য, পরিচালনা ও সমন্বয় সবকিছুই অসাধারণ হয়েছে। সবদিকের এমন অনবদ্য মিশ্রণ খুব কম সিনেমাতেই হয়। হতাশা বা অসফলতা সর্বোপরি খারাপ লাগার কারণ যাই হোক না কেন সিনেমাটি দেখলে মনে হবে এই গল্প যেন আমার জীবনের গল্পেরই আরেক রূপ! অনুভব হবে আপনারই এক সত্তা অভিনয় করেছে সিনেমাতে। ডুফ্রেইন চরিত্রে টিম রবিন্স এবং রেড চরিত্রে মর্গান ফ্রীমানের অভিনয় ছাড়াও এক সিনেমায় আপনারই এক অদৃশ্য সত্তা অভিনয় করে বসে আছে। আর সে হলো ‘আশা’। শুধু গল্পে নয়, এ যেন সিনেমার এক বিরাট আশাজনক অধ্যায়। মুক্তির সময় ফ্লপ থেকে আজ ২ মিলিয়ন ভোটের উপরে পেয়ে আইএমডিবির সর্বকালের সর্বসেরা তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে আছে এক যুগের বেশি সময় ধরে। অনেকের ধারণা এই স্থানটি আজীবন ধরে রাখবে সিনেমাটি। রটেন টম্যাটোসেÑ ৬৬টি পর্যালোচনার ভিত্তিতে ছবিটির স্কোর ৯১%, দর্শক বিবেচনায় স্কোর ৯৮%। যখন থেকে এ্যান্ডি ডুফ্রেইন জেলে প্রবেশ করল ঠিক তখন থেকে একটাই বার্তা দিয়ে যাবে দর্শককে, ‘বাঁচুন আশায়’! শেষ হোক শশাঙ্কের একটা ডায়ালগ দিয়ে। অনেক সমালোচক এবং দর্শকের বিবেচনায় এটাই এযাবতকালের সেরা একক ডায়ালগ। ‘ঐঙচঊ ওঝ অ এঙঙউ ঞঐওঘএ গঅণইঊ ঞঐঊ ইঊঝঞ ঙঋ ঞঐওঘএঝ অঘউ ঘঙ এঙঙউ ঞঐওঘএ ঊঠঊজ উওঊঝ’
×