ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

একটি সুন্দর ভোরের অপেক্ষায়...

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৩০ এপ্রিল ২০২০

একটি সুন্দর ভোরের অপেক্ষায়...

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখন শুধু আতঙ্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকহারে। জ্যামিতিক সংখ্যায় ছড়াচ্ছে মানুষ থেকে মানুষে, দেশ থেকে দেশে। করোনাভাইরাসকে দমন করতে হলে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। এখন সব ক্ষেত্রে চলছে ভাইরাসের আতঙ্ক! জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস অভিনীত ও বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’- সিনেমার মুক্তি স্থগিত হয়েছে গত মসে। কেমন কাটছে ঢালিউড কুইন অপু বিশ্বাসের বর্তমান সময়? জানতে চাইলে সর্বাধিক ব্যবসা সফল ছবির এই নায়িকা বলেন, ঘুম থেকে উঠে নাশতা করি। গৃহস্থালির কাজকর্ম করি। বই পড়ি। সিনেমা দেখি। ঘরের কাজের মধ্যে দিয়ে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে যাচ্ছে। ঘরবন্দী হয়ে ছেলেকে নিয়ে অনেক ভাল সময় কাটছে। কখনও জয়কে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সময় দেয়ার সুযোগ হয়নি, এখন হচ্ছে। জয় আমাকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি। করোনার কারণে যখন পুরো দেশ স্থবির তখন অপু বিশ্বাস নি¤œআয়ের মানুষদের সহযোগিতা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বলেন, এই দুর্দিনে আমাদের এই মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এদের জন্যই আজকের অপু বিশ্বাস হতে পেরেছি। শুধু সিনেমা মুক্তির সময় বললেই হবে না প্লিজ আপনারা হলে এসে ছবি দেখুন। ছবি মুক্তির সময় তারাই কিন্তু ১০০ টাকা খরচ করে ছবি দেখছেন। তারা ১০০ টাকায় টিকেট কেটে ছবি দেখছে বলেই ছবির সফলতা এসেছে। এখন তাদের পকেটে ১০০ টাকা ঢুকছে না। কারণ সর্বত্র লকডাউন! এখনই সুবর্ণ সুযোগ যাদের কারণে সাফল্য এসেছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। আপনি বেশকিছু মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। এ বিষয়ে আরও কোন পরিকল্পনা রয়েছে কি-না? এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমি কখনও পরিকল্পনা করে কাজ করি না। দেশের খারাপ সময় যাচ্ছে। আমার উপলব্ধি হয়েছে এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সেই মানবিক জায়গা থেকে তাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। দেশের অবস্থা যদি পরিবর্তন না হয়। মনে হয় যদি ফের সহযোগিতার হাত বাড়ানো দরকার। অবশ্যই সহযোগিতা করব। করোনা দুর্যোগ আপনার মনে কী উপলব্ধি করিয়েছে? প্রথমত মনে হয়েছে প্রতিটি মানুষ শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে। এবং অনেকের লুকানো সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশ পেয়েছে। আমরা অনেকে অনেক কিছু করতে পারি কিংবা করার ইচ্ছে হয়। কিন্তু সময়ের অভাবে করতে পারি না। যা করোনায় ঘরবন্দী হয়ে সবাই সেই কাজগুলো করতে পারছি। আমরা ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারতাম না। যা এখন তাদের সঙ্গে থেকে সুন্দর একটি সময় কাটাচ্ছি। আমি অনেক প্রকারের মিষ্টি বানাতে পারি। তবে কিছু কিছু মিষ্টি বানাতে পারতাম না। যা এই সময়ে চেষ্টা করে বানিয়েছি। যা জয়ও অনেক পছন্দ করেছে। এই মহামারী কেটে গেলে সমাজের কী কী পরিবর্তন হওয়া উচিত বলে মনে করেন? প্রথমে আমার কাছে মনে হয় আমরা সবাই একটা শৃঙ্খলার মধ্যে চলে এসেছি। এটি ধরে রাখা উচিত। করোনা আমাদের বড় একটা পরিবর্তন শেখাচ্ছে। মানুষকে সুন্দরভাবে চলতে হবে। আমাদের দেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। মাস্ক পরলে আমরা বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে পারি। তাছাড়া আমরা বাইরে থেকে বাসায় প্রবেশ করেই ছোট বাচ্চাদের ধরি এবং নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকছি না। করোনার কারণে এ সকল বদাভ্যাস সবাই পরিবর্তন করতে পেরেছি। করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে। এটি আমাদের জন্য বড় একটি পরিবর্তন। এটা সকলের ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। করোনার কারণে চলচ্চিত্রে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নিলে আপনারা উপকৃত হবেন? বিশ্বজুড়ে এখন অর্থনৈতিক সমস্যা বিরাজ করছে। অর্থনীতি দেশের জন্য একটি ফ্যাক্ট। সেটি যদি একবার ভেঙে যায় তা কাটিয়ে উঠা বেশ কষ্টসাধ্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিমান ও সুদক্ষ একজন নেত্রী। চলচ্চিত্রের মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি এ অঙ্গনের মানুষের কথা ভেবে দেখবেন। চলচ্চিত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সেই চলচ্চিত্রই যদি না থাকে সমাজের মানুষ শিখবে কি করে? আশা করছি মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রের সোনালি দিন ফেরাতে এবং চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন এবং আমাদের শিল্পীদের মধ্যে একতা বাড়াতে হবে। এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে গেলে সামনে ভাল কিছু আশা করা যায়। এদিকে সিনেমা শিল্পের ব্যাপাক দুর্দশা আগে থেকেই। তারপরও করোনা যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ দেশের সিনেমা হল। যে সকল সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি হল না খোলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অনলাইনে সিনেমা মুক্তির কথা ভাবছেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে অপু বিশ্বাসের মন্তব্য কি? ক্রমেই সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি যখন সিনেমায় আসি তখন সাতশ’ সিনেমা হল চালু ছিল। দু-হাজার ষোলো সালে সর্বশেষ বড়পর্দা দাপিয়ে বেড়াচ্ছি তখনও ৩০০-৩৫০-এর মতো হল চালু ছিল। তখন একটি সূর্যোদয়ের চিন্তাভাবনা সবার মধ্যে ছিল। সেই সংখ্যা কমে ৬০-এর ঘরে এসেছে যা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। বড়পর্দার মানুষদের বড়পর্দায় মানায়। সেটি ক্ষুদ্র হয়ে এলে মানাবে না। এমন সিদান্তে কি বলা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। তবে চলচ্চিত্রের কল্যাণে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ বিষয় ভেবে দেখবেন। ঘরবন্দী থেকে কোন অভ্যাস পরিবর্তন করতে পেরেছেন? আমি ঘরের মানুষ ঘর ছাড়া ভাল লাগে না। তবে কাজের জায়গাটা খুব মিস করি। সর্বশেষ আমার ভক্তদের বলতে চাই এবং তাদের কাছে আমার চাওয়া। করোনায় অনেকেই বুঝে উঠতে পারছে না। তাদের বলব আবেগ দিয়ে না দেখে মেধা দিয়ে চিন্তা করুন। আমরা মেধা দিয়ে চিন্তা করলে আমাদের দেশটাকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। ভয়কে জয় করুন। তবে করোনা নিয়ে এ নায়িকা বেশ চিন্তিত। প্রতিদিন ঘুমাতে যান সুন্দর একটি ভোরের স্বপ্ন নিয়ে। ঘুম থেকে উঠে শুনবেন বাংলাদেশ থেকে করোনা বিদায় নিয়েছে। সেই সকালের অপেক্ষায় তিনি।
×