ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোটা অঙ্কের অর্থ সাহায্য দিচ্ছেন ফেদেরার, নাদাল, জোকোভিচ

করোনাকালে ‘বিগ থ্রি’র মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২০ এপ্রিল ২০২০

করোনাকালে ‘বিগ থ্রি’র মহাপরিকল্পনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্ব টেনিরে ত্রিমূর্তি রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। গত দুই দশক ধরে অসাধারণ সব পারফর্ম করে নিজেদের নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পারফর্মেন্সের কারণেই বিশ্ব টেনিসে ‘বিগ থ্রি’ হিসেবে আখ্যায়িত হন তারা। টেনিস কোর্টের বাইরেও এবার প্রমাণ করলেন কেন তারা ‘বিগ থ্রি’। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নিচু সারির খেলোয়াড়দের আর্থিক সাহায্য করতে তহবিল গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন টেনিসের তিন মহারথী রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। বিশ্বজুড়েই এখন চলছে করোনাভাইরাসের তান্ডব। যে কারণে অন্যান্য খেলার মতো বন্ধ টেনিসও। এই সময়টা অবসরের মাধ্যমে পার করছেন টেনিস তারকারা। তবে টেনিস শুধু তারকারাই খেলেন না। এমন খেলোয়াড়ও আছেন যাদের নামও শোনা যায় না। টেনিস বন্ধ থাকায় বিপদে আছেন সেই সব খেলোয়াড়েরা। এটিপি, ডব্লিউটিএ কিংবা আইটিএফ সার্কিটের ছোট ছোট টুর্নামেন্ট খেলেই আয়-রোজগার করতেন তারা। কিন্তু করোনা এসে সেই সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। এমনও খেলোয়াড় আছেন যাদের এখন খাবার জোগাড় করাটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে আবার টেনিস ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। ঠিক এই সময়েই এ রকম টেনিস খেলোয়াড়দের সাহায্যেই এগিয়ে আসার ঘোষণা দিলেন টেনিসের শীর্ষ তারকারা। শনিবার পুরুষ এককের এক নম্বর তারকা নোভাক জোকোভিচ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালের সঙ্গে মিলে ক্ষতিগ্রস্ত খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে তহবিল গড়ার কাজ শুরু করেছেন। এদিন বন্ধু ও প্রতিদ্বন্দ্বী স্ট্যানিস্লাস ওয়ারিঙ্কার সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে আলাপচারিতার সময় এই খবরটি দেন সার্বিয়ান তারকা। এ সময় জোকোভিচ বলেন, ‘আমি রজার (ফেদেরার) ও রাফার (নাদাল) সঙ্গে কয়েক দিন আগে কথা বলেছি। আমরা লম্বা সময় কথা বলেছি। কথা বলেছি টেনিসের ভবিষ্যত নিয়ে, সামনে কী হতে পারে তা নিয়ে। বিশেষ করে কথা বলেছি র‌্যাঙ্কিংয়ের নিচের দিকের যেসব খেলোয়াড় আর্থিক কষ্টে আছে তাদের কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে।’ সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৭ গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন জোকোভিচ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০০ থেকে ১০০০ কিংবা এর পরে যারা আছে তারা ফেডারেশনের সাহায্য পায় না। তাদের স্পন্সরও নেই। তাদের দেখার কেউ নেই। তাদের অনেকেই টেনিস ছাড়ার চিন্তাভাবনাও করছেন। আমরা চাচ্ছি খেলোয়াড়, এটিপি ও চার গ্র্যান্ডস্লাম মিলে ত্রাণ তহবিল গঠন করতে। যেখান থেকে এটিপি সবাইকে আর্থিক সাহায্য করবে। আশা করছি আমরা ৩০ লাখ থেকে ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার (২৫ থেকে ৩৮ কোটি টাকা) তুলতে পারব ও সাহায্য করতে পারব। এ বছর যদি আর কোন টুর্নামেন্ট না-ই হয় তবে জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার ওপেন থেকে যা পেয়েছি সেখান থেকেই ভাগ করে দেব। কারণ এই খেলোয়াড়েরাই তৃণমূলের টেনিসকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। টেনিসের ভবিষ্যত এরাই। আমরা এটা দেখানও দরকার যে শীর্ষ খেলোয়াড়েরা তাদের পাশে আছে।’ সর্বশেষ ৬৬ গ্র্যান্ডস্লামের মধ্যে ৫৬ গ্র্যান্ডস্লাম এসেছে এই বিগ থ্রির ঝুলিতে। শেষ ১২ গ্র্যান্ডস্লামও জিতেছেন তারা তিনজন। তবে এই প্রভাব বা এই ‘বিগ থ্রি’র সময়কাল আর বেশিদিন নেই বলে মনে করেন স্পেনের টেনিস তারকা রাফায়েল নাদাল। কিন্তু কেন হঠাৎ এ রকম মনে হচ্ছে নাদালের? এর কারণ হিসেবে বলতে গিয়ে বয়সকেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেন রাফা। এক সাক্ষাতকারে তিনি সম্প্রতি বলেন, ‘আমাদের এই সময়টা ধরে রাখার আর কোন দরকার নেই। প্রায় ১৫ বছরের উপর টেনিসকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি আমরা। তাই আমার মনে হয়, একটা সময়ে গিয়ে এই সময়কাল শেষ হবে। আমার বয়স ৩৩। ফেদেরারের ৩৮। জোকোভিচের ৩২। সময় কিন্তু পেরিয়ে যাচ্ছে। এটাই জীবনের ধর্ম। পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি আছে। রাশিয়ার মেদভেদেভ দারুণ টেনিস খেলছেন। অস্ট্রিয়ার ডোমিনিক থিয়েম, জার্মানির আলেক্সান্ডার জেরেজ, কিরগিওসের মতো তরুণরা খুব ভাল টেনিস খেলছেন। ধীরে ধীরে তারাই টেনিস দুনিয়ায় রাজত্ব করবেন। যেভাবে পিট সাম্প্রাস, আন্দ্রে আগাসিদের সময় বদলে আমরা উঠে এসেছিলাম, সেভাবেই নতুন প্রজন্ম উঠে আসবে।’
×