ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ প্রতিনিধি

নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে আইওসি ও জাপান

প্রকাশিত: ১১:০২, ১ এপ্রিল ২০২০

নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে আইওসি ও জাপান

করোনা মহামারীতে টোকিও অলিম্পিক গেমস এক বছর পিছিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) তা ঘোষণা করেছে। ক্রীড়াপ্রেমীদের কৌতূহল ছিল আগামী বছর কোন সময় শুরু হবে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ?’ এ বিষয়ে আয়োজক জাপান জানিয়েছে আগামী বছর ২৩ জুলাই গেমস শুরু হবে। পর্দা নামবে ৮ আগস্ট। বর্তমানে করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত ক্রীড়াবিশ্ব। একের পর এক প্রতিযোগিতা হয় বাতিল হচ্ছে, না হয় পিছিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আইওসি কর্মকর্তারা এবং জাপান সরকার ও টোকিও অলিম্পিক কমিটির সদস্যরা জোর গলায় বলে আসছিলেন, অলিম্পিক ঠিক সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। পিছিয়ে দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু গত কয়েকদিনের ছবিটা ভীষণভাবে বদলে গেছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যত বাড়তে থাকে, অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়ার দাবি ততো জোরদার হতে থাকে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও গ্রেট ব্রিটেন সরেই দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় অংশগ্রহণ থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থাও প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। এই চাপের মুখে মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায়, অলিম্পিক পিছনো ছাড়া রাস্তা নেই সংগঠকদের। কার্যত সেটাই হলো। আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের সঙ্গে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে দেয়ার। পরে টোকিওর সাংবাদিকদের জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে বলেন, আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম এক বছর পিছিয়ে দেয়া হোক অলিম্পিক। এই প্রস্তাবে এক শ’ ভাগ সায় দেন প্রেসিডেন্ট বাখ। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবকিছু আবার নতুন করে গোছগাছ করার। জাপানের আয়োজক কমিটি ও আইওসি কর্মকর্তারা সোমবার এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সূচী নির্ধারণ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে সরকারীভাবে তা এখনও ঘোষণা হয়নি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখ বলেছেন, আমাদের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হচ্ছে। এমনিতেই ২০২০ সালে গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস আমাদের যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এই মেগা ইভেন্ট আয়োজন করার ব্যাপারে চার বছর আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে গেমস স্থগিত করে মোটা অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। ইতোমধ্যেই ১২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে আয়োজক কমিটি। এর মধ্যে বিভিন্ন স্পন্সরদের বিনিয়োগকৃত অর্থ রয়েছে। চলতি বছর গেমস অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এই অর্থ ফেরত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ফলে এই ক্ষতি আগামী বছর কিভাবে মেটানো হবে সেটাই এখন বড় চিন্তার কারণ। এদিকে ২০২১ সালে গ্রীষ্মে গেমস অনুষ্ঠিত করা ছাড়া কোন গতি নেই আয়োজক কমিটির। কারণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ওই সময়ের আগে অথবা পরে রয়েছে। অলিম্পিক গেমসের সূচীর ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলো ২০২১ সালে কিভাবে আয়োজন করা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিশ্ব ক্রীড়া সংস্থাগুলো। আন্তর্জাতিক এ্যাথলেটিকস সংস্থার প্রধান সেবাস্তিয়ান কো এই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেও গেমসের স্বার্থে আগামী বছর বিশ্ব এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা পিছিয়ে দেয়া পক্ষে সায় দিয়েছেন। কারণ এ ছাড়া কোন গতি নেই আন্তর্জাতিক এ্যাথলেটিকস সংস্থার। এখন প্রশ্ন, ২০২০ অলিম্পিক গেমসে যে সব ক্রীড়বিদ যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তারা কি আগামী বছরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন? এ বিষয়ে আইওসি প্রধান টমাস বাখ আশ্বস্ত করে বলেছেন, ২০২০ সালে যোগ্যতা অর্জনকারী এ্যাথলেটরা আগামী বছর অনুষ্ঠিত গেমসে সরাসরি অংশ নেয়ার ছাড়পত্র পাবেন। এ নিয়ে কোন সংশয় নেই। তিনি বলেন, আমি মনে করি এ্যাথলেটরা অলিম্পিক গেমসে ভাল ফল করতে আরও প্রস্তুতির সময় পাবেন। অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশের অলিম্পিক সংস্থাগুলোকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কারণ, তারাও এই বছরের প্রতিযোগিতায় ক্রীড়া দল পাঠানোর জন্য পরিকাঠামো তৈরিতে বিরাট অর্থ বিনিয়োগ করেছে। গেমস পিছনোয় তাদের আবার অর্থ ঢালতে হবে। এমনিতেই করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্বের অর্থনীতি গভীর সঙ্কটে। এই পরিস্থিতিতে নতুনভাবে বিনিয়োগ করা বেশ সমস্যার। পরিতাপের বিষয়, করোনার থাবা থেকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেল না টোকিও অলিম্পিকও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সেটা হলো, অলিম্পিক পরের বছরও আদৌ আয়োজন সম্ভব হবে তো? সন্দেহ এখানেই, ২০২১ সালের জুলাইয়ে অলিম্পিক গেমস আয়োজন করতে গেলে গোটা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়াসূচীতে আনতে হবে ব্যাপক পরিবর্তন। এরমধ্যে গেমসের অন্যতম আকর্ষণ ফুটবল। বিশ্বব্যাপী ভর ফুটবল মৌসুম স্থগিত রাখার পক্ষে আয়োজকরা কতটুকু সফল হতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করছে অলিম্পিকের ভাগ্য। এ ছাড়া এ্যাথলেটিক্স, সাঁতারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক আন্তর্জাতিক অনেক ইভেন্ট রয়েছে এ তালকায়। উল্লেখ্য, অলিম্পিকের ইতিহাসে গেমস পেছানোর এটা নজিরহীন ঘটনা। যদিও এর আগে বিশ্বযুদ্ধের জন্য বাতিল হয়েছিল এই ক্রীড়া মহাযজ্ঞ। কিন্তু এভাবে পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা কখনও ঘটেনি। গত ডিসেম্বরে সংগঠকরা বলেছিলেন, সব মিলিয়ে গেমসের জন্য খরচ হবে ১.৩৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন। এরমধ্যে জাপানের অলিম্পিক অর্গ্যানাইজিং কমিটি দিয়েছে ৬০৩ বিলিয়ন ইয়েন, টোকিও শহরের কর্তৃপক্ষ ৫৯৭ বিলিয়ন ইয়েন। জাপানের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ইয়েন। অতিরিক্ত অর্থ রাখা হয়েছিল ম্যারাথন এবং হাঁটা প্রতিযোগিতা অন্যত্র সরানোর খরচ হিসেবে। এখন গেমস এক বছর পিছিয়ে গেলেও করোনার প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাপানের পর্যটন ব্যবসা। গত বছর জাপানে ৩১.৯ মিলিয়ন পর্যটক এসেছেন, যারা ৪.৮১ ট্রিলিয়ন ইয়েন খরচ করেছেন। অলিম্পিকের প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। সেগুলো এখন দর্শকরা এক বছর ধরে রাখবে না ফিরিয়ে দেয়ার মিছিলে যাবে সেটাও ভাবিয়ে তুলেছে আয়োজকদের।
×