ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা- সতর্ক ফুটবলার মারিয়ার দিনাতিপাত

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২২ মার্চ ২০২০

করোনা- সতর্ক ফুটবলার মারিয়ার দিনাতিপাত

রুমেল খান ॥ বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর ত্রাসের রাজত্ব। এর থেকে বাইরে নয় বাংলাদেশও। প্রাণঘাতী ছোঁয়াচে এই ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার একটি হচ্ছে দেশের ভেতরে সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ করে দেয়া। এই প্রেক্ষিতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে ছয় বছর পর আবারও চালু হওয়া মহিলা ফুটবল লীগের খেলা। ফলে অংশ নেয়া সব ক্লাবই তাদের ক্যাম্প বন্ধ করে দিয়েছে, খেলোয়াড়রা ছুটিতে। খেলোয়াড়রা যে যার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। তাদেরই একজন মারিয়া মান্দা, যিনি দেশের মহিলা ফুটবলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। মধ্যমাঠের নিপুণ কুশলী এক কারিগর। বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে শুরু। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন। জাতীয় দলের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলে অনেক শিরোপা জিতেছেন, অনুর্ধ-১৬ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন, সিনিয়র দলেও খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তৈরি করেছেন তার অসংখ্য ভক্তকুল। সেই মারিয়া এখন কোথায় আছেন, কি করছেন, ভাইরাস-ভুবনে কিভাবে করছেন দিনাতিপাত, তা জানার চেষ্টা করেছে দৈনিক জনকণ্ঠ। মারিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানান, ‘১৮ মার্চ আমাদের ম্যাচ ছিল (পরে অবশ্য ফিকশ্চার রি-সিডিউল করে বাফুফে সেটাকে ২১ মার্চ করেছিল)। এর দু’দিন আগে থেকেই আমাদের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল, লীগের খেলা চলবে কি না। ১৭ মার্চ টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের আভাস দেয় লীগ স্থগিতের ব্যাপারে। পরের দিন তো জেনেই যাই যে লীগ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বসুন্ধরা কিংসের পরিকল্পনা ছিল লীগ বন্ধ থাকলে ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ ঠিকই চালু থাকবে। কিন্তু পরে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’ দেশে যে করোনা ভাইরাস এত ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা প্রথমে বুঝতে পারেননি মারিয়া। ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে টিভিতে দেখে ও পত্রিকায় পড়ে ধীরে ধীরে অনুধাবন করতে পারেন। তখন কিছুটা হলেও আতঙ্ক কাজ করে তার মনে। প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হচ্ছেন না। তার নিজেরই যখন এই অবস্থা, তখন তার গ্রামের কি অবস্থা? ‘গ্রামের মানুষ বলতে পাড়া-প্রতিবেশীদের কথা বলতে পারি। তারা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তেমন জানত না। তবে এখন মোটামুটি জানে।’ মারিয়ার জবাব। মারিয়া চেষ্টা করছেন সতর্ক থাকতে এবং স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়মকানুন মেনে চলতে। যেমন নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরা। মাস্কটা গ্রামের বাড়িতে এসেই কিনেছেন। ছুটি নিয়ে আসার সময়ও তাদের সব খেলোয়াড়কে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ভাইরাসমুক্ত থাকার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে বলে জানালেন। আগামী ২৪ মার্চ ঢাকায় ফেরার জন্য ক্লাব মারিয়াদের বলে দিয়েছে। তবে এটাও বলেছেÑ পরিস্থিতি যদি খারাপ হয়, তাহলে তারা যেন না এসে ক্লাবকে জানিয়ে দেন। তখন তারা অবস্থা বুঝে খেলোয়াড়দের পরে নতুন একটা তারিখ ধার্য করে ঢাকায় আসতে বলবেন। তিনদিন হলো বাড়িতে (ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর) এসেছেন সুদর্শনা মারিয়া। সঙ্গে এসেছেন আরও পাঁচ সতীর্থ তহুরা খাতুন, মারজিয়া আক্তার, সানজিদা আক্তার, মাহমুদা আক্তার এবং শামসুন্নাহার; যারা সবাই বসুন্ধরা কিংসে মারিয়ার সতীর্থ। লীগ তো এখন বন্ধ। তাহলে নিজেদের ফিট রাখার কাজও বন্ধ নাকি? মারিয়ার ভাষ্য, ‘নিজেকে ফিট রাখতে এখনও কোন অনুশীলন শুরু করিনি। দেখি কাল (রবিবার) থেকে রানিং, ব্যায়াম এবং সুযোগ পেলে ফুটবল নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করব। বাড়ির সামান্য দূরেই একটা বড় মাঠ আছে, সেখানেই যাব।’ মহিলা ফুটবল লীগে দলের ৫১ গোলে মারিয়ার অবদান ৪ গোল। যদিও নিজে গোল করার চেয়ে অন্যদের দিয়ে গোল করাতেই বেশি আনন্দ মারিয়ার। অনেকেই বলছেন, জাতীয় দলের সব খেলোয়াড়দের বসুন্ধরা কিংস নিয়ে নেয়ায় তারাই এই লীগে নিশ্চিতভাবেই চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে আপত্তি মারিয়ার, ‘এখনও অনেক ম্যাচ বাকি আমাদের। এমনকি এখনও প্রথম পর্বের খেলাও শেষ হয়নি। কাজেই এখনই এভাবে বলাটা ঠিক নয়।’ বাড়িতে এসে বসুন্ধরা কিংসের অন্য সতীর্থদের সঙ্গে সময়-সুযোগ পেলে মোবাইলে যোগাযোগ করছেন মারিয়া। সেই সঙ্গে কায়মোনবাক্যে ঈশ্বরের কাছে করছেন এই প্রার্থনাও, ‘বাংলাদেশ যেন খুব তাড়াতাড়ি করোনোর গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারে।’
×