ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৯ মার্চ ২০২০

অভিমত ॥ বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু

শুরুতেই স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এ বছর মহান নেতা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদযাপিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ এক বছর সময়কালকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এখনও দাফতরিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালীর নেতা বা বন্ধু ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর অবদান শুধু বাঙালী জাতি ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমায়িত নয়। আন্তর্জাতিক পরিম-লে তাঁর অবদান অপরিসীম ও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি নিপীড়িত, নির্যাতিত ও শোষিত মানুষের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না, তিনি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে একজন অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় নেতা। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয় ও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। গত ১৫ আগস্ট ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শোক দিবসে জাতিসংঘের সদর দফতরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানের আলোচকবৃন্দ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বিশ্ববন্ধু (ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড)’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বৈশ্বিক পরিম-লে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বনেতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের প্রেক্ষিতে তাঁকে ‘বিশ্ববন্ধু (ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড)’ উপাধিতে ভূষিত করায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই বিষয়টিকে আমরা যথার্থ এবং সময়োচিত বলে মনে করি। সঙ্গত কারণেই এ উপাধি নিঃসন্দেহে বৈশ্বিক স্বীকৃতির দাবি রাখে বলেও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু’কে ‘বিশ্ববন্ধু (ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড)’ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য যথাযথ উদ্যোগ ও কার্যক্রম গ্রহণে আমরা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট একটি জোরালো আবেদন পেশ করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে এনে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলেও তা এখনও প্রজ্ঞাপন আকারে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। মুজিববর্ষে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির জন্যও সরকারের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি। ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট জাতিসংঘ সদর দফতর আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বিশ্ববন্ধু’ (ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড) হিসেবে আখ্যা দেন সংস্থাটির সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী। এছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর এই পুরস্কার/পদক আপামর বাঙালীর জন্য এক বিরাট অর্জন। এ মহান অর্জনের সালে জাতির পিতা পরিণত হন বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধুতে। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কোসহ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপানসহ অনেক দেশ মুজিব বর্ষ উদ্যাপন করবে। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালীর নেতা ছিলেন না, বৈশ্বিক পরিম-লে তার অবদান অপরিসীম। ওয়াশিংটন ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ মার্চ ২০২১ কে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করছে। ফলে বছর জুড়ে জাতির পিতাকে সম্মান জানাবে যুক্তরাষ্ট্রবাসী। ১৯৭৩ সালের ৫-৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন- ন্যামের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর নিকট পরিচিতিতে বঙ্গবন্ধু বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ৮ সেপ্টেম্বর স্বাগত ভাষণে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, উপনিবেশবাদ, সা¤্র্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদবিরোধী মজলুম জনগণের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন জানাতে জোটনিরপেক্ষ নীতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি আরও বলেন, একটি বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়তে আমাদের সবাইকে শোষিতের পাশে দাঁড়াতে হবে। পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর বিদায়ী ভাষণেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। উপমহাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে হলে, যে কোন সমস্য সমাধানে মানবিক হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বিশ্বের সামাজিক সমৃদ্ধি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। সার্বিক বিবেচনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্য ‘বিশ্ববন্ধু’ উপাধি প্রাপ্তি যৌক্তিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। জাতিসংঘ কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু উপাধির দাফতরিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে এই মহৎ উদ্যোগটি গত ২০১৯ সালে আগস্ট মাসে শুরু করি। এই উদ্দেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচী গ্রহণ করে বর্তমানে ১৫০০ জনের স্বাক্ষর নিতে পেরেছি। পরবর্তীকালে গণস্বাক্ষর ২০০০ (দুই হাজার) সংগ্রহ করার পর প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করা হবে। এই উপলক্ষে গত ২৬-০২-২০২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে আমার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই বিষয়ে এটাই প্রথম সংবাদ সম্মেলন, যেখানে গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় দেশ ও জাতিকে ‘বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু’ উপাধির দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রায় ৪০ জন জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহ্জাদা আহসান হাবীব, শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. মোঃ সেলিম আল মামুন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বিজয় চন্দ্র দাস, দফতর বিষয় সম্পাদক মাজহারুল হোসেন তোকদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জল কুমার প্রধান, চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. এমদাদুর রাশেদ সুখন, পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুষার কান্তি সাহা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনাব মোঃ মাসুদ চৌধুরী, নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আল জাবির এবং অন্যান্য শিক্ষক। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এই বিষয়ে একাত্মতা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×