ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

অভিষেকেই আলো ছড়ালেন অভিষেক দাস

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৬ মার্চ ২০২০

 অভিষেকেই আলো ছড়ালেন অভিষেক দাস

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মাত্র কিছুদিন আগেই ‘নায়ক’ হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেছেন দেশে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যুবারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের জন্য যে বিস্ময়কর গৌরব বয়ে এনেছেন তার অন্যতম কারিগর ছিলেন অভিষেক দাস অরণ্যও। বিশ্বকাপে মাত্র দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও ফাইনালে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ভারত অনুর্ধ-১৯ দলের বিরুদ্ধে ৩ উইকেট শিকার করে। তারপর আর প্রতিযোগিতামূলক কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি নড়াইলের এ ১৮ বছর বয়সী ডানহাতি পেসারের। তবে রবিবার বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের (ডিপিএল) প্রথমদিনই মাঠে নেমেছেন তিনি। ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছে এ তরুণের। আর লিস্ট ‘এ’ অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছেন তিনি। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিরুদ্ধে বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে আগুন ঝরানো বোলিং করে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দেশের সবচেয়ে বড় এই ঘরোয়া আসরে নিজের অভিষেকেই ম্যাচসেরা হয়েছেন অভিষেক দাস। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দেখে ক্রিকেটে এসেছিলেন অভিষেক। নড়াইলের জেলা পর্যায়ে তিনবার ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। হয়তো সেদিকেও তার ভবিষ্যত অনেক ভাল ছিল। কিন্তু তার উচ্চতা (৬ ফুট) দেখে বাবার বন্ধু ক্রিকেট কোচ সৈয়দ মঞ্জুর তৌহিদ তুহিন অভিষেককে ক্রিকেট খেলায় নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেখান থেকেই ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত নিজ এলাকার বাংলাদেশ দলের মাশরাফিকে দেখে আরও উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। নানা পথ পরিক্রমায় এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে খেলার জন্য বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলে সুযোগ পেয়ে যান। তবে খেলার সুযোগটা পাননি। পাকিস্তান অনুর্ধ-১৯ দলের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামলেও বৃষ্টিতে ম্যাচটি ভেস্তে যায়। তাই বোলিং করারও সুযোগ হয়নি, অবশ্য ব্যাট হাতে ২০ রান করেছিলেন দলের চরম বিপর্যয়ে। কিন্তু ফাইনালে ঠিকই সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন। ভারতীয় যুবাদের ব্যাটিং লাইনআপে মড়ক লাগিয়ে দেন ৩ উইকেট শিকার করে। ৯ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ফাইনালের সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি। বিশ্ব জয়ের পর অনুর্ধ-১৯ দলের ক্রিকেটারদের ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে দেখা যাবে তা নিয়েই ছিল জল্পনা-কল্পনা। এবার দেশের সেরা, অন্যতম জনপ্রিয় ও বড় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাব অভিষেককে দলে ভিড়িয়েছে। জুনিয়র পর্যায়ে, বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অনেক প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেললেও সিনিয়রদের যে পেশাদার ক্রিকেট প্রতিযোগিতা সেখানে কোন পর্যায়েই খেলা হয়নি আগে অভিষেকের। রবিবার সেই পর্যায়েও পা রাখেন বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে। শক্তিশালী লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিরুদ্ধে লিস্ট ‘এ’তে অভিষেক হয় তার। আগে ব্যাট করা ওল্ড ডিওএইচএস মাত্র ২৩০ রানেই গুটিয়ে যায়। সাত নম্বরে নেমে ১৪ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ১৪ রান করতে পেরেছেন অভিষেক। তবে বল হাতে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আক্রমণে আসেন এ তরুণ পেসার। অষ্টম ওভারেই দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তিনি। ওপেনার মেহেদী মারুফকে (১০) এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফেরান। ৩৯তম ওভারে ফিরে আবার আঘাত হেনে দারুণ ব্যাট করতে থাকা জাকের আলী অনিককে (২৮) এলবিডব্লিউ করেন অভিষেক। শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে মাত্র ২ রান দিয়ে শেষ বলে তুলে নেন ৪৯ বলে ৪০ রান করা সানজামুল ইসলামকে। ওল্ড ডিওএইচএস জয় পায় ২৫ রানে। দারুণ এ জয়ে অভিষেক ৯ ওভারে ১ মেডেনসহ ৪৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কারণ রূপগঞ্জের উইকেট পতনের শুরুটা করেছিলেন তিনি এবং শেষও করেছেন। তাই লিস্ট ‘এ’ অভিষেকেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। এই ম্যাচে তার যুব দলে দীর্ঘদিনের সতীর্থ বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান ও টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়ও ছিলেন একই দলে। গত বছরই লিস্ট ‘এ’ যাত্রা শুরু হয় তাদের। তাদের নৈপুণ্যেকে ছাপিয়ে গেছেন অভিষেক। শুরুটা হয়েছে উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে, এবার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা অভিষেকের।
×