ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর জয়

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৬ মার্চ ২০২০

সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর জয়

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে ॥ হোমভেন্যুতে পরাজিত হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। তিন তিনটি গোল করে এগিয়ে থাকলেও কোচ অস্কার ব্রুজনের দলের অধিনায়ক ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস তার টিমকে নিয়ে সেই গোল আর ধরে রাখতে পারেনি। চট্টগ্রাম আবাহনী তিন গোল পরিশোধের পর আরও একটি গোল (৪-৩) করে অবিশ্বাস্য এক জয় ছিনিয়ে নেয়। রবিবার বিকালে নীলফামারীর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ১২তম আসরের উত্তজনাপূর্ণ খেলা দেখে দর্শকরা অভিভূত। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন ও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা বসুন্ধরা সেই চমক হারিয়েছে। নিজ ভেন্যু নীলফামারীর মাঠে বসুন্ধরা কিংস চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল। সেই চট্টগ্রাম আবাহনী এবার জ্বলে ওঠে কিংসের বিরুদ্ধে। বসুন্ধরা কিংসের সমর্থক, অনেক দর্শক এমন পরাজয় মেনে নিতে না পেরে ক্ষোভের সঙ্গে মন্তব্য করেন বসুন্ধরা কিংসের কি আজ শ্রাদ্ধ হলো? খেলার শুরুতে বসুন্ধরা কিংস প্রথম গোল পায় ৪৩ মিনিটে। তাও আবার পেনাল্টিতে তাজাকিস্তানের আকতাম নাজারফের পা থেকে। প্রথম হাফের অতিরিক্ত সময়ের তিন মিনিটে ড্যানিয়েলের সহযোগিতায় মাথা ছুঁয়ে দ্বিতীয় গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার নিকোলাস ডেলমন্তে। ৫৯ মিনিটে কাজাকিস্তানের বখতিয়ারের সহযোগিতায় ড্যানিয়েল কিংসকে ৩-০ গোলে এগিয়ে নেয়। একের পর এক গোল হজম করেও চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়দের হাল ছাড়তে দেখা যায়নি। শুরুতেই আক্রমণ ছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর। পাল্টা আক্রমণ বসুন্ধরা কিংসের। খেলা শুরুর দৃশপট ছিল এমনটি। নির্ধারিত সময়ের আগেই গোল পেতে মরিয়া ছিল দুই দলই। ৪ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর সুযোগ ছিল গোলের। অফসাইডে বাধা। পাল্টা আক্রমণ চালালেও কিংস সুবিধা করতে পারেনি। ৭ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলের সুযোগ পেলেও নাইজিরিয়ান ম্যাথিউয়ের কিক গোলবারের ওপর দিয়ে চলে যায় মাঠের বাইরে। ১৪ মিনিটে ফাউলের কারণে কিংস ফ্রি কিক পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। ১৭ মিনিটে আবাহনীর জোরালো আক্রমণ ছিল। নাইজিরিয়ান ম্যাথিউয়ের কিংসের ডি বক্সে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। তিনজনের বাধায় বল তার পা ছাড়া হয়। ১৯ মিনিটে কিংসের কর্নার পেয়ে কিক নেয় ড্যানিয়েল। গোলের সুযোগ হাত ছাড়া করে কিংসের নাজারফ। ২২ মিনিটে কিংসের ড্যানিয়েলের কিক প্রতিহত করে চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক নাঈম। ২৬ মিনিটে কিংসের ড্যানিয়েলকে ফাউল করায় চট্টগ্রাম আবাহনীর উজবেকিস্তানের পুলাতভ শুকুর আলী হলুদ কার্ড পান। ৪৩ মিনিটে কিংসের আক্রমণে ড্যানিয়ালকে ডি বক্সে ফাউল করে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার পুলাতভ। কিংস পেয়ে যায় পেনাল্টি। কিক নেয় আর্জেন্টিনার নাজারফ। এগিয়ে যায় কিংস ১-০ গোলে। প্রথম হাফের অতিরিক্ত ২ মিনিটের সময় ফ্রি কিক পায় কিংস। ড্যানিয়েলের বাড়িয়ে দেয়া বল মাথায় কাজে লাগিয়ে গোল পায় আর্জেন্টিনার দেলমন্তে। কিংস এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। এই গোলের উল্লাসে কিংসের ফিজিওথ্যারাপিস্ট আবু সুফিয়ান সরকারের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে মাথায় টোকা মারে চট্টগ্রাম আবাহনীর সহকারী কোচ তাজউদ্দিন। কিংসের অভিযোগে খেলা পরিচালনায় থাকা রেফারি ভরত চন্দ্র গোরঙ্গ চট্টগ্রাম আবাহনীর সহকারী কোচ তাজউদ্দিনকে লালকাড দেখিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেন। দ্বিতীয় হাফে খেলা শুরু হলে কিংসের চাপে খেলা সামলাতেই টালমাটাল হয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। তারা চাপ সামলাবে না জোরালো আক্রমণ করবে এমন অবস্থায় ৫৯ মিনিটে কিংসের অধিনায়ক বখতিয়ারের কাছে বল পেয়ে চমৎকার কিক মেরে দলকে ৩-০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যায়। ৬৪ মিনিটে গোল পায় চট্টগ্রাম আবাহনী। নাছিরুলের কাছে বল পেয়ে মাথা ছুঁয়ে চট্টগ্রামের আবাহনীর অধিনায়ক কেপিহি জিন চার্লস দিদিয়ের ব্রসৌ কিংসের জালে বল পাঠায় (৩-১)। এই গোল পেয়ে যেন চাঙ্গা হয়ে উঠে চট্টগ্রাম আবাহনী। আক্রমণ চালাতে গিয়ে কিংসের তপু বর্মণ ফাউল করে বসে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় নিক্সন গিলহের্মি রোচা ব্রিজোলারাকে (ফরোয়াড)। তপু পেয়ে যায় হলুদ কাড। পেনাল্টি কিক নেয় চট্টগ্রাম আবাহনীর নিক্সন গিলহের্মি রোচা ব্রিজোলারা দলকে ২-৩ গোলে এগিয়ে নেয়। পরপর দুটি গোল পেয়ে আরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের আবাহনী। তারা বারবার আক্রমণ চালাতে থাকে কিংসের গোলপোস্টে। কিংসের বড় ভুল ছিল দ্বিতীয় গোলের পর বখতিয়ারকে মাঠের বাইরে উঠিয়ে আনা। এরপর কিংস একে একে খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে থাকে বখতিয়ারের পরিবর্তে রবিউল, ইব্রাহিমের পরিবর্তে সুফিল, রাজুর পরিবর্তে রাব্বী ও রানার পরিবর্তে ইয়াছিনকে মাঠে নামায়। এরপরও কিংস আর গোলের মুখ দেখতে পায়নি। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম আবাহনীর আক্রমণে কোণঠাসা হতে থাকে কিংস। ৮৭ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর নিক্সন গিলহের্মি রোচা ব্রিজোলারা ৩-৩ গোলে সমতা ফিরিয়ে আনে। এরপর খেলা উত্তেজনার পর্যায়ে চলে যায়। পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলতে থাকে। অতিরিক্ত ৫ মিনিটের সময় চট্টগ্রাম আবাহনী জোরালো আক্রমণ চালিয়ে জয় নিশ্চিত করে (৪-৩)। চট্টগ্রাম আবাহনীর এই জয়সূচক গোলটি করেন ম্যাথু চিন্ডু। এতেই নিজ ভেন্যুতে পরাজয়বরণ করে মাঠ ছাড়ে কিংস। আর পিছিয়ে থেকে জয়ের সাধ নিয়ে উল্লাসে মাঠ ছাড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। দলের এমন জয়কে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফ হক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ফুটবল হলো গোলের খেলা। আমার দলের খেলোয়াড়রা দ্বিতীয় হাফে কিংসের বেশ কিছু গ্যাপ খুঁজে পায়। এই গ্যাপগুলো কাজে লাগিয়ে দলকে জয়ের মুখ দেখিয়েছে খেলোয়াড়রা। ১২তম আসরের বিপিএলে ৬ ম্যাচ খেলে চট্টগ্রাম আবাহনী ৪টিতে জয়, একটিতে ড্র ও একটিতে হেরে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় বর্তমানে প্রথমস্থানে রয়েছে। বসুন্ধরা কিংস ৬ খেলায় তিনটি জয়, দুটিতে হার ও একটিতে ড্র করে ১০ পয়েন্ট পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমেছে।
×