ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান সফর বাতিল হচ্ছে!

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৪ মার্চ ২০২০

পাকিস্তান সফর বাতিল হচ্ছে!

মিথুন আশরাফ ॥ পাকিস্তানে আর এক দফা গেলেই সফর শেষ হবে বাংলাদেশের। কিন্তু শেষবেলায় এসেই বেধেছে ঝামেলা। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব এমনভাবে ক্রীড়াঙ্গনকেও ঘিরে ধরছে যে এর প্রভাবে বাংলাদেশের শেষ দফায় পাকিস্তান সফরও আপাতত বাতিল হতে চলেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সূত্রে এমনটিই জানা যাচ্ছে। তাতে করে ১ এপ্রিল একমাত্র ওয়ানডে ও ৫ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্ট আপাতত পাকিস্তানে গিয়ে খেলবে না বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের প্রভাব একেবারে কমে গেলে তখন আবার পাকিস্তানের পরিস্থিতি বিবেচনায় সফর করতে পারে বাংলাদেশ। যদিও বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস এখনই বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেননি। তিনি বিভিন্ন বিষয় সামনে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, ‘আমরা এখনও কিছু বলিনাই (পাকিস্তানকে)। কারণ আমরা দেখছি পাকিস্তান কি করে। সব জায়গায় খেলা বন্ধ হয়ে গেছে। আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ) পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ইংল্যান্ড সিরিজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আসলে দেখছি।’ জালাল ইউনুস আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের করাচীতে খেলা। সেখানকার সব স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে দেখা যাক কি হয়। আমাদের এখনও কিছু বলে নাই (পাকিস্তান), তাই অপেক্ষা করছি। যেহেতু এখনও সময় আছে হাতে। তাছাড়া যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে সেই সময় (সফর হওয়া পর্যন্ত) পর্যন্ত অবস্থা ভাল হওয়ার কিছু দেখছিও তো না। এখন সতর্ক থাকার সময়। কম করেও আগামী এক মাস সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ জালাল ইউনুস খোলাসা করে কিছু না বললেও বিসিবির কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা ভালভাবেই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সফর আপাতত বাতিল করার সিদ্ধান্তই আসতে পারে। বিশ্বে এমন কঠিন মুহূর্তে কী আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটারদের পাকিস্তান সফরে যেতে দেবে? ক্রিকেটারদের অভিভাবক বিসিবি। এমন পরিস্থিতিতে দেশ থেকে ক্রিকেটারদের অন্য কোথাও বের হতে দেয়াই তো ঠিক নয়। পাকিস্তান সফরে গিয়ে যদি কোন ক্রিকেটার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যান এ দায় তো বিসিবির ওপরই পড়বে। আর তাই এক্ষেত্রে বিসিবি অনেক বেশি সতর্কভাবে পথ চলতে চায়। পাকিস্তান সফর আপাতত বাতিলের দিকেই যাচ্ছে। পাকিস্তানের করাচীতে হওয়ার কথা একমাত্র ওয়ানডে ও দ্বিতীয় টেস্ট। পাকিস্তানের মধ্যে করাচীতে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২১ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে করাচী শহরেই ১৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাস আতঙ্কে পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিদেশী ক্রিকেটাররা। পিএসএল ছেড়ে নিজেদের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পেশোয়ার জালমির টম ব্যান্টন, লিয়াম লিভিংস্টোন, লুইস গ্রেগরি এবং কার্লোস ব্রেথওয়েট, মুলতান সুলতানের জেমস ভিন্স এবং করাচী কিংসের এ্যালেক্স হেলস। মঈন আলী, জেসন রয়, জেমস ভিন্স, ক্রিস জর্ডানরাও পিএসএল ছেড়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একে একে সব বিদেশী ক্রিকেটার পাকিস্তান ছাড়বেন বলেই মনে করা হচ্ছে। পিএসএলের করাচীর ম্যাচগুলো আবার দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েও কাজ হচ্ছে না। খেলোয়াড়দের হাত মেলানো থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাও এরই মধ্যে পাকিস্তান সফর বাতিল করেছে। যদিও করোনাভাইরাসের প্রভাবের জন্য নয়। ক্লান্তিকর সূচীর কারণে বাতিল করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে সিন্ধু প্রদেশের সব বিদ্যালয় ১৩ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এশিয়া ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে হতে যাওয়া দুটি টি২০ ম্যাচ অনির্ধারিত সময়ের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়, তখন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে আমরা বসব। ওটা নিয়ে আমরা আবার সিদ্ধান্ত নেব।’ তখনই বোঝা গিয়েছিল পাকিস্তান সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই করোনাভাইরাসের প্রভাব ভালভাবে পড়েছে। ‘কোভিড-১৯’-এর প্রভাবে বৈশ্বিক ইভেন্টের সূচী বদলে গেছে। স্থগিত হয়েছে খেলা। বাতিল হয়েছে অনেক ইভেন্ট। ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব দেখা দিয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটেও সেই প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এশিয়া একাদশ ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে দুই ম্যাচের টি২০ অনির্ধারিত সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ মাসের ২১ ও ২২ তারিখে হওয়ার কথা ছিল। তা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার শেষ হওয়া টি২০ সিরিজেও স্টেডিয়ামে দর্শক যেন কম আসেন সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। ভারতে আইপিএল শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৯ মার্চ। তা পিছিয়ে গেছে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পেছানো হয়েছে। রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল ম্যাচের পঞ্চমদিন খেলা হচ্ছে দর্শকশূন্য গ্যালারিতে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সিরিজও বাতিল হয়েছে। এছাড়া সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে শুরু হওয়া রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড টি২০ সিরিজটি স্থগিত করা হয়েছে অনির্ধারিত সময়ের জন্য। ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ এ সপ্তাহে, বৃহস্পতিবার শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রস্তুতি ম্যাচও খেলা হয়েছে। কিন্তু সিরিজটি বাতিল করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের কাউন্টির তিন দল সারে, উস্টারশায়ার এবং ল্যাঙ্কাশায়ার নিজেদের প্রাক মৌসুম প্রস্তুতির জন্য আরব আমিরাতকে বেছে নিয়েছিল। তা বাতিল করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষদিকে হতে যাওয়া আইসিসির বার্ষিক সভাও পিছিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আপাতত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে আলোচনায় চলবে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার টি২০ সিরিজও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করা হয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে যেখানে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে প্রভাব পড়েছে। সব ম্যাচ, ইভেন্ট বাতিল হচ্ছে। ক্রিকেটারদের নিরাপদ রাখতে সব বোর্ডই যেখানে সিরিজ বাতিল করছে সেখানে পাকিস্তান সফরে কী আর ক্রিকেটারদের এমন পরিস্থিতিতে পাঠাতে পারে বিসিবি? ঝুঁকি নিয়ে কী আর এই সফর করা যায়? আর তাই পাকিস্তান সফর আপাতত বাতিলের সিদ্ধান্তই নেয়া হতে পারে।
×