ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীন থেকে ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী আমদানি বন্ধ

করোনার প্রভাবে বেড়েছে ডিজিটাল ব্যানার ও সাইনবোর্ডের দাম

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৯ মার্চ ২০২০

  করোনার প্রভাবে বেড়েছে ডিজিটাল ব্যানার ও সাইনবোর্ডের দাম

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সম্প্রতি সময়ে চীনে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী উৎপাদন, ফ্যাক্টরি ও এলসি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চীন থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল মিডিয়াসামগ্রী আমদানি বন্ধ রয়েছে। একারণে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও ব্যানার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুন প্রিন্ট করার ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রীর দাম ব"দ্ধি পেয়েছে। সূত্রমতে, কাগজের পোস্টার ছাপা, কাপড় ও প্লেন শিট টিনের ওপর রঙের লেখা ব্যানার আর সাইনবোর্ডের জায়গা দখল করেছে ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিন্ট ব্যানার, সাইনবোর্ড ও ফেস্টুন। বরিশালে প্রায় এক যুগ আগে ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রতি বর্গফুট পিভিসির প্রিন্ট মূল্য ছিল ২০/২৫ টাকা দরে। মাঝখানে মিডিয়ার সরবরাহ বেশি থাকায় এর দাম কমে প্রতিবর্গফুট পিভিসি প্রিন্ট দেয়া হতো ১২/১৫ টাকায়। কিš' কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন কারণে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও ব"দ্ধি পেয়েছে ব্যানার-সাইনবোর্ড প্রিন্ট করার ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রীর দাম। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, একযুগ আগে বরিশাল তথা গোটা দণিাঞ্চলে দুই একটি ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিন ছিল। পরে দিনে দিনে মানুষ ডিজিটাল ব্যানার-সাইনবোর্ডের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে এসব প্রিন্টিং মেশিনের সংখ্যা। বরিশাল নগরীতে এখন প্রায় ১৩/১৪টি মেশিনে গড়ে প্রতিদিন চার/পাঁচ হাজার বর্গফুট পিভিসিতে ব্যানার-সাইনবোর্ড প্রিন্ট বের হ"েছ। এছাড়াও প্রিন্ট হ"েছ ভিনাইল, প্যানাপ্লেক্স, ফসটেড ও ইনজেক্ট মিডিয়ায়। শুধু বরিশাল শহরেই নয়; জেলার গৌরনদী উপজেলায়ও রয়েছে জাকির ডিজিটাল জোন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর জানুয়ারি মাসব্যাপী চীনে বার্ষিক ছুটি থাকায় সকল ধরনের উৎপাদন, ফ্যাক্টরি ও কল কারখানা বন্ধ থাকে। পরে ফেব্রুয়ারি মাসে পুনরায় এর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও চীনে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী উৎপাদন, ফ্যাক্টরি ও এলসি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চীন থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশে পূর্বের সীমিত মজুদ করা ডিজিটাল মিডিয়া সরবরাহ করে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে ডিজিটাল মিডিয়ার মৌসুম ও মুজিব শতবর্ষ উপলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যানার প্রিন্ট কাজে তারা প্রতিনিয়ত হিমশিম খা"েছন। বর্তমানে পিভিসির ১০ ফুটের প্রতি রোল আট থেকে নয় হাজার টাকার পরিবর্তে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। একইহারে দাম বেড়েছে প্রতি চার থেকে পাঁচ ফুটের ভিনাইল (স্টিকার) ছয় থেকে সাত হাজার টাকার রোল বর্তমানে বিক্রি হ"েছ নয় থেকে দশ হাজার টাকায়। ফলে পিভিসি প্রতিবর্গ ফুট ১৮ থেকে ২০ টাকায় প্রিন্ট দেয়া হচ্ছে। নগরীতে ব্যানার করতে আসা দানিসুর রহমান বলেন, যে পিভিসি ১৩ থেকে ১৪ টাকায় প্রিন্ট করত তা এখন ২০ টাকায় করা লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক কাস্টমার কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। জাকির ডিজিটাল জোন নামের প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসার শুরুতে ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিন্ট করে মোটামুটি ভাল ব্যবসা হতো কিš' এখন বিভিন্ন কারণে এসব সামগ্রীর দাম দিনে দিনে বেড়েই চলছে। সর্বশেষ দাম বেড়েছে চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশ থেকে চীনে সকল পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধের কারণে। দাম বাড়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে পুরোনো কাস্টমারের কাছে প্রতি বর্গফুটে ২/৩ টাকা লোকসান দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, লোকসান জেনেও ব্যবসার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমনটাই করা হচ্ছে। দ্রুত পিভিসি, ভিনাইল, প্যানাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম না কমলে কিংবা রফতানি শুরু না হলে মুজিববর্ষকে সামনে রেখে তাদের ব্যানার তৈরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ডিজিটাল মিডিয়ার একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবসাটি পুরোপুরি চায়না পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। সম্পতি চীনে চলমান নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব"দ্ধি পাওয়ায় চীন থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী আমদানি বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে পূর্বে ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী মজুদ করা ছিল তা দিয়েই এখন বেশি দামে প্রিন্ট চলছে। চীন থেকে দেশে ডিজিটাল মিডিয়া পণ্য আমদানি শুরু না হলে যেকোন সময় স্টক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই সুযোগে আমদানিকারক একটি সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছে মতো ডিজিটাল মিডিয়ার পণ্যসামগ্রী দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। যার প্রভাব পড়ছে বরিশালেও। শীঘ্রই এর সমাধান না হলে সামনে মুজিববর্ষে তাদের ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
×