ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমৃত্যু সাহিত্য নিয়ে থাকতে চান নওশাদ

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আমৃত্যু সাহিত্য নিয়ে থাকতে চান নওশাদ

কালি ও কলম ‘তরুণ কবি এবং লেখক’ পুরস্কারে পুরস্কৃত তরুণ প্রজন্মের মেধাবী কবি ও লেখক নওশাদ জামিল। কবিতার জন্য খ্যাতি ও পরিচতি পেলেও সাহিত্যর নানা শাখায় তিনি প্রায় দুই যুগ ধরে কাজ করছেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প, ভ্রমণ, প্রবন্ধ, সম্পাদনা, শিল্প-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা শাখায় কাজ করে ইতোমধ্যে পেয়েছেন দেশ-বিদেশ থেকে নানা সম্মাননা ও পুরস্কার। দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সাময়িকী, লিটল ম্যাগাজিন, জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তার বহুমাত্রিক লেখাপত্র। সাহিত্যচর্চার জন্য তিনি কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মাহমুদ, কবি শঙ্খ ঘোষ, নাট্যকার সেলিম আল দীন, কবি মোহাম্মদ রফিক, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনসহ দেশ-বিদেশের অনেক বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকের প্রশংসা ও সান্নিধ্য পান। সাহিত্যের জন্য পান অসংখ্য পাঠকের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। একজন সাহিত্যের প্রধান কাজ কী জানতে চাইলে প্রজন্মের সংবেদী ও গুরুত্বপূর্ণ কবি ও কথাসাহিত্যিক নওশাদ জামিল বলেন, ‘মানুষকে স্বপ্ন দেখানোই একজন প্রকৃত সাহিত্যিকের কাজ। সমাজে যখন হতাশা, অস্থিরতা, অন্যায়-অবিচার বিরাজ করে তখন শিল্প-সাহিত্য মানুষকে স্বপ্ন দেখায়। এ স্বপ্ন বেঁচে থাকার, লড়াইয়ের। এ স্বপ্ন সুন্দরের পক্ষে, অসুন্দরের বিপক্ষে।’ সাহিত্যজগতে কীভাবে এলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পাঠ্যবইয়ের বাইরে সাহিত্যের বই পছন্দ করতাম বেশি। ছোটবেলায় গোগ্রাসে পড়তাম তিন গোয়েন্দা, রহস্য উপন্যাস, ছড়া-কবিতা। সাহিত্যের বই পড়তে পড়তেই লেখালেখির ভাবনাটা প্রথম মাথায় ঢুকে। তারপর ধীরে ধীরে লেখালেখিকেই কবির জীবনের প্রধান অবলম্বন। বলতে পারেন মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি লেখার ভুবনে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে, কর্মক্ষেত্রে দাপাদাপি করে সার্থক ও কার্যকর উপলব্ধি হয়েছে যে, লেখালেখি ছাড়া অন্য কিছু আমার জন্য অস্বস্তিকর। এ জন্য ভাল থাকার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য আমৃত্যু সাহিত্য নিয়ে থাকতে চাই।’ নওশাদ জামিলের এ পর্যন্ত ৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে ৪টি। ভ্রমণগ্রন্থ ১টি। এ ছাড়াও সম্পাদিত বই রয়েছে ২টি। আলাপচারিতায় নওশাদ জামিল জানান, এবার ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতার বই ‘প্রার্থনার মতো একা।’ বইটির প্রকাশক অন্যপ্রকাশ। সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে নওশাদ বলেন, ‘আমার একটিমাত্র বই বের হয়েছে মেলায়। বইটি কবিতার। নাম ‘প্রার্থনার মতো একা।’ চার বছর পর প্রকাশিত হলো আমার বহুল প্রতীক্ষিত কবিতার বই। বইটিতে রয়েছে গত ৪ বছরের পরিশ্রম ও পছন্দের কবিতাগুলো। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রাজীব দত্ত। ২০১৬ সালের বইমেলায় অন্যপ্রকাশ বের করেছিল তৃতীয় কবিতার বই ‘ঢেউয়ের ভেতর দাবানল।’ বইটি তখন অর্জন করেছিল ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার।’ এবারও বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন অন্যপ্রকাশের অন্যতম প্রধান এবং পাক্ষিক অন্যদিন সম্পাদক ও লেখক মাজহারুল ইসলাম। বিশেষভাবে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এটি আমার চতুর্থ কবিতার বই।’ নওশাদ জামিলের জন্ম ময়মনসিংহের ভালুকায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা সেখানেই। তারপর চলে আসেন ঢাকায়, ভর্তি হন ঢাকা স্টেট কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। সেখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। সাহিত্য ধ্যানজ্ঞান হলেও নওশাদ জামিলের পেশা সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতার শুরুতে কাজ করেন দৈনিক প্রথম আলোয়। এরপর গত এক দশক ধরে কাজ করছেন দৈনিক কালের কণ্ঠের বার্তা বিভাগে, সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তীর্থতল’ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে অমর একুশের গ্রন্থমেলায়। বইটির প্রকাশক ঐতিহ্য। একই প্রকাশনী থেকে ২০১৪ সালে বের হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কফিনে কাঠগোলাপ।’ ২০১৬ সালের গ্রন্থমেলায় তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ঢেউয়ের ভেতর দাবানল’ প্রকাশ করে প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ। ২০১৭ সালের গ্রন্থমেলায় ভ্রমণগ্রন্থ ‘লঙ্কাপুরীর দিনরাত্রি’ প্রকাশ করে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। এ ছাড়াও সম্পাদনা করেছেন ‘কহন কথা : সেলিম আল দীনের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার’ (যৌথ) ও ‘রুদ্র তোমার দারুণ দীপ্তি’ (যৌথ) শিরোনামের দুটি বই ও পত্রিকা। বইমেলায় নিয়মিতই যান জানিয়ে নওশাদ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেমন একটা চাঞ্চল্যবোধ করি। ফাগুনের নব পত্রপল্লবের মতো নেচে ওঠে লেখকমন। কারণটা আর কিছু নয় বইমেলা। সৃজনশীল কবি ও লেখক হিসেবে বইমেলার সঙ্গে আমার ২০ বছরের নিবিড় সখ্য। কবি-লেখক হিসেবে, পাঠক-ক্রেতা হিসেবে বইমেলায় আগে যেতাম নিয়মিত, এবারও যাব। এখন পেশাগত কারণেই বইমেলায় যেতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। বইমেলাটা যখন ছিল একাডেমির চার দেয়ালের ভেতর, তখন যত মানুষ আসত মেলায় ঢুকতে না পেরে, ভিড়ের কারণে ফিরে যেত তার চেয়ে বেশি মানুষ। অতিরিক্ত ভিড়বাট্টার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে বই কিনতে পারতেন না প্রকৃত ক্রেতা-পাঠকরাও। তখন আমরা পত্রিকার পাতায় লিখতে শুরু করি জায়গা সঙ্কট দূর করতে বইমেলার সম্প্রসারণ জরুরী। আনন্দের বিষয় যে, কয়েক বছর ধরেই অমর একুশে গ্রন্থমেলার ঠিকানা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। তাতে আগের চেয়ে মেলার পরিসর বেড়েছে, বেড়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীও। স্টলগুলো আর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে নেই। প্রতিটি স্টলের সামনে থাকে ফাঁকা জায়গা। বইমেলার পরিসর বাড়ানোর ফলে ক্রেতা-পাঠকরা ঘুরতে পারছেন স্বাচ্ছন্দ্যে, বই দেখতে পারছেন আনন্দের সঙ্গে। বইমেলার জন্য এই পরিবেশ আনন্দদায়ক। ক্রেতা-পাঠকের বলব, চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রচারণা দেখে বই কিনবেন না। বইটি কেনার আগে অন্তত নেড়েচেড়ে দেখুন। খানিকটা চোখ বুলিয়ে তারপর বই কিনুন।’ নওশাদ জামিল কবিতার জন্য পেয়েছেন বিশাল বাংলা সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে পান আদম সম্মাননা পুরস্কার। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য পান ইউনেস্কো-বাংলাদেশ জার্নালিজম এ্যাওয়ার্ড, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার। ইন্টারনেট ও টেলিভিশনের যুগেও সাহিত্যের পাঠক দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে নওশাদ জামিল বলেন, পাঠক দুই ধরনের। এক ধরনের পাঠক শুধু একাডেমিক বইপুস্তক পড়েন, আরেক শ্রেণীর পাঠক একাডেমিক বইয়ের বাইরেও সৃজনশীল ও মননশীল বই পড়েন। সৃজনশীল ও মননশীল বই যারা পড়েন নিয়মিত, তেমন পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বইমেলায় প্রতিবছর বই বিক্রি বাড়ছে। প্রকাশনাও বাড়ছে। বইপড়া আন্দোলন যদি জোরদার হয়, দেশে যদি ১ কোটি পাঠক সৃষ্টি হয়, গোটা দেশ পাল্টে যাবে। কেননা, প্রকৃত পাঠকরাই অগ্রসর নাগরিক। তারাই দেশ ও জাতির অনন্য সম্পদ। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×