ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষা

নির্বাচনে প্রস্তুত যশোর চেম্বার

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

নির্বাচনে প্রস্তুত যশোর চেম্বার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মামলার রায় পক্ষে, নির্বাচনে কোন বাধা নেই। ভোটার তালিকা ও সদস্য হাল লাগাদ হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত যশোর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। অপেক্ষা শুধু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, নির্বাচনের পরিবেশ অনেকটাই অনুকূলে, তবে অনেক ব্যবসায়ীর দাবি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থামলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটবে না। ২০১৪ সালে একটি মামলার কারণে নির্বাচন থেমে যায়। সেই থেকে কমিটিহীনভাবে চলছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটি। দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর না করে একজন সরকারী কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মামলা জটিলতা কাটিয়ে বিগত বছরগুলোতে কয়েক দফা তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন হয়নি। তাই ব্যবসায়ী প্রতিনিধির হাতে যায়নি নেতৃত্ব। এজন্য তাদের ন্যয়সঙ্গত অনেক দাবিও উপেক্ষিত হয়েছে লম্বা সময় ধরে। ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনারও কেউ নেই। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দু’বছরের জন্য হাল ধরেন। এটাই ছিল সর্বশেষ নির্বাচন। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদের হস্তক্ষেপে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর ২০১২ সালের ৩ মার্চ তারা দায়িত্ব পান। নির্বাচিত কমিটি নতুন ভবনে তাদের কার্যক্রমও শুরু করে। দু’বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংগঠনের বিধি অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল। তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দিন ছিল ওই বছরের ১২ জুলাই। তফসিল ঘোষণার দিন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ওই কমিটির অধীনে নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এমনকি নোটিস বোর্ডে টাঙ্গানো তফসিল ছিঁড়ে নিয়ে যান কয়েক ব্যবসায়ী। ভেস্তে যায় নির্বাচন। এরপর সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি মেয়াদের শেষদিন ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর যশোর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রশাসনের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। সে সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন প্রশাসকের দায়িত্ব নেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় দু’দফা তফসিল ঘোষণা করলেও নির্বাচন হয়নি। ২০১৫ সালের ১৬ মে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আরিফকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া মা ফাতেমা ফিস হ্যাচারির স্বত্ব¡াধিকারী ফিরোজ আহমেদ মামলা ঠুকে দেন। এতে ভোটের আগেরদিন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যশোর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায় দেন, নির্বাচনে কোন বাধা নেই। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবারও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুবকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোট গ্রহণের দিন ছিল ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনও শেষ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীদের একটি অংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ভোট করা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসাদুল হক। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হুসাইন শওকত। সর্বশেষ প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রফিকুল হাসান। তিনি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছেন। বিভিন্ন মহলে ও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে চলেছেন। এ বিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। মূলত যশোরের ব্যবসায়ীদের প্রাণের সংগঠন, কথা বলার সংগঠন চেম্বার অব কমার্স। এখন নির্বাচনের ভাল পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সময় এসেছে। এ বিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সর্বশেষ নির্বাচিত সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানিয়েছেন, তার কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নতুন নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একটি অংশ মামলা করেন। যে কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবুও নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। নানা অজুহাত তুলে প্রশাসক কালক্ষেপণ করে চলেছেন। চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক হুমায়ুন কবীর কবু বলেছেন, নির্বাচিত কমিটি ছাড়া বছরের পর বছর চেম্বার অব কমার্স চলবে এটা হতে পারে না। প্রশাসক মুক্ত করতে হবে। মামলার জটিলতা কেটেছে। এখন যশোরের ব্যবসায়ীরা নির্বাচন চান। সংগঠনটির সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা মুরাদ আলী জানান, মোট বৈধ ভোটার ও সদস্য এখন এক হাজার ৪শ’ ৩৭ জন। নির্বাচন না হলেও অফিস চলছে ঠিকই। তবে এখানে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা নেই। প্রতিষ্ঠানের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন জরুরী। নেপথ্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া আর এখন কোন সমস্যা নেই। যিনি মামলা করেছিলেন তিনিও এখন ভোটার। মামলায় রায়ও পক্ষে। এবারের নির্বাচনে মোট ৩টি প্যানেল লড়াই নামতে পারেন এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
×