ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবল পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান কমিটি

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

ফুটবল পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান কমিটি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ম্যানেজমেন্ট স্কিল জিরো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। গতকাল পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনে (বিএসজেএ) এ কথা বলেন রুহুল আমিন। বিএসজেএসর আমন্ত্রণে সংগঠনটি পরিদর্শনে আসেন রুহুল আমিন। এ সময় বিএসজেএর সভাপতি মোতাহের হোসেন মাসুম, সাধারণ সম্পাদক রায়হান আল মুঘনী, সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেনÑ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোঃ আসলাম, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, কায়সার হামিদ প্রমুখ। ১২ বছর বাফুফের মসনদে কাজী সালাউদ্দিন। বাফুফে সভাপতি হিসেবে এতদিন ক্ষমতায় থেকেও ফুটবলে উন্নতি করতে পারেননি। ফুটবলের ১৪২-১৪৩ র‌্যাঙ্কিং থাকা অবস্থায় ক্ষমতায় বসেন সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি। সেই ফুটবল এই কমিটির ১২ বছরের দায়িত্বে শুধু নিচেই নামিয়েছেন। ২১১ দেশের মধ্যে বর্তমান র‌্যাঙ্কিং ১৮৭। সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই ফুটবল ঠিকঠাকভাবে এগোয়নি। ফুটবলে একটা শক্ত কাঠামো তৈরি হয়নি। ভিত মজবুত হয়নি বলেই এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা, মন্তব্য তফরদার রুহুল আমিনের। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ফুটবলের স্ট্রাকচার ঠিক করা হয়নি। বাফুফের ম্যানেজমেন্ট স্কিলটা ভাল না। স্ট্রাকচার ঠিক করতে হলে তৃণমূল থেকে ফুটবলার তৈরি করে আনতে হবে। তৃণমূল ফুটবল বলতে স্কুল লেভেল থেকে তা চালু করতে হবে। উপজেলা লেভেল পর্যন্ত যেতে হবে। ফুটবলার তৈরির পাইপলাইন সোহরাওয়ার্দী কাপ আবার চালু করতে হবে। প্রিমিয়ার লীগের দু’চার ক্লাব বাদে বেশির ভাগ দলের অবকাঠামো ঠিক নেই। মাদার অর্গানাইরেশন হিসেবে ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব ছিল একাডেমি তৈরি করা। যার মাধ্যমে ভালমানের প্লেয়ার তৈরির বিকল্প নেই। যারা বিভিন্ন ক্লাবে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় দলে জায়গা করে নেবে। আর তখনই একটি শক্তিশালী জাতীয় দল গঠন করা সম্ভব হবে। সেই উদ্যোগ বাফুফের বর্তমান কমিটির এখতিয়ারে নেই। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে তো সাফল্যই পাচ্ছে না আমাদের দল, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান লেভেলেও একটা জায়গা তৈরি করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘একটা জায়গায় ১২ বছর বসে থাকলে ফুটবল যেখানে যাওয়া উচিত ছিল, সেখানে পৌঁছায়নি। কেন আমরা সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে পারছি না? এশিয়ান লেভেলে কেন একটা জায়গা তৈরি করতে পারিনি? সাফের খবর নাই, এশিয়ার খবর নেই। সালাউদ্দিন স্বপ্ন দেখেন ২০২২ বিশ্বকাপ খেলার। এই ধরনের উদ্ভট চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে বাফুফেতে পরিবর্তন প্রয়োজন। সবাই আমরা এক সঙ্গে মাঠে নেমেছি। গেল ১২ বছরে প্রিমিয়ার লীগ মাঠে রেখেছে সালাউদ্দিন- এ কথা প্রায়শই গর্ব করে বলেন। কিন্তু লীগ নিয়ে প্রতিনিয়ত যে তামাশা তিনি করেন, তার কারণে ক্লাব ও জাতীয় দলের যে ক্ষতি হয় সেটা আড়ালেই থেকে যায়। লীগ নিয়ে কখনই কোন সঠিক পরিকল্পনা করতে পারেননি কাজী সালাউদ্দিন। কখনও শীতকালে, কখন গরমে, কখন বর্ষায় আয়োজন করেছেন। লীগের তারিখ একাধিক বার পিছিয়ে তো রীতিমতো রেকর্ডই গড়েছেন তিনি। আসন্ন ২০১৯-২০ লীগ নিয়েও আরেকবার তামাশা করলেন। ইতোমধ্যে তিন দফা তারিখ পিছিয়েছে। যেখানে বিদেশী খেলোয়াড় কমানোর দাবি তুলেছে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে, অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। উল্টো সেখানে এবার ৪ থেকে ৫ জনে বাড়িয়েছে বাফুফে। লীগে অংশ নেয়া ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ ফি ঠিক মতো পরিশোধ করা হয় না এ নিয়ে অনেকবার কথা উঠেছে। বারবার লীগ পেছানোর ব্যাপারে রুহুল আমিন বলেন, লীগ পেছালে যা হয় আমাদের চট্টগ্রাম আবাহনীসহ অন্য ক্লাব যারা বিদেশী খেলোয়াড় এনেছে তাদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হবে। এক মাস যদি লীগ পেছায় তাহলে ১ লাখ থেকে/ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। লীগ পেছানোর কারণে ক্লাবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লাব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে ফুটবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা উচিত ছিল। টোটালি বাফুফের ম্যানেজমেন্ট স্কিল জিরো। এ কারণে আমরা পদে পদে বিপদে পড়ছি। যে কোন ক্লাব যে কোন সময় বেঁকে বসতে পারে টাকার অভাবে। গতবার ২০ লাখ টাকা করে প্রত্যেক ক্লাবকে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৫০ ভাগ পরিশোধ করা হয়েছে ক্লাবের। ফুটবল মাঠে রাখতে হবে এটা সবার কথা। লীগ হতে হবে দেরিতে হলেও। বল মাঠে রাখতেই মাঠে হবে। ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থেই আমরা খেলা চালিয়ে যাচ্ছি প্রতিকূল পরিবেশে। রুহুল আমিন যোগ করেন, ২০১৭ সালে আমরা যখন লীগের স্পন্সর ছিলাম তখন প্রথমবারের মতো দেশের সাতটি ভেন্যুতে খেলা হয়েছিল। সাইফ পাওয়ারটেক থেকে সেটা করেছিলাম। জাঁকজমকভাবে আমরা সেটা আয়োজন করেছি। অনেকে আমাকে ফোন করে বলেছে আমাদের তো পাওনা টাকা দিচ্ছে না বাফুফে। টাকা না দিলে লীগে কিভাবে খেলব। আমি বলেছি আপনারা লীগ কমিটিতে আলাপ আলোচনা করেন। আমরা যখন লীগের স্পন্সর ছিলাম তখন ক্লাবগুলোকে ৪০ লাখ টাকা করে দিয়েছিলাম।
×