ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চুক্তিবদ্ধের তালিকায় বন্ধ চালকল

রাজশাহীতে ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

রাজশাহীতে ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে সরকারীভাবে ধান-চাল সংগ্রহে কৃষক এবং চালকলের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় এখন খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ করছেন ব্যবসায়ীরা। চালের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বন্ধ চালকলও রয়েছে চুক্তিবদ্ধের তালিকায়। ধানের মতো চালও সরবরাহ করছেন দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ফলে প্রকৃত চাষী এবং চালকল মালিকরা সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রির সুবিধা পাচ্ছেন না। পকেট ভরছে দলীয় নেতা আর ব্যবসায়ীদের। রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ২০ নবেম্বর থেকে জেলায় ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে। চালও সংগ্রহ করা হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রাজশাহী জেলা ও মহানগরের আট হাজার ১৫০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। আর চাল সংগ্রহ করা হবে চার হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন। ধান কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে। আর চালের দাম প্রতি কেজি ৩৬ টাকা। এবার রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা থেকে তিন টন ধান কেনা হবে। এছাড়াও জেলার পবা উপজেলা থেকে ৯৮৯ টন, দুর্গাপুরে ৫৬৮, বাঘায় ১৪০, চারঘাটে ৪৫৩, মোহনপুরে ২৮৮, বাগমারায় ৮৩, তানোরে দুই হাজার ৪০০, গোদাগাড়ীতে দুই হাজার ৫৯৮ এবং পুঠিয়ায় ৬২৮ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। নগরীর বোয়ালিয়ায় চাল কেনা হবে ৩০৯ মেট্রিক টন। এছাড়া পবায় ৮২২, গোদাগাড়ীতে এক হাজার ৭২০, তানোরে ৫৭০, মোহনপুরে ১১৯, বাগমারায় ১৭৩, দুর্গাপুরে ১৫৯, পুঠিয়ায় ২৬৭, বাঘায় ৪৬ এবং চারঘাটে ৯১ মেট্রিক টন চাল কেনা হবে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা পর্যায়ে ধান সরবরাহকারী কৃষকের তালিকা তৈরিতে যে লটারি করা হয়েছে- তা স্রেফ লোক দেখানো। প্রকৃতপক্ষে ধান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং তাদের অনুসারীরা। কৃষকের নাম ব্যবহার করে তারাই ধান সরবরাহ করছেন। কোথাও কোথাও রাতের অন্ধকারে ধান ঢোকানো হচ্ছে খাদ্যগুদামে। অভিযোগ রয়েছে, বন্ধ চালকলের সঙ্গেও চুক্তি করা হয়েছে। এদের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করছেন খাদ্য বিভাগের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানেও তার কার্যালয়ে অনিয়ম পাওয়া গেছে। সরেজমিনে রাজশাহীর এক চালকলে গিয়ে দেখা যায়, মিলের সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা, টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মিলের ভেতরে গজিয়েছে ঘাস। কিছু লোক মিলের ভেতরের ঘাস পরিষ্কার করছেন। আর দেখানোর জন্য মিলে এনে রাখা হয়েছে কিছু ধান। ওই মিলেন মালিক গণি মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তার নামে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খাদ্য কর্মকর্তাকে মিল থেকে চাল উৎপাদন দেখাতে হবে। এ কারণে পরিষ্কার করা হচ্ছে। কিছু ধানও এনে রাখা হয়েছে। শুধু গণি মিয়ার চালকল নয়। গোটা জেলায় এভাবেই অনেক বন্ধ চালকল চুক্তিবদ্ধ চালকলের তালিকায়। ধান সংগ্রহে অনিয়মের ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল ভুঁইয়া বলেন, কৃষকের তালিকা তো আমরা করি না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটি লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে। তারা যে তালিকা দেন, সেই তালিকা অনুযায়ীই ধান সংগ্রহ করা হয়। আর চালকলের অনিয়মের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তিনি বলেন, বিষয়টা নিয়ে দুদক তদন্ত করছে। এ অবস্থায় কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
×