ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ হলো ‘কালবেলা’

প্রকাশিত: ১২:২১, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

শেষ হলো ‘কালবেলা’

এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেখান হয়েছে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের অদম্য চেতনা। বিশেষ করে, নারীদের হার না মানা জীবন সংগ্রম। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের সংগ্রাম বা যুদ্ধ ছিল একেবারেই অন্যরকম, তাদের লাঞ্ছিত হওয়া, নিপীড়ত হওয়া, এরমধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া যা ছিল সত্যিই কল্পনাতীত। ‘কালবেলা’ এমনি হৃদয় হীম করা গল্পে নির্মিত চলচ্চিত্র মুক্তিযুদ্ধের গল্পে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কালবেলা।’ প্রায়ত গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের অসমাপ্ত চলচ্চিত্র। ২০১৮ সালে যখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে এই সিনেমার দৃশ্য ধারণের কাজ করছিলেন তখন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে না ফেরার দেশে পারি জমান এই গুণী। শেষে অসমাপ্ত থেকে যায় তার স্বপ্নের ‘কালবেলা।’ এই চলচ্চিত্র নিয়ে যতবার তার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রতিবারই তিনি একটি কথা পরিষ্কার জানিয়েছেন, ‘চলচ্চিত্র কালবেলা তার একটি লালিত আবেগের নাম।’ সরকারী অনুদান এবং নিজের প্রযোজন সংস্থা ‘আকার’ থেকে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা। চলচ্চিত্রের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিন অথৈ ও শিশির আহমেদ। তারা বিভিন্ন সময় এই চলচ্চিত্র এবং সাইদুল আনান টুটুল প্রসঙ্গে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এবং ভবিষ্যতে টুটুল স্যারের সঙ্গে আরও কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন। এতসব স্বপ্নের মধ্যে হঠাৎই তার চলে যাওয়া সত্যিই ভীষণ শূন্যতা সৃষ্টি করে, একই সঙ্গে গন্তব্যহীন হয়ে পরে ‘কালবেলা।’ কিন্তু তার স্ত্রী অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম এটি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে নিজে চলচ্চিত্রের মানুষ না হয়েও ‘কালবেলা’র অসম্পূর্ণ কাজে হাত দেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে শেষ করেন চলচ্চিত্রের বাকি কাজ। গত ১৮ ডিসেম্বর ছিল সাইদুল আনাম টুটুলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এর আগেই তিনি সম্পূর্ণ করেন ‘কালবেলা।’ চলচ্চিত্রের অসম্পূর্ণ কাজ এবং এর মুক্তির পরিকল্পনা নিয়ে আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে কথা হয় এই অধ্যাপকের। শুরুতেই বলেন, সাইদুল আনাম টুটুল প্রসঙ্গে, কাজের প্রতি খুবই ‘নিষ্ঠাবান’ একজন মানুষ ছিলেন তিনি। চিত্র ধারণের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলে ছিলেন। তিনি আরও জানান আমরা কিছু দিন হয় চলচ্চিত্রের বাকি কাজ সম্পূর্ণ করেছি। সিনেমা হলে মুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা এ বছরই কালবেলা মুক্তি দেব। ব্যক্তিগত কাজে দুই-তিন দিনের মধ্যে আমি দেশের বাইরে যাচ্ছি, ফিরে এসে প্রদর্শনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। ‘কালবেলা’র বাকি কাজ শেষ করতে গিয়ে এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? প্রথমত, এটি একটি মুক্তিযুদ্ধের আবহের গল্পে নির্মিত চলচ্চিত্র। দ্বিতীয়ত, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেখান হয়েছে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের অদম্য চেতনা। বিশেষ করে, নারীদের হার না মানা জীবন সংগ্রম। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের সংগ্রাম বা যুদ্ধ ছিল একেবারেই অন্যরকম, তাদের লাঞ্ছিত হওয়া, নিপীড়ত হওয়া, এরমধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া যা ছিল সত্যিই কল্পনাতীত। ‘কালবেলা’ এমনি হৃদয় হীম করা গল্পে নির্মিত চলচ্চিত্র। সম্প্রতি সরকারী অনুদানের চলচ্চিত্র বা মুক্তিযুদ্ধের গল্প নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণের পর ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে প্রদর্শিত হওয়ার ক্ষেত্রে বা অধিক সংখ্যক সিনেমা হল পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। যেমনটা, সদ্যবিদায়ী বছরের শেষ চলচ্চিত্র ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’ এর ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি- এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনি কতটা অবগত? দেখেন প্রথমত এটি একটি সরকারী অনুদানের চলচ্চিত্র যেখানে আমরা সব ধরনে নিয়ম-কানুন মেনে ভালবাসার সঙ্গে চলচ্চিত্রটি সম্পন্ন করেছি। তাই আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে জোর অনুরোধে জানাতে চাই আমরা যখন এই সিনেমা প্রদর্শিত করব কিংবা দর্শকদের দেখাতে চাইব তখন যেন তারা আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমরা জানি হল পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। এছাড়া চলতি বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, সামনের বছর স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর সুতরাং সরকার চাইলে এই বিশাল উৎসবের সঙ্গে আমাদের এই চলচ্চিত্রটি যোগ করতে পারেন রবং সেটা হবে এই চলচ্চিত্রের স্বার্থকতা, শেষ পর্যন্ত এমনটা হলে আমরা কৃতার্থ হব। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নাম। ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ ‘ঘুড্ডি’ ‘দহন’ ‘দীপু নাম্বার টু’ ‘দুখাই’ এবং ‘আধিয়ার‘ এর মতো নন্দিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে এই মানুষটির সৃজনশীল চিন্তা জড়িয়ে রয়েছে। ‘কালবেলা’ ছিল তার স্বপ্নের চলচ্চিত্র। যে কারণে খুবই সিরিয়াস ছিলেন এই চলচ্চিত্রের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে। কিন্তু নির্দয় নিয়তি তাকে তার স্বপ্নের কাছাকাছি যেতে দেয়নি। কিন্তু স্বপ্ন সে যে শাশ্বত, তার ক্ষয় নেই আর সেটাই প্রমাণ করেলেন তার স্ত্রী অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম। আনন্দকণ্ঠ প্রতিবেদক
×